ময়মনসিংহের ১১আসনে বাদ পড়া হেভিওয়েটরা আসছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে

 ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট: ময়মনসিংহ :ময়মনসিংহের ১১টি আসন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়ন পেতে ফরম নিয়েছিলেন  ৮৭জন। নিয়ম অনুযায়ী দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন ১১আসনে এগারো জন। এর মধ্যে ছয় আসনে বর্তমান সংসদ সদস্যরাই ফের মনোনয়ন পেয়েছেন। নতুন মুখ এসেছেন পাঁচ আসনে। অর্থাৎ ১১ জনের মধ্যে বাদ পড়েছেন পাঁচ সংসদ সদস্যসহ ৮১ জন। মনোনয়নবঞ্চিতদের মধ্যে ‘হেভিওয়েট’ অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রত্যয় নিয়ে জানিয়েছেন, নৌকার প্রার্থীকে ভোটের মাঠে হারিয়েই জয় ছিনিয়ে আনবেন তারা।

ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রমোদ মানকিন এর সুযোগ্য সন্তান বর্তমান এমপি জুয়েল আরেং।  এই আসনে পিতা-পুত্রের কারণে উপজেলার অন্য কেউ মনোনয়নের সুযোগ পায় না, তবে এবার এই আসনে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হলেও স্বতন্ত্র  প্রার্থী হতে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন হালুয়াঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক সায়েম।

 মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে তিনি হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগ সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। পদত্যাগ দেওয়ার পর তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক একটি পোস্ট তিনি উপজেলাবাসীর দোয়া ও সহযোগীতা কামনা করে লিখেছেন”প্রিয় হালুয়াঘাট বাসী আজ আমার উপজেলা পরিষদের শেষ কর্মদিবস। আপনাাদের সেবায় নিয়জিত ছিলাম দীর্ঘ সাড়ে চার বছর। চেষ্টা করে গেছি আমার সাধ্য মতন। প্রায় ২৬ কোটি টাকার কাজ সম্পন করেছি এই সময়ে। আপনাদের ভালবাসাও পেয়েছি দুহাত ভরে। ভুল থাকলে ক্ষমা করবেন। আপনাদের দোয়া প্রার্থনা করি। এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে তার প্রার্থীতায় আসন এলাকার জনতার মাঝে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার দেখা দিয়েছে। হেভিওয়েট প্রার্থী হিসাবে তিনি বেশ আলোচনায় রয়েছেন।

ময়মনসিংহ -৩ গৌরীপুর আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক বিশেষ সহকারী প্রয়াত মাহবুবুল হক শাকিলের স্ত্রী নিলুফার আঞ্জুম।  তবে মনোনয়নবঞ্চিতরা তাকে ছাড় দিতে নারাজ। এই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মোটরযান মালিক সমিতির নেতা  সোমনাথ শাহা, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরীফ হাসান অনু। তবে শরীফ হাসান অনু বিগত দিনের রাজনীতি ও দলের দুঃসময়ে দলের জন্য অনেক শ্রম ও ত্যাগ রয়েছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মতে যেহেতো গৌরীপুরে মনোনয়ন পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে সেক্ষেত্রে শরীফ হাসান অনুকে এবারের মনোনয়ন দেওয়া হলে ত্যাগী নেতার মুল্যায়ন হতো।

এ ছাড়াও এই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন বর্তমান সাংসদ নাজিমুদ্দিন, নারী নেত্রী নাজনীন আলম সহ আরো একাধিক মনোনয়ন বঞ্চিতরা। তবে  বিগত তিনবার নাজনীন আলম সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে শরীফ হাসান অনু  বলেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ আছে বলে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চাই। আমাদের দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শে এই আসন উপহার দেবো। আমি দীর্ঘদিন থেকে গৌরীপুরের মানুষের পাশে আছি। সংসদ সদস্য না হয়েও এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছি। সংসদ সদস্য হলে আরও ভূমিকা রাখতে পারব। এখানকার পিছিয়ে পড়া উপজেলাবাসীদের এগিয়ে নেব। হাসপাতালসহ স্কুল নির্মাণ করে দেবো। কেউ যেন পিছিয়ে না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখবো।

ময়মনসিংহ-৪ (সদর) আসনটি মহাজোটের আসন। এই আসনে বিগত ২বার মহাজোট এর শরীক দল জাতীয় পার্টির বেগম রওশন এরশাদ কে ছেড়ে দেওয়া হয়। এবার আসটিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী প্রয়াত অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এর সুযোগ্য সন্তান মোহিত উর রহমান শান্তকে। দীর্ঘদিন পর নৌকা পেয়ে আসন এলাকার নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হলেও দুশ্চিন্তায় আছেন জোট নিয়ে। অনেকেই মনে করছেন যদিও মোহিত উর রহমান শান্তকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তবে জোট চুড়ান্ত হলে আসনটি শরীকদের ছাড় দিতে হবে। ফলে ময়মনসিংহের নৌকাপ্রেমী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা এবারো নৌকায় ভোট দিতে পারবে কিনা তা অনেকটাই অনিশ্চিত।

