ধানীখোলা ইউপি নির্বাচনে ইউনিয়ন বাসীর প্রত্যাশা

ইসমাইল হোসেনঃ   ধানীখোলা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আর বেশি দুরে নয়, কিছুদিন বাকি। এরই মধ্যে মাঠপর্যায়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে।কে হবে এই ইউনিয়নের কর্নধার, কাকে এই গুরু দায়িত্ব দেওয়া হবে সে সিদ্ধান্ত নেবে ধানীখোলার আপামর জনসাধারণ। তবে এই নিয়ে মাঠে ঘাটে পথে প্রান্তরে হাট বাজারে ইউনিয়নের বিভিন্ন মোরে চায়ের দোকানে একটাই জল্পনা কল্পনা কাকে ভোট দিবে তারা কি রকম প্রার্থী তাদের পছন্দ। ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা পর্যবেক্ষন করে কিছু সাধারণ জনতার মতামত তুলে ধরা হলো, তারা চায় সৎ, দক্ষ, অভিজ্ঞ, আদর্শবান, জনকল্যাণে নিবেদিত, এলাকার ও দেশের উন্নয়নে নিবিষ্ট ব্যক্তিদের পাশাপাশি প্রকৃত রাজনীতিবিদ যেন দায়িত্ব পায়। সাধারণ জনতার কথা তারা আর অর্থ-সম্পদের কাছে নত হয়ে নিজেকে বিক্রি করবে না। নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট প্রদান করবে।

►জনগন চায় এমন লোক দায়িত্ব আসুক যারা গণ্যমান্য হওয়ার চেয়ে যেন গণমুখী হতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। যে প্রার্থী নির্বাচিত হবেন, তিনি কর্তৃপক্ষপরায়ণ না হয়ে প্রকৃত অর্থে জনগণের প্রতিনিধত্ব করবেন। যাঁর দরজা শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য নয়, সাধারণ মানুষের জন্যও খোলা থাকবে। যে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তাঁদের মনোভাব আগ্রাসী থাকবে না। যিনি রাজনৈতিক সহাবস্থানে বিশ্বাসী হবেন।

তিনি চেয়ারম্যান হলে শহরে বাড়ী গাড়ি ক্রয়ের থেকে এলাকার রাস্তাঘাট উন্নয়নে বেশি মনোযোগী হবেন। টেন্ডারবাজি থেকে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি মন দেবেন। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রকৃত ভদ্রলোককেই মনোনীত করতে চায় ধানীখোলাবাসী।

► আগামী ইউপি নির্বাচনে সাধারণ ভোটার এমন ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে চায়, যাঁকে একেবারে এলাকার রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র, শিক্ষক সবাই চিনবে। তিনি যেন সৎ, মানবিক ব্যক্তি হন। সমাজে তাঁর যেন একটি সম্মান ও মর্যাদা থাকে। এমন ব্যক্তিই দায়িত্বে আসবেন, যিনি সবার কথা ভাববেন, শুধু একা ব্যক্তিস্বার্থ নয়। আশা করি সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল এ বিষয়গুলো নিয়ে ভাববে।

► একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি আদর্শ দেশ গড়তে হলে আদর্শ নেতাকর্মী দরকার। কিন্তু আমদের দেশে এমন আদর্শ নেতাকর্মীর বড় অভাব। যার কারণে আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে পিছিয়ে আছি। আমাদের দেশে নেতা হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয় ক্ষমতালোভীদের। তাঁরা টাকার অহংকারে এবং সন্ত্রাসের বিনিময়ে রাজনৈতিক নেতাদের মন জয় করে থাকে। কিন্তু আদর্শ নেতা হওয়ার কোনো যোগ্যতা তাঁদের নেই; শিক্ষা তো দূরের কথা। আমাদের দেশে অনেক নেতা আছেন, যাঁরা নিজের নামটাও সই করতে পারেন না। এমন লোক আমরা এবার চাই না। এবার নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সৎ, যোগ্য, মেধাবী, যিনি দেশ ও জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে নিবৃত থাকবেন, লোভ-লালসা থেকে দূরে থাকবেন—এমন প্রার্থী আমরা প্রত্যাশা করি।

► সৎ, যোগ্য ও মেধাবী রাজনীতিবিদদের প্রাধান্য দিতে হবে। যাঁরা আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেন তাঁদের কথা প্রথমে ভাবতে হবে। টাকার বিনিময়ে মনোনয়ন বাণিজ্য করা চলবে না। এর ফলে অসৎ ব্যক্তিরা দেশ দখল করেছে। এটা আমরা করতে চাই না। রাজনীতিতে এমন প্রার্থী দিতে চাই, যে প্রার্থীরা সংসদে গিয়ে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কথা ভাববেন। দরিদ্র মানুষের জন্য রাজনীতি করবেন—এমন মানবিক মানুষই আমাদের প্রত্যশা।

