সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ে মামা ভাগিনা সিন্ডিকেট, বানিজ্য ৫০ লাখ: পর্ব -১

নিজস্ব সংবাদদাতা : ঘাটাইলের সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম ও নিয়োগে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তার অপকর্মের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি বলে দাবি স্থানীয়দের৷ স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে একের পর এক অপকর্ম করে পার পেয়ে যাচ্ছেন সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি এস্কান্দার হক।

জানাগেছে, ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী  অনুষ্ঠিতব্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সভাপতি এস্কান্দার হক। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে সভাপতি নির্বাচিত হতে মামা ভাগিনা প্রতারণা, ব্লাকমেইলিং ও মিথ্যা প্রতিশ্রুতির আশ্রয় নেন । মামা ( সভাপতি প্রার্থী এস্কান্দার হক) ভাগিনা( সদস্য পদে শামীম আল মামুন) বিজয়ী হন। মামা ভাগিনা বিজয়ী হওয়ার পর নির্বাচনী ইশতেহার বা প্রতিশ্রুতি বেমালুম ভুলে যান। পরবর্তীতে ৯ মার্চ ২০২৩ ইং তারিখে প্রতিশ্রুতি/ইশতেহার  বাস্তবায়ন বাস্তবায়ন করতে সাগরদিঘী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন  করেন ছাত্রছাত্রীরা। অভিযোগের ৯ মাস অতিবাহিত হলেও ইশতেহার / প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি সভাপতি এস্কান্দর হক ও তার ভাগিনা অভিভাবক সদস্য শামীম আল মামুন।

এছাড়াও এস্কান্দর হক ও শামীম আল মামুন বিজয় হওয়ার জন্য ভোটার তালিকা থেকে সহকারী শিক্ষক হাসিনা, সুফিয়া ও ওমর ফারুকের নাম বাদ দেন। পরবর্তীতে হাসিনা, সুফিয়া ও  ওমর ফারুক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা  অফিসার বরাবর ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ করার পর অভিভাবক সদস্য প্রার্থী শামীম আল মামুন উক্ত শিক্ষকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি এবং ব্লাকমেইলিং এর মাধ্যমে বাধ্য করেন অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে। এতে নির্বাচনে বিজয়ী হন মামা ভাগিনা। শুরু হয় মামা ভাগিনার অধ্যায়।

 তারা প্রথমে চতুর্থ শ্রেণীর চারজন কর্মচারীকে ৪০ লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়োগ দেন। এই নিয়োগ বাণিজ্য বন্দে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি অভিযোগ করেন সাইদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি। এ নিয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার সুবাদে এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতা পরিচয়ে একের পর এক অভিযোগ তদন্ত হলেও তা অদৃশ্য কারণে প্রমাণিত হয়নি।

সভাপতি পদে বিজয় হওয়ার পর এস্কান্দার হকের বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রি চারজন কর্মচারীর নিয়োগে ৪০ লক্ষ টাকা ঘুষ বাণিজ্য, অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া  শিক্ষক হাসিনা ও সুফিয়াকে বৈধ করতে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ গ্রহণ, সব শেষ অফিস সহায়ক ও কম্পিউটার অপারেটর পদে দুইজনকে নিজেদের পছন্দমত নিয়োগ দিতে তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান স্থানীয় সচেতন মহল।

 স্থানীয়রা বলছেন সাগরদিঘী উচ্চ বিদ্যালয় সভাপতি এস্কান্দর হক ও তার ভাগিনা শামীম আল মামুন সর্বশেষ নিয়োগ দুটি দিতে পারলেই তাদের কমিটিতে আসার ষোল কলা পূর্ণ হবে। তাতে করে তারা নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে ৮০ লক্ষ টাকা  হাতিয়ে নিতে পারবেন। তবে পূর্বের নিয়োগ গুলো নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও অভিভাবক সদস্যগণ অদৃশ্য কারণে চুপ ছিলেন কিন্তু সর্বশেষ নিয়োগে তারা প্রতিবাদ করেন এবং বিধি অনুযায়ী দুই পদে নিয়োগ দিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন। এ নিয়ে সভাপতি এস্কান্দার হোক ও তার ভাগিনা শামীম আল মামুন বেকায়দায় পড়ে যান। এতে সভাপতি এবং সদস্যদের মধ্যে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে আরো জানাযায় , সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হাসিনা, সুফিয়াসহ আরো ছয়টি পদে নিয়োগে বাণিজ্য করতেই বার বার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন এস্কান্দার হক । একের পর এক বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলেও কেবল মাত্র আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায়, অদৃশ্য কারণে কার্যত তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি প্রশাসন। এছাড়াও স্থানীয়ভাবে সরকারি দলের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পান না কেউ। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা জানান, এস্কান্দর হক ১৯৯৬ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ। তার বাবাও ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতি করতেন। মূলত বিএনপি পরিবার থেকে উঠে আসা এবং সক্রিয়ভাবে বিএনপির রাজনীতি করার কারণে লক্ষিন্দর ইউপি থেকে চেয়ারম্যান পদে একাধিকবার আ’লীগের মনোনয়ন চেয়েও পাননি। পরবর্তীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেন, এবং সাইদুর রহমানের কাছে পরাজিত হন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাবেক ও বর্তমান কমিটির সদস্য এবং একাধিক শিক্ষক জানান, সভাপতি  বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষকদের সাথে কোনো পরামর্শ বা সমন্বয় না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন এবং সে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে তার ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের কারনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত ও শিক্ষকদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এবিষয়ে লক্ষিন্দর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান জানান  জানান, সে ক্ষমতার দাপটে ওই বিদ্যালয়ে বার বার সভাপতি হয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য শুরু করে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করছেন। অযোগ্য ব্যাক্তিকে সভাপতি করার কারণে বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে অন্যদিকে তার এহেন কর্মকান্ডে প্রতিষ্ঠানটি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এস্কান্দার হককে বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানোর দাবীও জানান প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রতি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব এস্কান্দর হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে একটি বুট গঠন করা হয় সেখানে আলোচনা সাপেক্ষে হাসিনা সুফিয়ার বেতন ভাতাদি ছাড়ের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে ফোন দিন। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাচ্ছি না আমি।

বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহমত উল্লাহর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান ,  অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পর কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে হাসিনা খাতুন ও সুফিয়া খাতুনের বেতন স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ডিজি অফিসের মাধ্যমিক কর্মকর্তা প্রশাসন -২ মোঃ তরিকুল ইসলামের মৌখিক নির্দেশে পূণরায় ম্যানেজিং কমিটির সকল সদস্যদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তীতে কোন সমস্যা হলে উত্তোলনকৃত সরকারী অর্থ ফেরত দেওয়ার শর্তে মুচলেকা নিয়ে তাদের বেতন ছাড়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এবং তা রেজুলেশন করে রাখা হয়।

এবিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন,দুই শিক্ষকের তদন্তের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন ডিজি মহোদয়। এছাড়াও কেউ যদি সরকারি বিধির বাহিরে গিয়ে অনিয়ম করেন, তাহলে বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এবিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর সরকারী নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।