প্রচলিত আইন-কানুন দুর্নীতিকে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করে

মোঃ আসাদুল ইসলাম মিন্টু: দেশের প্রচলিত যে আইনগুলো আছে সেগুলো ব্যবসা বান্ধব নয়। ব্যবসায়ের স্বার্থে এদেশে কখনোই প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন বা সংশোধন করা হয়নি। সেই ব্রিটিশ আমল থেকে একই ঘরানার আইন এবং নিয়ম-নীতিতে দেশ চলছে।  এ কারণেই ক্ষুদ্র এবং মাঝারী সেক্টরের প্রতিটি পদে পদে দুর্নীতির সুযোগ বেশী। তবে এই ধরণের দুর্নীতি মোকাবেলায় সংগঠনের কোন বিকল্প নেই। বিশেষত, দুর্নীতি মোকাবেলায় সারাদেশে একটি সংঘ বদ্ধ প্ল্যাটফর্মের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। রোববার (০৪ সেপ্টেম্বর) সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আঞ্চলিক আলোচনা সভায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতির অভিজ্ঞতা এবং এই দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টার প্রাইজ (সিআইপিই)- এরসহায়তায় এই আলোচনা সভাটি ময়মনসিংহের আসপাডা ট্রেনিং একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা এতে অংশ গ্রহণ করেন।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন যে, চেম্বার এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছ থেকে সাধারণ উদ্দ্যোক্তারা প্রয়োজনীয় তথ্য কখনোইপায়না। চেম্বার শুধুতাদের প্রতিই সদয় যাদের সাথে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক আছে। নারী উদ্দ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশীহয়। তাদেরকে নানাভাবে নানারকম প্রতারণার স্বীকার হতে হয়। এমনকি কুরিয়ারের মাধ্যমে পণ্য এলাকায় নিয়ে আসতে হলেও অতিরিক্ত পরিমাণ টাকা দাবি করা হয়। বিমানবন্দরে পণ্য আমদানী-রপ্তানীর ক্ষেত্রে ইচ্ছে করে হয়রানি করা হয়, লাগেজ আর প্যাকেজিং উলটপালট করে দেয়া হয়।

ব্যবসায়ীরা বলেন, আগে মানুষ মিথ্যা বলতে ভয় পেতো পাপ হবে বলে, এখন মানুষ সত্যি বলতে ভয় পায় বিপদ হবেবলে। ওষুধ উৎপাদনে ৫ ধরণের লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। মোটা দাগের টাকা দিয়ে সেইলাইসেন্সগুলো আদায়করে নিতে হয়। রেষ্টুরেন্টের ব্যবসায় ১৩ টি লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়, সেখানেও প্রতি পদে পদে উৎকোচ দিতে হয়। এমনকি কোন সরকারি কর্মকর্তা নিজে সৎ হলেও যেহেতু উনার কর্মক্ষেত্র দুর্নীতিমুক্ত না, সেক্ষেত্রে তার ক্ষমতা অনেক সীমিত হয়ে যায়। উদ্দ্যোক্তাদের মতে, দুর্নীতি দুইবেলা আহারের মতো একটি স্বাভাবিক বিষয়েপরিণত হয়েছে। ব্যাংক লোনের ক্ষেত্রে পরিচিতি এবং স্বজনপ্রীতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা আবশ্যিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী যখন ব্যাংক লোন দিতে যান, তখন ব্যাংকের কর্মকর্তারাই নানাভাবে তাদেরকে সহায়তা করেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যাচাইও করে দেখেন না, সেই ব্যবসায়ীর লোনের প্রয়োজন আছে কি নেই। অন্যদিকে, সাধারণএবংনতুন উদ্দ্যোক্তাদের অনেকসময়ব্যাংক থেকে লোননিতেহলে তৃতীয়পক্ষের দ্বারস্থ হতেহয়। এমন কোন উদ্দ্যোক্তা নেই যারা তাদের স্টেইকহোল্ডারদের কাছেগিয়ে দুর্নীতির সম্মুখীন হয় না।

চাঁদাবাজিরপ্রভাব ক্ষুদ্র্র ব্যবসায়ীদের উপর সেরকমনাপড়লেও ক্ষেত্র বিশেষে অনেককেই সেটার ভোগান্তি পোহাতেহয়। তবেরাজনীতিরপ্রভাব মোটামুটি সব ব্যবসায়েরউপরেইপড়ে। উদ্দ্যোক্তারা মনেকরেন, ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে দুর্নীতি কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ছোটবেলা থেকেই নৈতিকতার শিক্ষা অনেক জরুরী একটি বিষয়। তাদের মতে,সংঘবদ্ধভাবে নিজেদের আওয়াজ না তুললে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা কখনোই সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, উক্ত আঞ্চলিকআলোচনাসভায়সিজিএসের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন সিজিএসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জিল্লুর রহমান, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর সুবির দাস এবং গবেষণা সহযোগী আব্দুল্লাহ আল জাফরী।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) বাংলাদেশ ভিত্তিক একটি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক যা সুশাসন, দুর্নীতি, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং উন্নয়নের বিষয়ে গবেষণা ও মিডিয়া স্টাডি পরিচালনা করে। দ্রæত পরিবর্তনশীল জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য হলো শিক্ষাগত সম্প্রদায়, সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ এবং উন্নয়ন অংশীদারদের মধ্যে শাসনের মান উন্নত করা, বাংলাদেশের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করা, দারিদ্র্য নিরসনেরজন্য উপলব্ধ সম্পদের দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যবহার করার শর্ত তৈরি করা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, এবং বর্ধিত গণতন্ত্রীকরণ, অংশগ্রহণএবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক শৃঙ্খলার স্থিতিশীলতা।