► আগামী নির্বাচনে কোনোভাবেই যেন মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তি স্থান না পায়, দলগুলোকে এর নিশ্চয়তা দিতে হবে। দেশ নিয়ে পজিটিভ চিন্তা করেন—এমন মানুষ বাছাই করতে হবে। পুরনো একগুঁয়ে মানসিকতার মানুষ পরিহার করতে হবে। শুধু রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি নয়, তাঁকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিতও হতে হবে। প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষায় ন্যূনতম ডিগ্রি পাস হতে হবে। ডিগবাজি খাওয়া নেতাদের প্রত্যাহার করতে হবে। দ্বৈত নাগরিকত্ব এমন ব্যক্তিকে অবমূল্যায়ন করতে হবে। আড়তদার, মজুদদার কোনো ব্যক্তিকে প্রার্থী করা যাবে না। তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের প্রার্থী হিসেবে বাছাই করতে হবে। দেশপ্রেমিক, উদ্যমী, ও গণমানুষের সেবক ব্যক্তিকে মানুষের সেবা করার সুযোগ দিতে হবে।

► জনপ্রতিনিধি সমাজের অনাচার, অবিচার, সন্ত্রাস দূর করে স্থানীয় মানুষের বন্ধু হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। নির্বাচিত প্রার্থী সদয়, দূরদর্শিতা, মানবিকতা ইত্যাদি গুণ দিয়ে এলাকার মানুষের পাশে থাকবেন, মানুষ যেন সব রকমরে বিপদ-আপদে তাঁকে সঙ্গে পায়—এমন ব্যক্তিকেই দলগুলোর প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে হবে। তাহলেই আমরা একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিকব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবো।

► টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও দখলদারির রাজনীতি আর নেই। রাজনীতিতে এখন স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও জনসম্পৃক্ত নেতাদের কদর বাড়ছে। তাই আগামী নির্বাচনে এসব গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে আওয়ামী লীগকে ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নেতাকর্মীদের কাছে ভালো ইমেজ রয়েছে; রাজনীতিক হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত; সংগঠক হিসেবে দক্ষ, সৎ, নিষ্ঠাবান ও শিক্ষিত ব্যক্তিরা আগামী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন থাকবে—এটাই আমাদের আশা। নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করলেই আগামী নির্বাচনে চেয়ারম্যান হয়ে যাবেন—এমন দৃষ্টিকোণ থেকে মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হবে না। যিনিই চেয়ারম্যান প্রার্থী হোন তাঁর মধ্যে সততা, জনসম্পৃক্ততা, স্বচ্ছতা—এসব গুণ থাকতে হবে। থাকতে হবে সামাজিক পরিচিতি। তাহলে অনায়াসে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হবেন। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে। রাজনীতি যাদের অবৈধভাবে টাকা-পয়সা রোজগারের অবলম্বন, জনগণ তাঁদের প্রতিনিধি বানাতে চায় না। তাই ভোটারের পছন্দকে খেয়ালে রাখতে হবে। না হলে ভরাডুবি হতে পারে।

► নির্বাচনের জন্য প্রার্থী একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোকে সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। সামনের দিনগুলোতে প্রার্থীকে অবশ্যই ক্লিন ইমেজসম্পন্ন হতে হবে। কারণ, জনগণ এখন অনেক সচেতন। তারা শুধু এখন প্রতীক নয়, প্রার্থী সম্পর্কেও খোঁজখবর নেয়। এ ব্যাপারে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে সচেতন হতে হবে। দলের পরীক্ষিত হওয়াও যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। প্রার্থীকে শিক্ষিত, সৎ এবং প্রশাসনিক যোগ্যতা ও দক্ষতাসম্পন্ন হতে হবে। জনগণের সেবা করার ইচ্ছা থাকতে হবে। প্রার্থীকে অবশ্যই দলমতের ঊর্ধ্বে সেবা করতে হবে। যিনি নাগরিকের ন্যায্য অধিকার বুঝিয়ে দেবেন ও জনগণের দাবি আদায় করতে সক্ষম হবেন। তাঁকে লক্ষ রাখতে হবে জনগণ যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়। ভোট একটি আমানত। যিনি মানুষের আমানত রক্ষা করতে পারবেন, এমন সৎ প্রার্থী হওয়া উচিত। প্রার্থী সৎ, অন্যায়ের প্রতিবাদী, অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যেকোনো ধরনের ত্যাগ করতে প্রস্তুত, প্রয়োজনে জেলে যেতেও নিজেকে প্রস্তুত রাখবেন। প্রতিটি এলাকায় এমন প্রার্থী হওয়া উচিত, যাঁর দ্বারা এলাকার সেবার মানের উন্নতি হবে। একজন ভালো প্রার্থী তাঁর এলাকাকে পিতার মতো আগলে রাখবেন। আশা করি রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যেক এলাকায় এমন প্রার্থী দেবে।

► আগামী ইউপি নির্বাচনে আমরা এমন প্রার্থী চাই না যাঁরা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, যাঁরা নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত থাকেন, যাঁরা নিজেকে ছাড়া এলাকার মানুষের খোঁজখবর রাখেন না, মানুষের সমস্যা সমাধানে যাঁরা সচেষ্ট নন। এমন প্রার্থী চাই, যিনি মানুষের হৃদয়কে জয় করতে পেরেছেন, সব সময় এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন, মানুষের সমস্যাগুলো জানতে চান, সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নেন। উর্ধতন কতৃপক্ষের কাছে মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলার সাহস যাঁর আছে যিনি অন্য কারো উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেই সাহসিকতার সহিত সকল সমস্যার সমাধান দিতে পারেন সাধারণ জনগন এমন ব্যক্তিকেই চায়।

ইসমাইল হোসেনের ফেইস বুক থেকে নেয়া।