ময়মনসিংহে খাবার পানি সংকটে সিবিএমসি ,ভোগান্তিতে রোগীর স্বজনরা 

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ‘সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত  কয়কবার ৩লা থেকে নিচে নামছি, ওয়ার্ডে খাবার পানি নাই,বাইরের হোটেল অথবা হাসপাতালের পাশে থাকা একটি মার্কেট সংলগ্ন  টিউবওয়েল থেকে খাবার পানি আনতে, বার-বার উঠা নামা  যে কষ্ট তাতে  মন চায় পানি ছাড়াই থাহি।,গত তিনধরে ধরে রোগী আনছি সেই গফরগাঁও থেকে। আমরা গরিব মানুষ,শুনছি এই হাসপাতালে বালা চিকিৎসা হয়,তাই টেহারে টেহা না কইয়া এইহানে আইছি,আইয়া দেহি পানির অভাব, পানি কিনে খাওয়ার সাধ্য নাই। এত বড় হাসপাতাল, হাজার হাজার মানুষ, পানির ব্যবস্থা নাই -এটা কি হয়?’

ময়মনসিংহের উইনাড় পাড়ে অবস্থিত কমিউনিটি ফাউন্ডেশনের চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান কমিউনিটি বেজড্ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল গেইটে এমন করেই নিজের আক্ষেপের কথা জানান রোগীর এক অভিভাবক । হাসপাতালে অসুস্থ বাবাকে নিয়ে এসেছেন। সঙ্গে রয়েছে নিজের মা, শিশু সন্তান ও বোন। বাবাকে সেবা-যত্ন করতে তাকে হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে। বিপত্তিতে পড়েছেন খাবার পানি নিয়ে। হাসপাতালে খাবার পানির  কথা জানতে চাইলে পুরোনো রোগীরা তাকে গেইটের সামনে হোটেল এই  দেখিয়ে দেয়। এখন দেখেন হোটেলেও লম্বা লাইন।

নাছিমা খাতুন নিয়ে এসেছেন থালাবাসন একই হোটেলে। জামাই অসুস্থ। মেয়ে ও তার একটি বাচ্চা হাসপাতালে তিন দিন। কিন্তু পানির সমস্যা যায় না। হাসপাতালে কয়েকটি জায়গাতে ফিল্টার পানির ব্যবস্থা থাকলেও তা এত বড় হাসপাতালে এত মানুষের টয়লেট ও হাত মুখ ধোয়ার জোগান । আবার কেন কারণে রাতে পানির প্রয়োজন হলে ইচ্ছা থাকলেও বের হওয়া যায়না,বের হলে হোটেল বন্ধ থাকলে হাসপাতাল সংলগ্ন মার্কেট এর পিছনে একটা টিউবওয়েল আছে সেখানে গেলেও ছিনতাই বা নেশাখোরদের হাতে ধরা পড়ে সর্বস্ব হারাতে হয়।এসব বখাটেরা ইচ্ছে করে গাঁয়ের সাথে মিশেই অস্ত্রের মুখে সব নিয়ে যায় এমনও তথ্য জানা গেছে।

এ ধরনের ভোগান্তি প্রতিদিনের বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী। তারা এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘রোগীর চাপ এখন শীতের সময় বেশী, তবে যখন বেশি থাকে, তখন তাদের পানির সংকট থাকে।  হাসপাতালটি বেসরকারী হলেও চিকিৎসার মান ভাল শুনে গরিব আর ধনী সকল শ্রেণির  মানুষই বেশি আসেন। তাদের সবার পানি কিনে খাওয়ার অবস্থা থাকে না। এ ছাড়া অনেক রোগী আছেন, যারা অনেক দিন হাসপাতালে থাকেন। তাদের সঙ্গে স্বজনেরা থাকেন। কাপড় থেকে শুরু করে থালাবাসন ধোয়াটা খুব কঠিন। অনেকে ক্ষোভ দেখান, কিন্তু দেখা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।’

 হাসপাতালের নতুন ভবনের  টয়লেটের সাথে রয়েছে কয়েকটি পানির টেপ। সেখানে ৩-৪জনকে ময়লাযুক্ত থালাবাসন ধুইতে দেখা যায়। তারাও  রোগীর স্বজন।

তারা জানান, এর পানি খাওয়া যায় না। বিশ্রি গন্ধ আর আয়রনভরা। শুধু থালাবাসন ধুয়া যায়। খাওয়ার পানির ব্যবস্থা নাই,তাহলে আমরা যাবটা কোথায়, বলেন? চিকিৎসা নিতি এসে আমরা নিজেরাই পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।

একজন কর্মচারী  বলেন, হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ১৬ ওয়ার্ডে প্রায় ৬৫০ রোগী ভর্তি থাকে। টিউবওয়েল না থাকায়  হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীর স্বজনদের খাবার পানির সমস্যা পোহাতে হয়। । রোগী প্রচুর, তাই সব বিষয়ে আসলে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। টেপের পানির ব্যবস্থা আছে হাসপাতালের ভেতরে। তবে সেখানে ময়লা দুয়ার কারণে দুর্গন্ধ আর পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার কারণে রোগীরা সেটাও ব্যবহার করছেনা। তবে পানির জন্য কয়েকটা টিউবওয়েল  দরকার। সেটা আমরা দেখছি।’

হাসপাতালের ডেপুটি ডাইরেক্টর খাইরুল ইসলাম জানান-পানির সংকটের কিছু নেই, প্রতি ওয়ার্ডে টেপের পানি রয়েছে সেটা তারা খায়না,তবে আমরাও টেপের পানিই পান করি, তিনি বলেন-খুব দ্রুতই রোগী ও স্বজনদের জন্য খাবার পানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।