ত্রিশালে দোকান সহ বসতঘর গুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ আকিজের বিরুদ্ধে

বিশেষ প্রতিনিধিঃ জমি বিক্রি না করায় আদালতের আদেশ না মেনে  তান্ডব চালিয়ে  দোকান সহ বসতঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মোক্ষপুরে আকিজ সিরামিক্স কোম্পানীর বিরুদ্ধে।

এলাকাবাসিরা জানায়, ত্রিশালের  মোক্ষপুর ইউনিয়নে  আকিজ সিরামিক্সের বিপরিতে আবুল কালাম তার পৈতৃক সম্পত্তিতে দীর্ঘদিন যাবত  বসবাস করে আসছিলেন।  সেখানে গৃহ নির্মাণ করে নিজে থাকেন এবং  কিছু রুম আকিজসহ অন্যান্য ফ্যাক্টরিতে কর্মরত শ্রমিকদের ভাড়া দেন। বাড়ির সামনের দিকে রাস্তার পাশে ফার্মেসীসহ ০৪ টি দোকানে ক্ষুদ্র ব্যবসাও করছিলেন।  আকিজ গ্রুপ আবুল কালামের বসতবাড়ির পিছনে জমি ক্রয় করে স্থাপনা নির্মাণ করে অবকাঠামো সম্প্রসারিত করার ফলে মাঝখানে পড়ে যায় আবুল কালামের ভিটামাটি। আর আবুল কালামের ওই জমি নিজেদের দখলে নিতে আকিজের স্থানীয় দালালরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলো এমনটাই অভিযোগ। জমির বৈধতার কোন কাগজপত্র ছাড়াই গত ০৩মাস আগে ওই জায়গা ছাড়ার জন্য আবুল কালামকে নোটিশ প্রদান করে আকিজ গ্রুপ। আবুল কালাম ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদালতের শরাপন্ন হয়ে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে আদালত কোন প্রকার হয়রানি না করার নির্দেশ দেন।

 শনিবার সকাল ১১টার দিকে আদালতের নিষেধ থাকার পরেও আকিজ কোম্পানীর সঙ্গে জড়িত স্থানীয় মধ্যস্থতাকারী প্রভাবশালীর  সহযোগিতায় তিনটি বোল্ডডোজার নিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয় কালামের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট । পরে আবুল কালামের ছেলে মাহবুব ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলে ঘটনাস্থলে যান ত্রিশাল থানা পুলিশ তখন থামে তান্ডব। ঘটনাস্থল থেকে একে একে  সরে যায় হামলাকারীরা। ভাংচুরের সময় লুট হয় বসতঘর ও চারটি দোকানের মালামাল। ফ্রিজ, টিভি ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ ভাংচুর ও লুটে কোটি টাকার ক্ষতির সম্মূখীন হন সেখানে বসবাসকারীরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবুল কালামদের বসতবাড়ির দু’পাশে আকিজ গ্রুপের বিভিন্ন স্থাপনা। কে বা কারা দোকানপাটসহ বসতবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। ফ্রিজ টিভিসহ আসবাবপত্র গুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে। বলা নেই, কওয়া নেই, আচমকা প্রায় শতাধিক লোকের বাহিনী এসে দোকান ভাড়াটিয়াদের অস্ত্রের মুখে দাঁড় করিয়ে মালামালসহ দোকানপাট ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।

ভাড়াটিয়ারা জানান, সকালে অফিসে চলে গেলে হঠাৎ করে বোল্ডডোজার দিয়ে বসতঘরের সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। ভাংচুরকারীরা যদি জমির প্রকৃত মালিকও হয়, তবে নোটিস না দিলেও মালামাল সরানোর সময়টুকু তো দিতে পারতেন।

জমির মালিক আবুল কালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় আমার জমি দখলের চেষ্টা করছিলো আকিজ কোম্পানী। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে হুমকিও দিয়ে আসছিল। আদালতের সহায়তাও চেয়েছি। আদালত হয়রানি বন্ধের নির্দেশও দিয়েছে। তবু  ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও  স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাহায্যে ভাড়াটিয়া গুন্ডাপান্ডা নিয়ে বোল্ডডোজার দিয়ে বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। পরে ৯৯৯ ফোন দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।

এ ব্যাপারে আকিজ সিরামিক্সের কর্মকর্তা মামুনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে জানতে শিল্প পুলিশের এসপি মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার আকিজ সিরামিক্স আইনশৃংখলা বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনার কথা বলে সহযোগিতা চাওয়ায় আমরা টিম পাঠিয়েছি। পুলিশ যদি নিরীহ মানুষের ঘর ভাঙচুরে সহযোগিতা করে থাকে তাহলে তদন্তে করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ত্রিশাল থানা ওসি (তদন্ত) সুমন চন্দ্র রায় বলেন, আমি ৯৯৯ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাংচুর দেখতে পেয়েছি। তবে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।