শেরপুরে সাংবাদিক নির্যাতন ও লুটপাট, আড়াল করতে মামলা  

শেরপুর প্রতিনিধিঃ শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ে সাংবাদিক নির্যাতন ও লুটপাটের ঘটনা আড়াল করতে এবার ৪ সাংবাদিকের নামে চাঁদাবাজির মামলা  দিয়েছে  মকরুল বাহিনীর সদস্যরা। পাহাড়ে লুটপাটের রাজ্যত্ব টিকিয়ে রাখতে ও সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহের উদ্দেশ্যেই  মুলতো  এ মামলা  দেয়ার  অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, এ বাহিনীর প্রধান বন কর্মকর্তা মকরুল ইসলাম আকন্দ ২০১৯ সালে উপজেলার রাংটিয়া রেঞ্জের তাওয়াকোচা ফরেষ্ট বিট অফিসে বিট কর্মকর্তা হিসেব যোগদান করেন। এরই মধ্যে তিনি কখনো একবিট, কখনো দুই বিট, আবার কখনো রাংটিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তার দ্বায়িত পালন করে আসছেন।

অভিযোগ রয়েছে,  তিনি এখানে যোগদানের পরেই তার আত্মীয়-স্বজনসহ  সামাজিক বনের অংশিদার, কাঠ,বালু, পাথর চোর সিন্ডিকেটের সদস্যদের  নিয়ে গড়ে তুলেন একটি বিশাল বাহিনী।

এ বাহিনীতে রয়েছে ২জন ভাড়াটিয়া সাংবাদিক ও। অভিযোগ রয়েছে ওই দুই সাংবাদিক  ওই বাহিনীর উপদেষ্টা। তারা প্রতিনিয়ত ওই বাহিনীর গুন কীর্ত্তন  গেয়ে থাকেন।

জানা গেছে,  স্থানীয়ভাবে এ বাহিনীর নাম দেয়া হয়েছে মকরুল বাহিনী।  এ বাহিনীটি পরিচালনা করেন  মকরুল ইসলাম আকন্দের ভায়রা বাকাকুড়া গ্রামের মুসা সরদার।  তার নেতৃত্বে চলে গারো পাহাড়ে কাঠচুরি, পাথর বালু ও চোরাই কাঠবাহী গাড়ির রমরমা বানিজ্য।   গত চার বছর ধরে গারো পাহাড়ে এ বাহিনী লুটপাট চালিয়ে আসলেও মিথ্যা বন মামলার  ভয়ে কেউ প্রতিবাদ বা  মুখ পর্যন্ত  খুলতে সাহস পায় না।আবার কেউ মুখ খুললে তাদের নামে দেয়া হয়  মামলা।

জানা গেছে, সুফল বাগান সৃজনে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ এনে  এ বাহিনীর বিরুদ্ধে গত প্রায় দুই বছর পুর্বে  গান্দিগাঁও গ্রামের মাইন উদ্দিনসহ ১০/১৫ জন প্রতিবাদি যুবক দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ পত্র প্রেরন করেন। এ কারনে ওই প্রতিবাদিদের নামে দেয়া হয় একাধিক করে মিথ্যা বন মামলা।

জানা গেছে এ বাহিনী গড়ে উঠার  শুরু থেকেই  তারা   গারো পাহাড়ের শালগজারিসহ   সামাজিক বনের  বৃক্ষ নিধন, পাহাড় কেটে পাথর ও বালু লুটপাট ও বনের জমি দখল করে অবৈধভাবে বিক্রয়, চাষাবাদ  চালিয়ে আসছে।

স্থানীয়রা জানান এ বাহিনীর বৃক্ষ নিধন, পাহাড় কেটে পাথর ও বালু লুটপাটের কারনে গারো পাহাড় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে। সৌন্দর্য হারাতে বসেছে গারো পাহাড়। যে সৌন্দর্যকে ঘিরে  ১৯৯৩ সালে গারো পাহাড়ে গড়ে উঠেছে একটি পিকনিক স্পট। মৌজার নামানুসারে এর নাম রাখা হয় গজনী অবকাশ বিনোদন কেন্দ্র।  কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই সারা দেশ থেকে ভ্রমন পিপাসুদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে কেন্দ্রটি। এখান থেকে প্রতিবছর সরকারের ঘরে আসে বিপুল পরিমানের রাজস্ব।  কিন্তু মকরুল বাহিনীর কালো থাবায় হুমকির মুখে পড়ে পর্যটন কেন্দ্রটি। এসব লুটপাটের বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ভোরের কাগজ পত্রিকাসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়  সংবাদ প্রকাশিত হলে উপজেলা প্রশাসনসহ বন বিভাগ নড়েচড়ে বসে। এসব লুটপাটের বিষয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের চাপের মুখে  মকরুল ইসলাম আকন্দ অবশেষে  বন্ধ করে দেয়   পাহাড় কেটে পাথর ও বালু লুটপাট।  পাহাড় কেটে  পাথর ও বালু লুটপাটের বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় সাংবাদিকদের উপর ক্ষেপে উঠেন মকরুল   বাহিনীর সদস্যরা।

অভিযোগে প্রকাশ, পত্রিকায় লেখালেখির পর পাহাড় কেটে পাথর ও বালু লুটপাট বন্ধ হলে ও  বৃক্ষ নিধন বন্ধ হয়নি। গারো পাহাড় থেকে অবাধে চলছে বৃক্ষ নিধন।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে  প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা মূল্যের কাঠ পাচার করা হচ্ছে। পত্রপত্রিকায় লেখালেখির পর পাহাড় কেটে পাথর ও বালু লুটপাট বন্ধ হলে মকরুল বাহিনী গারো পাহাড়ে সাংবাদিক প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

 গত ১মে    গ্লোবাল টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি আবু হেলাল ও মানবকন্ঠের ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রতিনিধি জিয়াউল হক, কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরনদুধনই এলাকায় চোরাই কাঠের ছবি তোলতে গেলে মকরুল ইসলাম আকন্দের  নির্দেশে ওই বাহিনীর সদস্যরা ২ সাংবাদিকের উপর  নির্যাতন চালায় ।  থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে তারা রক্ষা পায়।

পরে এ বিষয়ে জিয়াউল হক বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মকরুল ইসলাম আকন্দের নির্দেশেই ৩ মে  বাকাকুড়া বাজারে সিন্ডিকেটের সদস্যের দিয়ে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করে এবং মকরুল ইসলাম আকন্দ তার   বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন গারো পাহাড় এলাকায় কোন সাংবাদিক প্রবেশ করা মাত্রই যেন পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দেয়া হয়। শুধু তাই নয় মকরুল ইসলাম আকন্দ তার চার বছরের লুটপাটের  ঘটনাও সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহের উদ্দেশ্যেই  তার বাহিনীর সদস্যদের বাদি সাজিয়ে ৪ জন সাংবাদিকের নামে একাধিক মামলা দায়ের করেন।

বর্তমানে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গারো পাহাড়ে প্রবেশ করতে পারছেন না বলে ভুক্তভোগী সাংবাদিকরা জানান,  হুমকি দেয়া হচ্ছে গারো পাহাড়ে কোন সাংবাদিক প্রবেশ করলেই  গ্রেপ্তার করে চালান দেয়া হবে।অন্যথায় দেয়া হবে তাদের নামে   মামলা।  এ নিয়ে আতঙ্কে আছেন ঝিনাইগাতীর কর্মরত সাংবাদিকরা।

এসব ব্যাপারে  মকরুল ইসলাম আকন্দের সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়েছে।  উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।