ময়মনসিংহ-৭ ত্রিশাল  আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সাংসদ আলহাজ্ব রুহুল আমিন মাদানী।  তবে এই আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ত্রিশাল উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি, তিনবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় পৌর মেয়র আলহাজ্ব এবিএম আনিসুজ্জামান আনিছ।  তিনি বলেন, জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে আমি এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। আমি সবসময়  ত্রিশালবাসীর পাশে থাকি, যেকারনে ত্রিশালের জনগণ আমাকে তিনবার মেয়র নির্বাচিত করেছে। পৌর মেয়র হিসাবে পৌর এলাকার যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছি তা সবাই জানে, পক্ষান্তরে বিগত দিনে ত্রিশালের ১২টি ইউনিয়নে কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি বিধায় বর্তমান সাংসদকে উপজেলার মানুষ মেনে নিতে পারছেনা,ফলে আসনটি আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হতে পারে। ত্রিশালের এই আসনটি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছি। জনগণ আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। আমি শতভাগ আশাবাদী, জনগণের ভোটে আমি জয়লাভ করব।

পৌর মেয়র আনিছ আরো বলেন, এর আগে দলীয় মনোনয়নে ১ বার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে দুইবার মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। ত্রিশাল উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি দীর্ঘদিন। এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে দল থেকে বাধা নেই। এ ছাড়া জনগণ চাইছে আমি যেন ভোটে আসি। রির্টানিং কর্মকর্তার কাছ থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি।

ময়মনসিংহ-৮ (ঈশ্বরগঞ্জ) এই আসনে আওয়ামীলীগ থেকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুস সাত্তারকে। আসনটি মহাজোটের। এই আসনে বিগত ২বার মহাজোট এর শরীক দল জাতীয় পার্টির ফখরুল ঈমাম কে ছেড়ে দেওয়া হয়। এবার আসটিতে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে  সাবেক এমপি আব্দুস ছাত্তারকে। দীর্ঘদিন পর নৌকা পেয়ে আসন এলাকার নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত হলেও দুশ্চিন্তায় আছেন জোট নিয়ে। তারপরও এআসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ছাড় দিতে নারাজ মনোনয়ন বঞ্চিতরা। এই আসনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রার্থীতা ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান সুমন ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বদরুল আলম প্রদীপ। তারা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে নেমেছেন বলে জানা গেছে।

ময়মনসিংহ-৯ (নান্দাইল) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল আবদুস সালাম।   তবে এই আসন ছাড়তে চান না বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। এর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে  তার বিরুদ্ধে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে না থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে ছিলেন। তবে এবার তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এনিয়ে এলাকায় চলছে সমালোচনা।

সোমবার (২৭ নভেম্বর) রাতে দলীয় নেতাকর্মীদের ডেকে মতবিনিময় করে  স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন তুহিন । কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রক্তাক্ত জনপ নান্দাইল কে বসবাসের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আমার ভুলত্রুটি ছিল। আমি একাধারে দলের মানুষ দলের সঙ্গে বা নির্দলীয় শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি। এই জনপদকে কেউ অশান্ত করবে, কোনোদিন করতে দেবো না। আমি আপনাদের সঙ্গে নিয়ে এই শান্তির জনপদের উন্নয়নকে অব্যাহত রাখব। আমি আপনাদের পাশে আছি। আপনারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে আমি নান্দাইল বাসীর পাশে থাকতে চাই। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু করে দেশ ও বিদেশের কাছে জননেত্রী শেখ হাসিনার এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে চাই।

ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা)আসন থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান  সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্যানিত সদস্য কাজিম উদ্দিন আহমেদ ধনু। তবে এই আসন থেকে নির্বাচন করতে চান সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি  আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব এম এ ওয়াহে।

আলহাজ্ব এম এ ওয়াহেদ বলেন, ময়মনসিংহ-১১ (ভালুকা) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য যা যা প্রক্রিয়া করার, দরকার সবই আমি করেছি। আর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই আমি নির্বাচন করতে প্রার্থী হয়েছি। কারণ ভোট হতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ও গ্রহণযোগ্য। প্রার্থী যত বেশি হবে, তত বেশি ভোটার ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে আগ্রহের সঙ্গে যাবে। তাই আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের  সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসরণ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করতেই প্রার্থিতা ঘোষণা করেছি। ভাুলকার জনগণ আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। আমি শতভাগ আশাবাদী, জনগণের ভোটে আমি জয়লাভ করব।

ময়মনসিংহ-৫ (মুক্তাগাছা) আসনটিতে বর্তমান সাংসদ ও সরকারের প্রভাবশালী প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদকে পিছনে  নৌকার মনোনয়ন ভাগিয়ে নিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আকন্দ। এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন মনোনয়ন বঞ্চিত কয়েকজন প্রার্থী। তবে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি কারা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকবেন।