আকবর হোসেন::বাংলাদেশে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতার জন্য ৩০৫৬ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন।
তবে এর আগে নির্বাচনে অংশ নিতে আরো হাজার-হাজার ব্যক্তি আগ্রহ প্রকাশ করে বিভিন্ন দলের মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছিলেন।
কিন্তু দলের সবুজ সংকেত না পাওয়ায় তারা নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি।
বাংলাদেশে একজন সংসদ সদস্য বেতন-ভাতাসহ নানা ধরণের সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন।
তাঁর হাতে থাকে নানা ধরণের ক্ষমতা। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য যেসব সুযোগ-সুবিধা পান সেগুলো হচ্ছে,
১. সংসদ সদস্যদের মাসিক বেতন ৫৫,০০০ টাকা
২. নির্বাচনী এলাকার ভাতা প্রতিমাসে ১২,৫০০ টাকা
৩. সম্মানী ভাতা প্রতিমাসে ৫,০০০ টাকা
৪. শুল্কমুক্তভাবে গাড়ি আমদানির সুবিধা
৫. মাসিক পরিবহন ভাতা ৭০,০০০ টাকা
৬. নির্বাচনী এলাকায় অফিস খরচের জন্য প্রতিমাসে ১৫,০০০ টাকা
৭. প্রতিমাসে লন্ড্রি ভাতা ১,৫০০ টাকা
৮. মাসিক ক্রোকারিজ, টয়লেট্রিজ কেনার জন্য ভাতা ৬,০০০ টাকা
৯. দেশের অভ্যন্তরে বার্ষিক ভ্রমণ খরচ ১২০,০০০ টাকা
১০. স্বেচ্ছাধীন তহবিল বার্ষিক পাঁচ লাখ টাকা
১১. বাসায় টেলিফোন ভাতা বাবদ প্রতিমাসে ৭,৮০০ টাকা
১২. সংসদ সদস্যদের জন্য সংসদ ভবন এলাকায় এমপি হোস্টেল আছে।
এছাড়া ২০১৫ -২০১৯ সাল পর্যন্ত একজন সংসদ সদস্য প্রতিবছর চার কোটি টাকা করে থোক বরাদ্দ পাবেন। এই থোক বরাদ্দের পরিমাণ আগে ছিল দুই কোটি টাকা।
বাংলাদেশে দুর্নীতি এবং সুশাসন নিয়ে গবেষণা করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, থোক বরাদ্দের টাকা একজন সংসদ সদস্য তাঁর নিজের পছন্দ মতো উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করতে পারেন।
তিনি কোন প্রকল্পে এ টাকা খরচ করবেন সেটি সম্পূর্ণ তাঁর এখতিয়ার।
দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় নানা প্রকল্পে প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যরা অগ্রাধিকার পেয়েছেন।
সংসদ সদস্যদের আরো নানাবিধ প্রভাব
আইন অনুযায়ী নির্ধারিত বেতন-ভাতা পাওয়ার পাশাপাশি একজন সংসদ সদস্য তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সবচেয়ে ক্ষমতাশালী হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের ক্ষমতা হচ্ছে আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখা।
কিন্তু এ ক্ষমতাটি ক্রমাগতভাবে প্রশাসনিক এবং নির্বাহী ক্ষমতায় রূপান্তরিত হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য, বয়স্ক ভাতা, নানা ধরণের সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনী সহ প্রায় ৪০ ধরণের প্রকল্প আছে।
এসব প্রকল্প থেকে কারা সুবিধা পাবেন সেটি স্থানীয় সংসদ সদস্যের সম্মতির ভিত্তিতে হয়ে থাকে বলে মনে করেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক।
এছাড়া এলাকার শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সহ নানা ধরণের প্রতিষ্ঠানে সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ততা থাকে।
স্থানীয় পর্যায়ে কোন চাকুরী প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক সংসদ সদস্যদের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকে বলে উল্লেখ করেন ড. ইফতেখারুজ্জামান।
অতীতে বিভিন্ন সময় অনেক সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের উপর সংসদ সদস্যদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ থাকে বলে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বিবিসি