জাককাইনবি প্রতিনিদি::ডিভাইসের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রতিরোধ আবিষ্কার করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দুই শিক্ষার্থী মো. আলমাস হোসাইন শাজা এবং মো. ইউসুফ জামিল রনি নামের দুই শিক্ষার্থী।তাদের দাবি তাদের আবিস্কৃত ডিজিটাল সিস্টেমের মাধ্যমে বিবাহ প্রতারণার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
দেশে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ এটি একটি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সমস্যা। বাংলাদেশ সরকার বাল্যবিবাহ নিরোধে সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও প্রতিনিয়তই প্রকাশ্যে বা গোপনে মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ সংগঠিত হচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বাল্যবিবাহের প্রবণতা দেখা যায় একটু বেশি। যার ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের পাশাপাশি সমাজ ও সভ্যতা নানাবিধ অপরাধে নিমজ্জিত হচ্ছে।বিভিন্ন অঞ্চলে বিয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কথা প্রায়শই শোনা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, ছেলে/মেয়ে পূর্বেই বিবাহিত থাকে। অনেক ক্ষেত্রে আবার তাদের সন্তানও থাকে। এভাবে প্রতারণার ফাঁদে অনেক ছেলে/মেয়ের জীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
এ ছাড়াও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমগুলো থেকে জানা যায়, কোনো সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া বাবা-মা, কাজী, উকিল বাবা সাজিয়ে বিয়ের কাজ সেরে ফেলেন। তাদের উদ্দেশ্য সুন্দরী মেয়েকে কনে বানিয়ে বেশি টাকা দেনমোহরের মাধ্যমে কোনো ধনবান ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিয়ে কয়েকদিনের ব্যবধানে ডির্ভোসের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা আদায় করা। এই ধরনের প্রতারণা মূলক বিবাহের সংবাদ আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। বিয়ে খেলায় প্রতারক চক্র সবসময়ই সরব। এ ছাড়াও বয়স বাড়িয়ে ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে বাল্যবিবাহের সংস্কৃতি আমাদের সমাজে সর্বাত্মক। এ সকল সমস্যার সমাধানকল্পে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী যুগান্তকারী উদ্ভাবন ঘটিয়েছেন। যা এখন চারদিকে আলোড়ন সৃষ্টি করছে।
এ বিষয়ে তরুণ দুই উদ্ভাবক জানান, তারা ’বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ফর প্রিভেন্টিং ইলিগ্যাল ম্যারেজ’ ডিভাইস তৈরি করেছেন। যার মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানের ভিত্তিতে বিয়ে নিবন্ধন, বর-কনের পূর্বোক্ত বৈবাহিক অবস্থা ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি সহজেই জানা যাবে। বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহ এ দেশের প্রেক্ষাপটে এক ভয়ানক সামাজিক ব্যাধি। এই ডিভাইসটির মাধ্যমে নিবন্ধনকৃত বর-কনের জন্মনিবন্ধন/ ভোটার আইডি নাম্বার বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানের মাধ্যমে পূর্বোক্ত বৈবাহিক অবস্থা, প্রকৃত বয়স ও সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি জানা যাবে।
নির্ধারিত দেনমোহর ও এর পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধন ফি-এর ব্যাপারে সম্যক ধারণা পাওয়া সম্ভব হবে। বিবাহ নিবন্ধন ফি সফটওয়্যার নির্ধারিত পিন নাম্বারের বদৌলতে সরাসরি রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর/মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেমের মাধ্যমে পরিশোধ করে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করলে রাষ্ট্র বিবাহ নিবন্ধন বাবদ বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পাবে। এতে করে রাষ্ট্র ও নাগরিকের মধ্যে সংযোগ সাধনসহ দায়িত্ববোধের সৃষ্টি হবে। সেন্ট্রাল ডাটাবেজের মাধ্যমে সমগ্র দেশে উপরোক্ত বিষয়াদির সমন্বয়ের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন অল্প হলেও তরান্বিত হবে বলে বিশ্বাস তাদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাইন উদ্দিন জানান, আমাদের দুই শিক্ষার্থীর এই উদ্যোগটি সত্যিই প্রশংসনীয়। অভূতপূর্ব এই আবিষ্কারের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নামক অভিশাপ থেকে আমাদের সমাজ তথা রাষ্ট্র মুক্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস। রাষ্ট্র ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পৃষ্টপাষকতা পেলে প্রত্যেকেই উক্ত ডিভাইসটির মাধ্যমে সুফল ভোগ করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার কৃষিবিদ ড.হুমায়ুন কবির জানান, নতুন ডিভাইস জনকল্যাণে অনেক কাজে আসবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড.এ.এইচ.এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নামক অভিশাপ থেকে মুক্তির ডিভাইস আবিষ্কার করেছে শুনে নিজেকে গর্ববোধ মনে করি।