ত্রিশালের রায়ের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধাদের গণকবর

ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক:: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশালের হরিরামপুর ইউনিয়নের রায়েরগ্রামে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা। সেদিন ছিল ভাদ্র মাসের ২৩ তারিখ। ৩ দিনের অনাহারি ১৬ জন মুক্তিযোদ্ধা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চালসহ অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ করে রান্নার আয়োজন করেছিল। তাদের ভাগ্যে আর খাবার জুটল না। না খেয়ে ক্ষুধার্ত অবস্থায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলো ওরা ১১ জন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহের তিন উপজেলা ভালুকা, গফরগাঁও ও ত্রিশালের মুক্তিযোদ্ধাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ত্রিশাল উপজেলার রায়েরগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানকার লোকজন মুক্তিযোদ্ধাদের সব সময় খাবার ও থাকার জন্য সহযোগিতা করেছিল।

রায়েরগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ও তখনকার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ত্রিশাল প্রতিদিনকে জানান, এখানকার রায়েরগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১১০ জন মুক্তিযুদ্ধা বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ শেষে গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর গ্রামে অবস্থিত পাক হানদার বাহিনীর ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দিতে ১২ সেপ্টেম্বর ক্যাম্প স্থাপন করে। তিনদিনের ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধারা ১৩ সেপ্টেম্বর যখন খাবার রান্না করছিল সে সময় রসুলপুর গ্রামের কয়েকজন রাজাকার পাক হানাদার বাহিনীকে খবর দেয় মুক্তিযোদ্ধারা রায়েরগ্রামে ক্যাম্প করেছে। পাক বাহিনী এ সময় তিনদিক থেকে রায়ের গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্যাম্পটি ঘেরাও করে ব্রাশ ফায়ার করে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায়।

পাক বাহিনীর হামলায় আরো ৫৯ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণের জবাব দিতে না পেরে পালিয়ে যায়। রাত ১২টার পর স্থানীয় লোকজন লাশগুলো রায়েরগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে গণকবর দেয়। নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে একজন মাত্র স্থানীয় রায়েরগ্রাম এলাকার। তার নাম মোখলেছুর রহমান।

নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও পরিচয় না পাওয়া গেলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধারা নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় নিশ্চিত করেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের নামের কোনো তালিকা নেই, এলাকার লোকজন এ সব মুক্তিযোদ্ধাদের নাম বলতে পারেন না।