টাকা ছাড়া কাজ হয় না সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে, ঢাকার আশেপাশে বদলি হতে লাগে ৫০ লাখ টাকা

মো. আখতারুজ্জামান: অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ করানো অত্যন্ত দুরূহ বিষয়। সেই সঙ্গে সাব-রেজিস্ট্রার, সহকারী মোহরার, নকলনবিশ ও দলিল লেখকদের একাংশ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর ধানম-ির টিআইবির কার্যালয়ে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং টিআইবির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেন নিহার রঞ্জন রায় ও শাম্মী লাইলা ইসলাম।
ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসাজশ রয়েছে। একজন সাব-রেজিস্ট্রার বদলি হতে তিন থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। তবে ঢাকার আশেপাশের থানাগুলোতে সাব-রেজিস্ট্রারদের বদলির ক্ষেত্রে কখনো কখনো টাকার অঙ্ক ৫০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে এ অর্থের ৫০ শতাংশ সাব-রেজিস্ট্রার, বাকি অর্থ অফিসের সকলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমি খাতে অনেক ক্ষেত্রেই নিয়ম বহির্ভূত অর্থ আদায় যোগসাজশের মাধ্যমে হয়ে থাকে। দলিল নিবন্ধনের ক্ষেত্রে এক হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা, দলিলের নকল উত্তোলনে এক হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা, দলিল নিবন্ধনের সময় দলির লেখক সমিতিকে ৫শ’ থেকে ৫ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। অন্যদিকে ব্যাংকে জমি বন্ধকি রাখতে দলিলে বেশি মূল্য দেখানো হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রতিবেদনটি তৈরি করতে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। এতে দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলার ৪১টি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যাওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তথ্য প্রমাণসহ এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
তিনি বলেন, ভূমি খাতে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। দেশের সাব-রেজিস্ট্রার অফিসগুলোতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যথেষ্ট অভাবে এমনটা হচ্ছে। সরকারের নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত কর্মকর্তারা এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এ খাতে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে সেবা দেয়ার নামে জিম্মি করে, সময়ক্ষেপণ করে নিয়মবহির্ভূতভাবে অর্থ ও ঘুষ আদায় করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে ভূমি খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে আমরা যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছি, গত দু’বছরে তার কোনো উন্নতি হয়নি বরং অবনতি হয়েছে। টিআইবির প্রতিবেদনে এসব অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে ১৫টি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে ভূমিখাতে ডিজিটালাইজেশন, বদলির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা অন্যতম। সম্পাদনা: রমাপ্রসাদ বাবু

সূত্র_ আমাদের নতুন সময়