দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে করণীয়

দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধযোগ্য রোগ।এই জন্য কেবল প্রয়োজন সচেতনতা। দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধ বিষয়ে কথা বলেছেনডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ। বর্তমানে তিনি রাজ ডেন্টাল ওয়াও রাজ ডেন্টাল সেন্টারের ডেন্টাল বিভাগে পরামর্শক ও চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : দাঁত ক্ষয় প্রতিরোধে কী করা যায়?

উত্তর : ডেন্টাল প্লাক নামক একটি বিশেষ বস্তু থাকে। দেখা যায়, আমরা যদি ২৪ ঘণ্টায় একবারও দাঁত ব্রাশ না করি, তাহলে আমাদের মুখে যে আগত লালা, এই লালার একটি অংশ আমাদের দাঁতে লুকায়িতভাবে লাগতে শুরু করে। মুখের মধ্যে কিন্তু অসংখ্য ব্যাকটেরিয়ার এমনিতেই বসবাস। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছে মুখের ভেতর প্রায় সাতশর ওপরে ব্যাকটেরিয়া বসবাস করে। তবে সেটা কোনো ক্ষতি করে না,যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অনুকূল পরিবেশ না পায়। যেই লালা জমে থাকে এর মধ্যে ব্যাকটেরিয়া জমে বংশ বিস্তার করতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ব্রাশ করে আমরা পরিষ্কার না করি। এটি করার জন্য একটি সময়েরও প্রয়োজন হয়। দেখা যায় আমরা যে খাবারগুলো খাই, মিষ্টি জাতীয় খাবার, যখন আমরা খাই তখন ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে। ব্যাকটেরিয়ার ওই খাবারগুলো পছন্দ। ওই খাবারগুলো তারা কাজে লাগিয়ে এক ধরনের এসিড তৈরি করে। দেখা যায় এই এসিডটি শেষ পর্যন্ত দাঁতের আবরণকে শক্ত করে ডেন্টাল ক্যারিজ তৈরি করে।

প্রশ্ন : ক্ষয় যেন না শুরু হয়, সে জন্য কী করতে হবে?

উত্তর : সচেতন হতে হবে। শুরুটা কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের থেকে। বাচ্চা যখন মায়ের পেটে বড় হয়, তখন চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে দাঁতের গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এই জন্য কিন্তু আমরা গর্ভবতী মায়েদের বলি ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খেতে বা ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট দেই, যাতে দাঁত ও হাড়ের গঠন তৈরি হয়। মায়েদের যত্নবান হতে হবে বাচ্চার দাঁত সম্পর্কে। বাচ্চা যখন ভূমিষ্ঠ হয়, অনেক মায়েদের দেখা যায় বুকের দুধের পরিবর্তনে ফিডারের দুধ খাওয়ায়। সেখান থেকে বাচ্চা কিন্তু কৃত্রিম চিনিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। সেক্ষেত্রে দেখা যায় যেসব বাচ্চারা মায়ের বুকের দুধ খায়, তাদের ডেন্টাল ক্যারিজ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। সেই ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে যাতে আমরা বুকের দুধকে প্রাধান্য দেই। পাশাপাশি যারা ফিডারের দুধ খাচ্ছে, তাদের দুধ খাওয়ানোর পর কাপড় ভিজিয়ে মাড়ি ও জিহ্বা মুছিয়ে দিতে হবে। তাহলে ব্যাকটেরিয়া সেইভাবে বংশ বিস্তার করতে পারে না।

এরপর যখন বাচ্চাদের দাঁত ওঠে, তখন কিন্তু বাচ্চাদের দাঁতের নিজস্বতা থেকে সুরক্ষা দরকার। সে ক্ষেত্রে বাচ্চাকে আমরা ফ্লোরাইডের কথা বলি। আমাদের পানিতে ফ্লোরাইড রয়েছে। যাদের পানিতে ফ্লোরাইড নেই, সেই জায়গায় তাদের কিছু ব্যবহার করা উচিত, যেন গঠনগতভাবে ক্ষয় প্রতিরোধের জন্য একটি মজবুত অবস্থার তৈরি হয়। পাশাপাশি ব্রাশের বিষয়টি আসে। আমরা যদি ঠিকমতো দাঁত ব্রাশ করি তাহলে প্ল্যাক কিন্তু দাঁতে লেগে থাকতে পারে না।

বাচ্চা যদি ব্রাশ করতে না চায়, ব্রাশে টুথপেস্ট না লাগিয়ে ব্রাশকে যদি গরম পানি দিয়ে ভিজিয়ে দাঁত ব্রাশ করি, তাহলে ব্যাকটেরিয়া বা প্লাক অনেকটাই কমে যায়।