মুক্তাগাছায় জেসমিনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ইউএনও 

মোঃ আনিসুর রহমানঃ মুক্তাগাছায় ৯ বছর যাবৎ শিকলেবন্দি জীবন কাটাচ্ছে এক বালিকা। ১১ বছর বয়সী বালিকার নাম জেসমিন। জেসমিন গত ৯ বছর ধরেই সে শিকলেবন্দি। জেসমিন উপজেলার দাওগাঁও ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা জুলহাস ও রিনা দম্পতির কন্যা।
বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার মানবতা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিক একটি লাইভ ভিডিও প্রচার করেন। লাইভ ভিডিওটি মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মনসুর এর  নজরে আসলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে ফোন করে খোঁজ নিতে বলেন। এরপর রবিবার দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার জামাল উদ্দিন বাদশা জেসমিন ও তার মা বাবাকে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হাজির হলে শিশু জেসমিনের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নেন ইউএনও আব্দুল্লাহ আল মনসুর।
জানাগেছে, ২০১১ সালে জুলহাস ও রিনা দম্পত্তির কোল আলো করে জন্মগ্রহণ করে ফুটফুটে শিশু জেসমিন। জন্মের ১০  মাস পর হঠাৎ জ্বর খিচনি রোগ হয় জেসমিনের। ময়মনসিংহ নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে তার চিকিৎসা করানো হয়। শিশুটির চিকিৎসা করাতে জমানো টাকা ও ধারকর্য করতে হয়। তাতেও কোন লাভ হয়নি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জেসমিনকে দীর্ঘদিন ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় । কিন্তু হতদরিদ্র জুলহাস ও রিনা দম্পত্তি আর্থিক  অভাব অনটনে পড়ে একপর্যায়ে তাকে ঔষধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেন। এবং জেসমিনকে আল্লাহর হাতে ছেড়ে দেন।
এরপর থেকে তাকে যে কেউ কোলে নিলে কামড়ে দিত। সেই সাথে হামাগুড়ি দিয়ে যখন তখন অন্যত্র চলে যেত, যে কারণে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শুরু করে পরিবারটি। এলাকাবাসী জানান, শিশুটিকে নিয়ে বাবা মায়ের দুঃখের অন্ত নেই। দরিদ্র বাবা মা’র সংসার চালানোই কষ্টসাধ্য। তার উপর এর চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে এখন নিঃশ্ব প্রায়। এমতাবস্থায়  সরকারসহ বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তারা।
জেসমিনের মা-বাবা জানান, সরকারীভাবে শিশুটিকে একটি প্রতিবন্ধী কার্ড করে দেওয়ার সাবেক চেয়ারম্যান মজনু সরকারের কাছে গিয়েছি । কিন্তু  কার্ড করে দেয়নি। পরবর্তীতে স্থানীয় মোফাজ্জল হোসেনকে পাঁচ হাজার টাকা  ঘুষ দিতে হয়েছে। তবে ঘুষ দেওয়ার পরও কার্ডটি করে দেওয়া হয়নি বলেও জানান জেসমিনের মা বাবা।
মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল্লাহ আল মনসুর জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবন্ধী জেসমিনকে নিয়ে করা একটি লাইভ ভিডিও দেখি।
অতপর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার জামাল উদ্দিন কে ওই শিশুটির পরিবারের যোগাযোগ করতে নির্দেশনা প্রদান করি । রবিবার দুপুরে ইউপি চেয়ারম্যান শিশুটির মা বাবাকে নিয়ে  আমার কার্যালয়ে আসলে তাদের সম্মতিক্রমে  উপজেলা প্রশাসন থেকে জেসমিনের চিকিৎসা ব্যবস্হা গ্রহণ করা হয়। আগামী দুই একদিনের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একটি টিম পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হবে এবং জেসমিনের চিকিৎসা প্রদান কার্যক্রম শুরু করা হবে।
তবে এটা অত্যন্ত খারাপ লাগার মত বিষয় যে, জেসমিন দীর্ঘদিন শিকলবন্দী থাকলেও উপজেলা প্রশাসনকে কেউ তথ্যটি দিয়ে সহায়তা করেননি। তবে বিষয়টি নজরে আনায় মানবতা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক খায়রুল আলম রফিককে ধন্যবাদ জানান।