শামিম ইশতিয়াক, ময়মনসিংহঃ নারী এবং পুরুষের বাইরেও তৃতীয় লিঙ্গধারী শ্রেণীকেই হিজরা সম্প্রদায় হিসেবে চিনে এদেশের মানুষ, যাদের প্রতি করুণা কিংবা দয়াপরবশ হয়ে থাকে আমাদের সমাজের মানুষ, যাদের অধিকার আদায়ে এদেশে আছে অনেক সংগঠন ও সংস্থা, আর বাংলাদেশ সরকার তাদের তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে অনেক আগেই। তবুও সারাদেশে যেনো এই হিজরা নাম এক অজানা আতংক হয়েই আছে এখনো।
বাস, ট্রেন, জাহাজ সহ সকল পরিবহণ আর দোকান পাঠে তাদের চাদাবাজিতে যেনো অতিষ্ঠ দেশবাসী। তেমনি ময়মনসিংহে ইদানিং দেখা গিয়েছে হিজরাদের চাদাবাজি যাতে ক্রমশ অতিষ্ট হয়ে উঠছে শহরবাসী ও যাত্রী সকল। পবিত্র ইদুল ফিতর কে সামনে রেখে শহরে যেনো নতুন ভাবে শুরু হয়েছে তাদের চাদাবাজি, বিশেষ করে পরিবহণে তাদের চাদাবাজিতে অতিষ্ট যাত্রীরা।
ঢাকা হতে ছেড়ে আসা বিভিন্ন বাসে উঠে তারা যাত্রীদের থেকে টাকা দাবি করে এবং কেউ টাকা দিতে আপত্তি করলে তার সাথে শুরু করে অশ্লিলতা, চলে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দিয়ে উত্যক্ত করা, আবার কখনো অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালী করেতেও তারা দ্বিধান্বিত হয়না।
হিজরারা শহরে গ্রুপিং হয়ে পরিচালনা করে তাদের এউ চাদাবাজি শহরের বাইপাস এলাকা হতে বাস থামিয়ে একদল উঠে ব্রিজমুখি গাড়িতে, আবার একদল মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড হতে বাসে উঠে, আবার অন্য দল চুরখাই হতে উঠে, একদল উঠে ত্রিশাল হতে, এভাবেই ঢাকা হতে ছেড়ে আসা দূর পাল্লার গাড়িতে চালায় তাদের চাদাবাজি।
বাসের যাত্রীদের হেনস্তা করা ছাড়াও তারা ব্রিজমোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা কিংবা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করা মানুষদের সাথেও প্রকাশ করে তাদের উগ্রতা। পাশাপাশি ময়মনসিংহ স্টেশন এলাকার দোকানপাট ও ট্রেনের যাত্রীদের থেকে তারা চাদাবাজি করার পাশাপাশি স্টেশনে অপেক্ষারত যাত্রীদের থেকেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিমাণ টাকা দাবি করে থাকে, কেউ দিতে আপত্তি জানালেই তার উপর নেমে আসে যৌন হয়রানি সহ অশ্লিল সব অংগভংগি।
পরিবহণ ছাড়াও তারা শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এবং দোকানপাঠে নিয়মিত চাদাবাজি চালায়, যা কিনা শহরবাসির জন্য যেনো এক হঠাৎ উদয় হওয়া বিপদের নাম। শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত এই ময়মনসিংহের বিভিন্ন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরাও শিকার হচ্ছে এদের হাতে, অনেক কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এদের অশ্লিলতা দেখে শিখছে নোংরামি, আর শহরে চলাচল করা নারী পুরুষ কিংবা কখনো পরিবার নিয়ে বের হওয়া অনেকেই হচ্ছেন বিব্রত। শহরে ডিউটিরত পুলিশের সামনেই প্রকাশ্যে হিজড়ারা এভাবে চাঁদাবাজি ও অসভ্যতাতে লিপ্ত অথচ আইন কিংবা তাদের উপর খবরদারি করার মত যেনো কেউ ই নেই এই শহরে।
হিজড়াদের বিরুদ্ধে শহরবাসীর অভিযোগ থাকলেও তা কোথায় জানাবে কিংবা কার কাছে জানাবে তা জানেনা কেউ আর অভিযোগ জানালেও কি আধোও তার সমাধান হবে তা নিয়েও সংকিত হয়ে নিরব থাকে শহরবাসী যার ফলে ক্রমস আরাও বেপরোয়া হয়ে উঠছে এই চাদাবাজ শ্রেণীর হিজরা সম্প্রদায় ।
শহরে হিজরাদের চাদাবাজি নতুন কিছু নয় তবে ইদ কিংবা কোন উৎসব কে সামনে রেখে এরা তাদের ধান্ধায় যেনো একটু বেশীই মনোযোগ দেয়, তখন তাদের কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়, প্রকাশ্যেই কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে প্রকাশ করে গোপন অঙ্গ, এছাটাও চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে থুথু নিক্ষেপ, বিশেষ ভঙ্গিতে হাততালি দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে যা কিনা শহরে থাকা সভ্য মানুষের জন্য বিভ্রান্তির কারন হয়ে দাড়িয়েছে।
সাধারনত হিজড়াদের টাকা নেয়ার বিষয়টিকে অনেকে স্বাভাবিক মনে করে থাকেন। এটি নিয়ে কোনো মামলা বা জিডি করা হয় না। কিন্তু যাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছে কিংবা যারা তাদের এমন হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছেন তারা বুঝতে পারেন এর যন্ত্রণা কী, শহরে সবাই ভয় পায় এদের কেননা প্রচলিত আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যায় না।
ময়মনসিংহ শহরবাসি বিশেষ করে যাত্রী সাধারণ এখন এই হিজড়াদের নোংরা -অশ্লীল আচরণ, প্রকাশ্য এবং গোপন সকল ধরনের চাদাবাজি থেকে মুক্তি ও সন্মান জনক ভাবে নগরে বসবাস ও চলাফেরা করতে চায়, এর প্রতিকার করা যেনো এখন সময়ের এক অন্যতম দাবি।