৮’শ বছর পূর্বে দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত সাহেব বিবি ও মৎস্য বিবি মসজিদ

ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক::আট’শ বছর পূর্বে চুন সুরকির গাঁথুনিতে নির্মাণ করা হয়েছিল দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য শৈলীর দুইটি মসজিদ।  মোগল আমলে দুই মসজিদের নাম দেয়া হয়েছিল সাহেব বিবি মসজিদ ও মৎস্য বিবি মসজিদ।

সাহেব বিবি মসজিদের স্থাপত্যটির পাশে ও সামনে মাথা নিচু করে প্রবেশ করার জন্য প্রায় ৪ ফুট উঁচু করে নির্মাণ করা হয়েছে গেইট ।  স্থাপনাটি ৮টি পিলার, ৩টি দরজা, দুটি জানালা ও ১ গম্বুজ বিশিষ্ট।  কারুকাজের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে শৈল্পিক রূপ।  দুই মসজিদের পাশে খনন করা হয়েছে বিশাল দিঘী।

৮’শ বছর পূর্বে নির্মিত স্থাপনাটি রূপগত পরিবর্তন করে বর্তমানে লাগানো হয়েছে টাইলস।  ঐতিহ্যবাহী নান্দনিক দুই মসজিদের অবস্থান এক’শ গজের মধ্যে।  তবে সাহেব বিবি মসজিদ পৌরসভার নয় নং ওয়ার্ডের পশ্চিম রাউজান মৌজায়।  অপর মৎস্যবিবি মসজিদের অবস্থান রাউজান ইউনিয়নের পশ্চিম রাউজান মৌজায়।

পথ পরিচিতি : চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কের জলিল নগর বাস ষ্টেশান হতে সাহেব বিবি সড়ক হয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে রাউজান পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের হাড়ি মিয়া চৌধুরী বাড়িতে অবস্থিত দৃষ্টি নন্দন সাহেব বিবির ও মৎস্য বিবি মসজিদের।  ওই স্থানের মানুষের প্রাণের মসজিদ এই গুলো।  দূরের মানুষের কাছেও বেশ পরিচিত মসজিদ দুইটি।  কেননা দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে এসে এখানে নামাজ আদায় করেন।

ভ্রমন পিপাসুদের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান হিসাবে পরিচিত।  ইসলাম ধর্মের অন্যতম কালের সাক্ষী এসব মসজিদ দেখার জন্য পর্যটকদেরও কমবেশি ভিড় হয় সরকারী বন্ধের সময়।  মসজিদ গুলোর প্রতিষ্ঠা কালের সঠিক কোন তথ্য না থাকলেও স্থানীয় প্রবীনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রায় ৮’শ বছর পূর্বে মসজিদ নির্মাণ করেন চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক আনোয়ারা থানার শোলকাটা রাউজান গ্রামের জমিদার আমির মোহাম্মদ চৌধুরীর স্বনামধন্য পত্নী ও চট্টগ্রামের প্রসিদ্ধ মলকা বানুর মাতা সাহেব বিবি।

স্থানীয়দের তথ্যমতে কবরস্থানসহ মসজিদ দু’টি ৩০ শতক জমির উপর নির্মিত।  বিভিন্ন কারু কাজ-সম্বলিত টেরাকোটার ইট ও চুন-সুরকির গাঁথুনিতে মসজিদ দু’টি নির্মিত।  সাহেব বিবি মসজিদটির সামনে একটি ঈদগাহ ও পাশে কবরস্থান রয়েছে।  মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি প্রবেশপথ।  পাশ্চিম দিকে গম্বুজ থেকেও উঁচু মিম্বর।  আগে দেয়াল চমৎকার কারুকার্য খচিত থাকলেও রূপগত পরিবর্তন করে লাগানো হয়েছে টাইলস।  মসজিদের উত্তর পাশে খনন করা হয়েছিল সাহেব বিবি দিঘী নামে এক বিশাল দিঘী।  অপরদিকে মৎস্য বিবি মসজিদটির কারুকার্য এখনো পূর্বের ন্যায় কালের স্বাক্ষি।  এটির তেমন পরিবর্তন না করে সামনের পরিধি বাড়ানো হয়েছে মুসল্লিদের নামাজ আদায়ে সুবিধার্থে।

সত্তরোর্ধ বয়সের আলী আকবর চৌধুরী জানান, আমরা ছোট বেলায় দাদার মুখে শুনেছিলাম এই মসজিদটি ৭/৮শ বছর পূর্বে নির্মাণ করা হয়েছিল।  আমার দাদাও তাঁর দাদার মুখে শুনেছিল এটি বিদেশী মিস্ত্রী দ্বারা শত শত বছর পূর্বে নির্মাণ করেছে।  এই মসজিদে নাকি তখন দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে মোছাভাত (আঞ্চলিক শব্দ) অর্থাৎ কয়েকদিনের খাবার নিয়ে পাঁয়ে হেটে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতো নামাজ পড়ার জন্য।

স্থানীয় আশির্ধো বয়সী আলহাজ্ব ইউনুচ মিয়া চৌধুরী প্রকাশ দুলাল মেম্বার বলেন, বাদশা মুহাম্মদ শাহ স্টেট’র আমলে ডিমের আটা, চুন-সুরকি দিয়ে দেশের ২২টি গ্রামে একই রকম মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল।  ২২টি মসজিদের মধ্যে প্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল সাহেব বিবির মসজিদ।

তিনি আরো বলেন, সাহেব বিবির মসজিদটির ভেতরে প্রায় শতাধিক মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন।  এটি মোতোয়াল্লী জোবায়ের হুমায়ন বাবুর তত্তাবধানে গত ২ বছর আগে রূপগত পরিবর্তন করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্ধা নগর যুবলীগ নেতা দস্তগীর চৌধুরী জানান, সাহেব বিবি মসজিদের জম্মকালের সঠিক তথ্য না থাকলেও গত দেড় মাস আগে বাংলা একাডেমীর একটি প্রতিনিধি দল সেখানে গিয়ে এলাকার বৃদ্ধদের কাছ থেকে ও তাদের প্রজন্ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গেছেন ।  তিনি বলেন ঐতিহ্য রক্ষায় প্রাচীন সভ্যতার আলোকে সাহেব বিবি ও মৎস্য বিবি মসজিদ আমাদের নির্দশন।  এগুলোর পরিচর্যা ও দেখ ভালো করে এলাকার লোকজন।  আগামী প্রজম্মের জন্য ঐতিহ্যগত নিদর্শন ধরে রাখার প্রয়াসে আমরা কাজ করছি।

মৎস্য বিবি মসজিদের মোতোয়াল্লী মো. ইলিয়াছ মিয়া চৌধুরী প্রকাশ লিটু জানান, ইসলামের ঐতিহ্য রক্ষায় সুরক্ষিত রাখা হচ্ছে মৎস্য বিবি মসজিদ।