মোমিন তালুকদার:: ত্রিশাল পৌরসভার গো-হাটা সংলগ্ন, কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় রোডের পার্শ্বে, ভিআইপি এলাকায় একটি বিল্ডিং ঘরে “বিসমিল্লাহ্ ফুডস্” নামক সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে সাইনবোর্ডবিহীন অপর একটি ঘরে লোকচক্ষুর আড়ালে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে নোংরা পরিবেশে তৈরী হচ্ছে বিস্কুট, কেক, পাউরুটিসহ ৬-৭ জাতের নানা বাহারি মুখরোচক খাবার। এসব খাবার খেয়ে মুখে অরুচি, ডায়রিয়াসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছোট ছোট শিশু! আমরা কখনও কি কেউ ভেবে দেখেছি এই খাবারগুলো কোথায় তৈরি হচ্ছে? কী দিয়ে তৈরি হচ্ছে?
এসব খাদ্যপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ ও যাচাই করার দায়িত্বে যারা আছেন তারা তাদের দায়িত্ব কতটা পালন করছেন?
স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, এই বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর নোংরা স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে ভেজাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করা হচ্ছে বেকারি সামগ্রী!
কারখানার ভেতরে যেখানে তৈরি খাবার রাখা আছে সেখানেই আটা, ময়দার ছড়াছড়ি! রয়েছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, কেমিকেল, ও একাধিক পাম ওয়েলের ড্রাম ! আশপাশে খোলামেলা যায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা ধরনের তৈরি পণ্য! শ্রমিকেরা খালি পায়ে এসব পণ্যের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন। আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করানো কড়াইগুলোও রয়েছে অপরিস্কার ও নোংরা ডাকনাবিহীন! ডালডা দিয়ে তৈরি করা ক্রিম রাখা পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভনভন করছে! কড়াইয়ে রাখা পণ্য তৈরীর তেলগুলো পুড়তে পুড়তে পুড়া মবিলের মত কালো হয়ে যাওয়ার পরও পরিবর্তন করার কোন চিন্তা নেই কারিগরদের!
উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ বাহারি মোড়কে পাউরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের বেকারি সামগ্রী বাজারজাত করা হচ্ছে এই বেকারিতে। উপজেলার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত না রাখার কারণে থেমে থাকেনা এই নোংড়া পরিবেশের বেকারিগুলোর কার্যক্রম! এই বেকারির তৈরী করা পণ্যগুলো বিভিন্ন চায়ের দোকানে সরবরাহ করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বেকারি সূত্রে জানা যায়, ফজরের নামাজের পরই কোম্পানির ভ্যানে করে পৌরসভার বিভিন্ন অলিগলির জেনারেল স্টোর ও চায়ের দোকানে ওই সব পণ্য পৌঁছে দেন ডেলিভারিম্যানরা। বিভিন্ন চায়ের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক সাদা পলি প্যাকেটে ঝুলছে পাউরুটি, বাটারবন, কেকসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্য। বেকারির এসব পণ্যের গায়ে মাঝে মাঝে প্রশাসনের চাপে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ লেখা থাকলেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়, আবার অনেক সময় উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা থাকলেও তারিখ বসানো নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক কর্মচারী বলেন, দিনের বেলায় তারা পণ্য উৎপাদন কম করেন, রাতের বেলায় পণ্য বেশি তৈরী করা হয়, ফজরের আগেই পণ্য উৎপাদন শেষ হয়ে যায়। রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত, র্যাব ও পুলিশের ঝামেলা কম বলেই পণ্য উৎপাদন রাতেই তারা শেষ করেন। কয়েকজন চা দোকানীর কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা গরীব মানুষ, চা-পানের সাথে বেকারির পণ্য বিক্রি করে সংসার চালাই, উৎপাদনের তারিখ দেখার সময় নাই, কাস্টমাররা তো আর এসব জিজ্ঞেস করে না, প্যাকেট থেকে কোনমতে তুলে চা বা কলা দিয়ে ওই সব বেকারি সামগ্রী কিনে খায়!
“বিসমিল্লাহ্ ফুডস্”র মালিক মোঃ হান্নানকে বেকারির কাগজপত্র ছবি-ভিডিওচিত্রগুলো দেখালে তিনি বলেন, আমি আগে সেনাবাহিনীতে চাকরী করেছি তারপর চাকরী ছেড়ে দিয়ে এ ব্যবসা করতেছি দীর্ঘবছর ধরে, আমার বেকারিতে ৬-৭ টি পণ্য তৈরী হয়, ২টি পণ্যের বি.এস.টি.আই এর অনুমতি আছে, কিছু পণ্যের ২-৩ দিন মেয়াদ থাকে সেগুলো মেয়াদের তারিখ ছাড়াই বাজারে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করা হয় , আমার বেকারি একদম ফ্রেশ আমি ভেজাল খাদ্য মানুষকে খাওয়াইনা, উপজেলা সেনেটারি কর্মকর্তা কয়েকদিন পরপর আমার বেকারি পরিদর্শন করতে আসে, বেকারির ভিতর নোংরা পরিবেশ থাকবেই, বেকারির সিস্টেম এটাই! তারপর বেকারির মালিক উপজেলার বিভিন্ন প্রভাবশালী কয়েকজন লোকজনের নাম বলে সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই পত্রিকায় যা লেখার লেখেন বলে তিনি চলেযান!
উপজেলা সেনেটারি কর্মকর্তা বলেন, আমি এই বেকারি পরিদর্শনে গিয়েছি, নোংরা পরিবেশে পণ্য তৈরী, নিম্নমানের মালামাল দিয়ে পণ্য তৈরী, মেয়াদবিহীন পণ্য বাজারে বিক্রিসহ নানা সমস্যা আছে এই বেকারির। বেকারির মালিক এবং শ্রমিকদেরকে আমি অনেকবার সঠিকভাবে বেকারি চালানোর নিয়মকানুন বুঝিয়েছি এবং নির্দেশ দিয়েছি। ত্রিশালের বাসিন্দা ও সচেতন সহলের জোড় দাবী এই নোংরা, অসাস্থ্যকর পরিবেশের বেকারির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হউক।