নিজস্ব সংবাদদাতাঃ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনকে কেন্দ্র করে হাতাহাতি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের কাহালগাঁও গ্রামের রঙ্গেরধারা নামক স্হানে । এতে কবির হোসেন নামে একজন আহত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। আহত কবির হোসেনকে চিকিৎসার জন্য ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। জানাগেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকাল আনুমানিক ৫ ঘটিকার সময় কবির মোটর সাইকেল যোগে যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানের দাওয়াতি কার্ড বিতরণ করতে গেলে রঙ্গেরধারা এলাকার চান মামুদের বাড়ির পাশে পাকা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা জাহিদকে দেখে মোটর সাইকেল থামান।
এসময় শাহাদাত হোসেন জাহিদকে বলেন গাড়িতে উঠো কার্ড গুলো বিতরণ করে আসি কিন্তু জাহিদ গাড়িতে না উঠে কবির হোসেনের কলার চেপে ধরেন আর পাশে থাকা মোক্তার হোসেনের ছেলে শান্ত লাঠি নিয়ে এসে কবিরকে মারধর শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ নেতা শাহাদাত হোসেন বলেন,জাহিদ (কাহালগাঁও রঙ্গের ধারা গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে শাহার আলীর পুত্র জাহিদ) কবির হোসেনের কলার চেপে ধরার সাথে শান্ত লাঠি নিয়ে এসে কবিরকে মারধর করা শুরু করেন। এসময় শামসুল হকের পুত্র ফজলুল, চান মিয়ার পুত্র কবির,জুলহাসের পুত্র ফারুক, মিনহাজের পুত্র হারুন,ছাত্তারের পুত্র শাহালমসহ আরো চার পাঁচ জন এসে কবিরকে মারধর শুরু করলে তিনি মারধরের হাত থেকে কবিরকে বাঁচাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু শান্ত লাঠি দিয়ে শাহাদাত হোসেনের পিঠে আঘাত করলে শাহাদাত মাটিতে পড়ে যান।
এরপর মাটি থেকে উঠে কোন রকমে কবিরকে জাহিদ ও তার সাথে লোকজনের মারধরের হাত ছাড়িয়ে দিলে কবির দৌড়ে রঙ্গেরধারা মোড়ে চলে আসেন। কবির দৌড়ে রঙ্গেরধারা মোড়ে চলে আসার পর তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর শুরু করে জাহিদ ও তার সাথে থাকা লোকজন। মোটরসাইকেল ভাঙচুর করার সময় কাঠ ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন দেখতে পেয়ে মোটরসাইকেল ভাঙচুর করতে নিষেধ করলে জাহিদের সঙ্গীয়রা তার উপর তেড়ে আসেন বলে জানান কাঠ ব্যবসায়ী বাবুল হোসেন । তাদের এহেন আচরণ দেখে বাবুল হোসেন সেখান চলে আসেন। স্হানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এক পক্ষের লোকজন চাচ্ছিল রঙ্গের ধারা স্কুল মাঠে দিবসটি পালন করতে কিন্তু অপরপক্ষ স্কুল মাঠে দিবসটি পালন করতে বাঁধা প্রদান করে আসছিল। যে পক্ষ স্কুল মাঠে দিবসটি পালন করতে বাঁধা করে আসছিল তাদের পক্ষে রহমান সরকারের পুত্র কামরুল ইসলাম এই বাঁধা প্রদান করে বলে জানান স্হানীয়রা।
স্হানীয়রা আরো বলেন, মাতৃভাষা দিবস পালনের অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকার কারণেই মূলত বাধা প্রদান করেন কামরুল ইসলাম। স্হানীয়রা আরো বলেন,কামরুল ইসলাম মসজিদের পাশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে দিবেনা বলে জানালে স্হানীয় মাতাব্বরগন ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ দুপক্ষকে ডেকে এর সমাধানও করে দেন। তবে সমাধান হওয়ার পর কবির হোসেন ও জাহিদের সাথে এনিয়ে বিতর্ক হয় এবং এক ধপর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। পরবর্তীতে অবশ্য তাদেরকে মিলিয়ে দেওয়া হয়। স্হানীয়দের আশংকা সেই হাতাহাতির প্রতিশোধ নিতেই এই মারামারির ঘটনা ঘটিয়েছে জাহিদ ও তার লোকজন। আর এর পেছনে কামরুল ইসলামের ইন্ধন থাকতে পারে।
এই ঘটনার পর অত্র ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেনকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তোফাজ্জল হোসেন নিজে। তিনি বলেন, আমি মারামারির সময় উথুরা বাজারে ছিলাম। সেখান থেকে অটো বেন দিয়ে আসার পথে জাহিদদের বাড়ির পর্যন্ত আসতেই জাহিদের মা চায়না বেগম পথরোধ করে আমার সামনে দাঁড়ান এবং আমার গলায় থাকা মাফলার চেপে ধরে এবং শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত করার পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পরে পাশের বাড়ির লোকজনের সহায়তায় সেখান উদ্ধার হয়ে রঙ্গের ধারা মোড়ে আসি। তার এমন জঘন্য কর্মকান্ডে আমি হতবাক ও বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম। আমি বুজতে পারছিলামনা এবং এখনো বুজতেছিনা কেন সে আমার সাথে এমন আচরণ করলেন। তবে বিষয়টি আমি আমার ওয়ার্ড সভাপতি এবং উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দদের জানিয়েছি এবং এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঠিক বিচার চেয়েছি।
এব্যাপারে ৯নং ওয়ার্ড আ’লীগ সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার সাধারণ সম্পাদকের সাথে চায়না বেগম যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি আমার উর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি অবহিত করেছি এবং তাদের নির্দেশনা পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমার দল আ’লীগের কোন কর্মী বা নেতাকে বিনা অপরাধে কেউ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করবে তা কোন ভাবেই বরদাশত করবনা। এই ঘটনায় যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন আমি তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি এবং তাকে বা তাদেরকে শাস্তির আওতায় না আনলে আমরা সাংগঠনিক ভাবে কর্মসূচি গ্রহণ করব।