ত্রিশালে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়া আলী হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

 নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ত্রিশালে স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে হ*ত্যা করে পালিয়ে যাওয়া আলী হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ এবং ঘটনার রহস্য উন্মোচ

ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও আসামী গ্রেফতারের জন্য মাঠে নামেন। তথ্য প্রযুুক্তি ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল হোতা ভিকটিমের স্বামী আলী হোসেনকে গত ২২/০৫/২০২৪ খ্রিঃ গাজীপুরের শ্রীপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হন।

ধৃত আসামী আলী হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক র্বণনা প্রদান করেন। হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রেক্ষাপট হল ধৃত আসামী দিন মজুরের কাজ করত। তার কোন জমিজমা ছিল না। অভাবের সংসারে স্ত্রী আমেনা খাতুন এবং দুই ছেলে ছিল। বড় ছেলের নাম আবু বক্কর সিদ্দিক (৪) ও ছোট ছেলে আনাছ( ২ বছর ৬ মাস)। তিনি তার চাচার দেওয়া জমিতে অনেক দিন ধরে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করিতেছে।

সংসারে সারা বছর অভাব অনটন লেগেই থাকত। ঠিকমত তার সংসার চালাতে পারত না। তাই সে বিভিন্ন সময় তার স্ত্রী ভিকটিম আমেনার নাম দিয়ে এনজিও থেকে টাকা তুলত। বেশ কিছুদিন পূর্বে সে এনজিও থেকে ১,৭০,০০০/-টাকা ঋণ নেয়। সেই টাকার কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় তাকে এবং তার স্ত্রীকে অপমান করা হত। প্রায়ই তার ছেলে ও বৌ না খেয়ে দিন কাটাত।

ঋণের বোঝা, মানুষের অপমান, সংসারের অভাব অনটন থেকে মুক্তি পেতে ২/৩ মাস পূর্বেই আলী হোসেন সিদ্ধান্ত নেয় তার স্ত্রী ও সন্তানদ্বয়কে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করবে। পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক আসামী আলী হোসেন গত ১৭/০৫/২০২৪ খ্রিঃ তারিখ শুক্রবার রাত অনুমান ০২.০০ ঘটিকায় তার স্ত্রী ও সন্তান ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রী আমেনা খাতুনকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে।

তার স্ত্রী আমেনা খাতুন বিছানা থেকে নেমে ঘরের মেঝেতে গিয়ে বসলে আলী হোসেন তার পিঠের পিঁছনে গিয়ে তার গায়ে থাকা ওড়না দিয়ে আমেনা খাতুন এর গলায় পেচিয়ে মাটিতে ফেলে দুই হাত দিয়ে টান দিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারপর বিছানায় আসামী আলী হোসেন এর দুই ছেলে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীর গলা থেকে ওড়না খুলে নিয়ে প্রথমে ছোট ছেলে আনাছ এর গলায় ওড়না পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে এবং পরপরই তার বড় ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিকি এর গলায় ওড়নার বাকী অংশ দিয়ে পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

পরে আসামী আলী হোসেন এর স্ত্রীকে কাঁধে তুলে নিয়ে ঘরের পিঁছন দিয়ে জঙ্গলে নিয়ে রাখেন এবং এর পরপরই তার দুই ছেলেকেও কোলে করে ঐ জঙ্গলে নিয়ে আসে। তারপর জনৈক ইউসুফ ও কালামের জমির মাঝখানে সীমানা বরাবর মাটিতে গর্ত করে তার স্ত্রী ও তার ০২ সন্তানকে পুতে রাখে।

ভোরের দিকে সেখান থেকে চলে এসে আসামী ঘরে ঘুমিয়ে পরে। আসামী আলী হোসেন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আনুমানিক সকাল ১০.০০ ঘটিকায় বাড়ী হইতে হরিরামপুর এলাকায় চলে যায় এবং বিকালে বাড়ীতে ফিরে এসে মালামাল নিয়ে গফরগাঁও মশাখালী ষ্টেশনে গিয়ে ট্রেনে উঠে কমলাপুর রেল ষ্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা করে। ডিবির হাতে গ্রেফতারের আগে গ্রেফতার এড়ানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় গোপনে ছিল।

উল্লেখ্য একই আসামীর বিরুদ্ধে ত্রিশাল থানায় ২০১২ সালে ধর্ষণ এবং শ্বসরোধ করে হত্যার ঘটনায় একটি মামলায় ০৫ বছর কারাভোগ করে ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে জামিনে মুক্তি লাভ করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।