কেন টার্গেট এখন গণমাধ্যমকর্মীরা ?

ইদানিং হঠাৎ করেই গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর বিভিন্ন মহলের আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ভাবখানা এমন, গণতান্ত্রিক অধিকারের নামে রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতারা সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করা এদের দলীয় কর্মসূচীরই অংশ। তা না হলে প্রায় প্রতিদিন ঢাকা,ময়মনসিংহ, রংপুর,রাজশাহীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হতেন না। বিষয়টি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমার কাছে কষ্টের। তবে কেন জানি মনে হয়, এভাবে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ার জন্য আমরা নিজেরাই দায়ি। দেশের গত এক বছরের রাজনীতিসহ বিভিন্ন প্রেক্ষাপটের আলোকে বলা যায়, অনেক আগেই আমরা লক্ষবস্তুতে পরিণত হওয়ার কথা ছিল। একটু দেরিতে টার্গেট করেছে তারা, এটা আমাদের ভাগ্য।

এটা কি অস্বীকার করার উপায় আছে, দেশের চলমান সংকটসহ বিভিন্ন আলোচিত মুহূর্তে গণমাধ্যম কর্মীদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। গণমাধ্যম কর্মীরা কি আসলেই নিরপেক্ষ ছিল? পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে এসে আমরা কি মাঝে-মধ্যে একটু হলেও পক্ষপাতিত্ব করছিনা বা করিনি ? তা ছাড়া নিজে নিরপেক্ষ থাকতে চাইলেও কর্তৃপক্ষের বাইরে যাওয়ার সুযোগ তো আমাদের নেই। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনুমোদন পাওয়া গণমাধ্যমগুলো কোন না কোন ভাবে সর্ম্পূণ নিরপেক্ষ থাকতে পারছেন না। ফলশ্রুতিতে, রোষানলের শিকার হচ্ছি আমরা যারা মাঠে থাকি তারা।

গত কয়েক মাসে মাঠে গিয়ে যা দেখেছি সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হামলাকারীরা নির্দিষ্ট কয়েকটি গণমাধ্যমকর্মীদেরই খোঁজ করেন। আবার এর উল্টোপিঠে দেখেছি, যেসব গণমাধ্যমকর্মীদের খোঁজ করছেন, ওইসব গণমাধ্যমে একটু অতি-উৎসাহী হয়ে ভিন্ন ধরনের সংবাদ প্রচার বা প্রকাশ করতে গিয়ে কিছুটা মিথ্যাচারও করছেন। এর জন্য আামি মাঠে থাকা গণমাধ্যমকর্মীটাকে দায়ি করি না। কর্তৃপক্ষের চাওয়া পূরণ করতে গিয়েই তিনি অমনটি করেন।

এখন প্রশ্ন আসুক, হামলার শিকার হওয়া সত্ত্বেও কিছু কিছু গণমাধ্যম কর্মী তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ আমলে নিচ্ছেন না কেন ? কেনই বা তারা অত বিপ্লবী হয়ে উঠছেন। এর কারণ হিসেবে তারা ব্যাখ্যা করেন, আমরা সততা, নিরপেক্ষ এবং দায়িত্বশীলভাবে কাজ করছি। যদি সততা এবং দায়িত্বশীলতার কথা আসে তাহলে প্রশ্ন থেকেই যায়, অন্য গণমাধ্যমকর্মীরা কি নিরপেক্ষ নন? অন্যরা কি অসৎ? অন্য সংবাদকর্মীরা কি দায়িত্বশীল নন?

আসলে বিষয়টা তা নয়। প্রকৃত অর্থে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকীয় নীতিমালার জন্যই এমনটি হয়ে থাকে। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় নীতিমালা তো আর এক নয়। সুতরাং আমি-আমরা যে সংবাদকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করবো তা হয়তো অন্য গণমাধ্যমে ইতিবাচক হিসেবেই প্রচারিত বা প্রকাশিত হবে। এভাবে ভিন্নতর হতে হতে আমরা আস্থা হারাচ্ছি রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন মহলের। এমনকি একই ঘটনার ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পেয়ে আমাদের উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন সাধারণ লোকজনও। তাই আমি জোর গলায় বলতে পারি, গণমাধ্যম কর্মীদের উপর হামলা ততদিন বন্ধ হবে না যতদিন আমরা অনিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশ থেকে বিরত থাকবো না। আর এ অনিরপক্ষেতা দূর করতে পারে একমাত্র সম্পাদকীয় নীতিমালায়। তাই আমরা যারা প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে অতর্কিত হামলার শিকার হচ্ছি তাদের এখন একটাই দাবি হওয়া উচিত, প্রতিষ্ঠানের মালিক যেই আদর্শই লালন করুক না কেন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সংবাদকর্মীদের উপর যেন ওই আদর্শ ছাপিয়ে দেয়া না হয়।

লেখক : মো: খায়রুল আলম রফিক
সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক),বিশেষ প্রতিনিধি দৈনিক আমাদের কন্ঠ।