সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে চান সভাপতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঘাটাইল উপজেলার সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে খোদ সভাপতি  তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। জানাগেছে, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব এস্কান্দার আলী তার ব্যাক্তিগত সহকারী মো: হাসানুর রহমান মাসুমকে বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিবেন বলে প্রস্তাব করলে, কমিটির অন্যান্য সদস্যগণ এর বিরোধিতা করেন।  এতে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সাথে সভাপতির বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। অপরদিকে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে পছন্দের আরেকজনকে নিয়োগ দিতে চাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তাদের পছন্দের দুই প্রার্থীদের নিয়োগ পক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন বলে জানান অভিভাবক সদস্যগণ।

 স্হানীয়রা জানান,  সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যোগসাজশ করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্নের অপচেষ্টা করছেন। এছাড়াও সভাপতি এস্কান্দর আলী ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহমত উল্লাহ যোগসাজশে শিক্ষাবোর্ডের কোন প্রকার নির্দেশনা ছাড়াই প্রথমে সহকারী শিক্ষক হাসিনা ও সুফিয়ার বেতন বন্ধ করে রেজুলেশন পাশ করেন। কারণ হাসিনা ও সুফিয়ার নিয়োগ পত্রে অফিসিয়ালি ত্রুটি ধরা পরায় তাদের বেতন ভাতা বন্ধ করেন বর্তমান সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এখন আবার ত্রুটি বিচ্যুতি যাই থাকুক মানবিক কারণে বেতন ভাতা ছাড় দেয়া দরকার। স্থানীয় মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়, হাসিনা ও সুফিয়া কে মুচলেকা এবং সাথে দশ লাখ টাকা দফারফা করে বেতন দিবেন মর্মে চায়ের দোকানে আলাপ চারিতায় মত্ত থাকেন আমজনতা।তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে তাদের বৈধতা দেওয়া এবং বেতন ছাড়তে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।বিষয়টি যেন এমন টাকা দিলে সব নিয়ম অনিয়ম আর অনিয়ম নিয়মে পনিণত করতে পারেন। এর মধ্যেই আবার নতুন করে অফিস সহায়ক ও কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এবং তাদের পছন্দের দুই প্রার্থীকে অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তাদের এহেন কর্মকান্ড চায়ের দোকানের আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমান নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ বানিজ্যের বিষয়টি এখন টক অব দ্যা সাগরদীঘিতে পরিণত হয়েছে। তবে বিদ্যালয় সভাপতি আ’লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকায় স্থানীয়ভাবে প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেও রাজনৈতিক ভাবে এবং প্রশাসন তার পক্ষে কাজ করায় অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।

এবিষয়ে অভিভাবক সদস্য ডাঃ মোঃ সেন্টু মিয়া বলেন, সভাপতি তার পছন্দের প্রার্থীকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিতে চান বলে আমাদের জানান। কিন্তু আমাদের কথা হলো কোন অনিয়ম নয়, যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং নিয়োগ বোর্ড গঠন করে স্বচ্ছতার মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ সাপেক্ষে বিজয়ী প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করতে হবে। নয়তো আমরা এই নিয়োগের পক্ষে নই।

অভিভাবক সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন,গত ২০ অক্টোবর মানব জমিন পত্রিকায় অফিস সহায়ক পদে ১ জন এবং কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে ১ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। এর প্রেক্ষিতে অফিস সহায়ক পদে আবেদন করেন ৩ জন। তবে সভাপতি তার পিএসকে নিয়োগ দিবেন বলে প্রস্তাব করেন। কিন্তু আমাদের কথা হলো স্বচ্ছ নিয়োগ পক্রিয়ার মাধ্যমে বিজয়ী প্রার্থীকেই নিয়োগ দিতে হবে। আবেদনকারীদের মধ্যে আমার ছেলেও রয়েছে। তাই এখানে   কর্মচারী নিয়োগে নিয়ম রক্ষার পরীক্ষা, প্রশ্নফাঁস করে বিজয়ী করার ঘটনা কাঙ্ক্ষিত নয়। অতীতে আরো ৪ পদে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে, যা নিয়ে আমরা কোন কথাও বলিনি। টাকা ছড়াছড়ির মত ঘটনাও প্রকাশ্যে এসেছে।কিন্তু সেগুলো প্রমানিত না হওয়ায় মূলত আমি বা আমরা চুপ ছিলাম। তবে অতীতের মত করে সাজানো গোছানো ভাবে নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক যাতে নাটক মঞ্চায়িত করতে  না পারে তাই তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ঘাটাইল, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, ঘাটাইলসহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

গভর্নিং বডির সদস্য শহিদুল ইসলাম  বলেন, সভাপতি তার পছন্দের একজনকে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ দিবেন বলে জানান, আমরা তাৎক্ষণিক এর প্রতিবাদ করি। স্বচ্ছ পক্রিয়ায় নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন না করলে এর সকল দায় সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে নিতে হবে।

এবিষয়ে সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহমত উল্লাহর ভাষ্য- তার পছন্দের কোন প্রার্থী নেই। এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমেই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চান। নিয়োগে অর্থ লেনদেন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কথা আমি যে শুনিনি তা নয়। তবে এগুলোর সব কান কথা। প্রমান পাওয়া যায় না। এর আগেও এমন অভিযোগ উঠেছিল কিন্তু সেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কোনো অনিয়মের সঙ্গে তিনি জড়িত না বলেও জানান ।

এবিষয়ে সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আলহাজ্ব এস্কান্দার আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে ধান্ধা ফান্ধার কোন সুযোগ নেই। যারা নিয়োগ পরীক্ষায় কৃতকার্য হবে তাদেরকেই নিয়োগ দেওয়া হবে। সহকারী শিক্ষক হাসিনা আক্তার ও সুফিয়া বেগমের বেতন ছাড়ের বিষয়ে তিনি বোর্ড থেকে আমাদের ডেকেছিল সেটা আপনি প্রধান শিক্ষক রহমত উল্লাহর কাছেও জানতে পারেন। সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

এবিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগের নিয়োগের সময় এমন অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীই নিয়োগ পেয়েছে। অফিস সহায়ক পদেও পছন্দের প্রার্থী নয় বরং নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তারা নিয়োগ নিতে পারবে। স্বচ্ছতার সাথে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।