কেউ কথা রাখেনি, সবাই শুধু আশ্বাস দেয়

খায়রুল আলম রফিকঃঃ  জীবনটা এতো কষ্টের কেন? গবিরকে নিয়ে সবাই মজা করে! সবাই কয় তুমারে একটা ঘর দিমু, তুমার ঘরে সোলার লাইট লাগাইয়া দিমু, ঈদ আইতাছে দেখা কইরো নতুন কাপড় কিনে দিমুনে। কিন্তু কেউ কিচ্ছু দেয় না, খালি আমারে মিথ্যে আশা দিয়া রাখে।

জীবনের প্রথম সময়টা ভালো কাটলেও, শেষ সময় টায় যেন অন্ধকার নেমে এসেছে। নিজের একসময় জায়গাজমি ছিলো, অভাবে পরে এগুলাও বিক্রি করতে হলো। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের ছোট্ট একটি ঘরে জীবনযাপন করতেছি। তাও আবার ঘরে কোনো লাইট নাই। একদম অন্ধকার ঘরের মধ্যে রাত্রী কাটে। গ্রামের সবাই সন্ধ্যা হলে দেখি ঘরে লাইট জালায়, তারার ঘর গুলো কত পসর (উজ্জ্বল) হয়। আর আমার টাকা পয়সা না থাকায় ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ নাই, বিদ্যুৎ সংযোগ হইলেই বা মাসের মাস বিল দিবো কিভাবে? স্ত্রী-সন্তান কেউ নাই! আয় রোজগারও তো করতাম পারি না বৃদ্ধ বয়সে! মাইনষে (মানুষ) যা দেয় তাই খাইয়া কোনোরকম বাঁচি। যদি কেউ একটা দুই লাইটের সোলার (সৌর বিদ্যুৎ) দিতো, তাইলে আমিও সোলারের লাইট আমার ঘরে জালাইতে পারমু। সবার ঘর গুলো যখন পসর (উজ্জ্বল) অয় তখন আমার ঘরও পসর অইবো।

আর প্রতিমাসে বিল দেওয়ার ও কোনো চিন্তা নাই! কতো শান্তি অইবো, অন্ধকার দূর হইবো। সামনে ঈদ আইতাছে, সবাই নতুন কাপড় পরবো! আমার কোনো নতুন কাপড় নাই? ঈদের জামাতে জাইমু কি পইরা? গরিব বলে কী আমার কেনো মূল্যে নেই? আমি কি মানুষ না? এসব কথা গুলো এ প্রতিবেদক কে বলেছেন বৃদ্ধ আহাদ আলী (৭৯)। স্থানীয়দের সাথে কথা বললে জানা যায়, বৃদ্ধ আহাদ আলীর কোনো স্ত্রী-সন্তান নেই। বৃদ্ধ বয়সে একাই বসবাস করছেন আহাদ আলী। নিজের কোনো জায়গাজমি না থাকায় একই গ্রামের মতি মিয়ার ছোট্ট একটি ঘরেই আশ্রয় নেন তিনি। ঘরটি তুলনামূলক ভাবে খুবই ছোট্ট। বসবাসের একদম অনুপযোগী। তাও ঘরে কোনো প্রকার লাইট নাই, ফ্যান নাই , ভালো কোনো বিছানাও নাই। বসার মতো কোনো জায়গা নাই। সামর্থ্য না থাকায় প্রয়োজনীয় কোনো কিছুই ক্রয় করা সম্ভব হয় নি তার।

এখন উনার একমাত্র ভরসা দেশের বিত্তবান মানুষেরাই। দেশের এমপি- মন্ত্রী, নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সংগঠন যদি কিছুটাও সাহায্য করতো তাহলে তার জীবনে কিছুটা পরিবর্তন আসতো। “বৃদ্ধ আহাদ আলী (৭৯), তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর (দঃ) ইউপি’র সুলেমানপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা”। বৃদ্ধ আহাদ আলী বলেন, কি আর কইমু দুঃখের কথা! প্রথমেই তো কইলাম! আমারে সবাই খালি ধোঁকা দেয়। সবাই যে আশ্বাস গুলো এপর্যন্ত আমারে দিছে, তার সামান্য পরিমাণ যদি পাইতাম তাহলেও দুই মোটো ভাত শান্তি মতে খাইতা পারমু।

আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সহ সমস্ত মুসলমান ভাইদের সাহায্য কামনা করি। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রায়হান কবির জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো এই ব্যক্তিকে সাহায্য করার। উপজেলায় সোলার (সৌর বিদ্যুৎ) প্রজেক্ট আসলে আমরা একটি সোলার উনার ঘরে লাগনোর ব্যবস্থা করবো। উক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে সেই সাথে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কে বলে দিবো উনাকে সাহায্য করার জন্য।