ময়মনসিংহে পুলিশের অভিযানে ডাবল মার্ডার-মামলার আসামী গ্রেফতার

মোঃ আরিফ রববানী, ময়মনসিংহঃ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চুড়খাই এলাকার ডাবল মার্ডারের ঘটনায় জড়িত অন্যতম প্রধান দুই আসামীকে গ্রেফতার করেছে কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলো, জাহাবুব সরকার জাফর ও মাহাবুর। এর আগে এ হত্যাকান্ডে আরো চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই নিয়ে মামলার ৬আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

 

কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহ কামাল আকন্দের দিকনির্দেশনা মোতাবেক ইন্সপেক্টর অপারেশন ওয়াজেদ আলীর নেতৃত্বে তার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পৃথক অভিযান চালিয়ে খুলনা এবং ঢাকার বছিলা থেকে তাদের গ্রেফতার করেছে।

 

কোতোয়ালী মডেল থানার ইন্সপেক্টর অপারেশন ওয়াজেদ আলী বলেন, প্রাথামিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, গত বুধবার ১ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেলে ময়মনসিংহ সদরের ভাবখালী ইউনিয়নের চুরখাই এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে খুন হন আবুল খায়ের (৬০) ও তার ছেলে ফরহাদ হোসেন (২০)। নিজেদের কিছু জমি বিক্রি করায় তা মেপে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন আবুল খায়ের। কিন্তু সেখানে গিয়ে তার চাচাতো ভাই ট্রাক ড্রাইভার কামাল হোসেন এর নেতৃত্বে আসামী জাহাবুর ও মাহাবুরসহ তাদের লোকজন কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে খায়েরের ওপর হামলা করে। এতে আবুল খায়ের (৬০), তার ছেলে ফরহাদ হোসেন (২০), রিফাত হোসেন (২৪), আবুল কাশেমের ছেলে আবু সাঈদ (২২), আবদুল খালেকের ছেলে আবুল হাসেম (৪৭) আহত হন। পরে তাদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে চিকিৎসক আবুল খায়ের ও তার ছেলে ফরহাদ হোসেনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

 

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে রিফাত হোসেন বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালি মডেল থানায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শাহ কামাল আকন্দ স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে খুলনা এবং ঢাকার বছিলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান জড়িত সকল আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

 

ওসি শাহ কামাল আকন্দ বলেন, কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ সমাজের বিভিন্ন অপরাধের উৎস উদঘাটন, অপরাধীদের গ্রেফতার, আইন শৃংখলার সামগ্রিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য কোতোয়ালী মডেল থানা পুলিশ ফোর্সেস নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে থাকে। কোতোয়ালি মডেল থানা এলাকায় সংগঠিত হত্যা, মাদক, চুরি, ডাকাতি, অপহরণ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী,ওয়ারেন্টভুক্ত আসামীসহ সংগঠিত বিভিন্ন অপরাধ রুখে দিতে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ অভিযান আরও জোরদার করেছে।

 

তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, বুধবার জাহাবুব সরকার জাফরকে আদালতে পাঠানো হলে সে ১৬৪ ধারায় স্বিকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া মাহাবুরকে সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে কামাল উদ্দিন ওরফে কামাল ড্রাইভার আদালতে স্বিকারোক্তি মুলক জানবন্দি দিয়েছে।আলামত হিসাবে ঘটনায় ব্যবহৃত ধারালো সুইচ গিয়ার উদ্ধার করা হয়েছে।

 

এব্যাপারে বুধবার দুপুরে কোতোয়ালি মডেল থানা মিলনায়তনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিং এ কোতোয়ালী মডেল থানার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুল ইসলাম ফকির জানান- গত এক ফেব্রুয়ারি জমি মাপঝোককে কেন্দ্র করে জেলা সদরের চুরখাই এলাকায় পিতা-পুত্রকে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ সময় আরো চারজন গুরুতর হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল থানায় ৭ জনকে আসামী করে নিহতের ছেলে রিফাত বাদী হয়ে মামলা নং- ৬, তাং- ০৩/০২/২০২৩ ইং, ধারা-১৪৩/৪৪৭/৩০২/৩২৩/৩২৬/৩০৭/১১৪/৫০৬ (২)/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করে।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো বলেন, মামলাটি কোতোয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন ওয়াজেদ আলী তদন্ত করছেন। এর আগে কামাল উদ্দিন ওরফে কামাল ড্রাইভার, রিয়াদ, মোঃ নাইম হোসেন ও কামাল ড্রাইভারের স্ত্রী জাহানারাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা এর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিনুল ইসলাম ফকিরের তত্ত্ববধানে অফিসার ইনচার্জ শাহ কামাল আকন্দের তদারকিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত কর্মকর্তা মঙ্গলবার অভিযান পরিচালনা করে খুলনার সোনাডাঙ্গা থেকে জাহাবুব সরকার জাফর এবং ঢাকার মোহাম্মদপুর বছিলা বস্তি থেকে মাহাবুরকে গ্রেফতার করে। পরে তাদের দেখানো মতে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। ব্রিফিংকালে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফারুক হোসেন ও পুলিশ পরিদর্শক ওয়াজেদ আলী উপস্থিত ছিলেন।