ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্কঃ সুমন ও সুজন দুই ভাই।ভালই চলছিল তাদের পরিবার নিয়তির খেলায় বদলে যায় জীবনপথ। ভাঙারি ব্যবসায় ভালই করে আসছিল দুই ভাই। হঠাৎ একদিন দোকানে কাজের সময় এক দুর্ঘটনায় বড় ভাই সুমনের দুই চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এবং এক হাতের দুটো আঙুল ছাড়া অন্য আঙুলগুলোও কাটা পড়ে। এই দূর্ঘটনার পরেই বাবা হারা হন সুমন ও সুজন দুভাই।আঘাতের পর আঘাত যেন আকড়ে ধরেছিল তাদের। গত (১৮ এপ্রিল) ময়মনসিংহে এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় ছোট ভাই সুজন।এটাই ভাগ্যের পরিহাস আর এত ঘটনার পর আল্লাহ কি রখেছে তাই দেখার বাকি ছিল।
বড় ভাই সুমনের চার বছর বয়সী এক সন্তান আছে। তাদের বাবা ও ছোট ভাই সুজন মারা যাওয়ার পর পরিবারটিতে এখন সুমন একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। কিন্তু চোখ আর হাতের কারণে সেও অক্ষম প্রায়।কিন্তু তাকেই নিতে হবে সব কিছুর ভার। ভাঙারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের দেখভাল করতে হবে সুমনকেই। তাই সুমন ও সুজনের খালা সালেহা বেগমের উদ্যোগেই সুজনের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে সুমনের চোখে।সুজন মারা গেলে রাতেই তাঁর লাশসহ ঢাকায় নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির সহায়তায় সুজনের কর্নিয়া সংগ্রহ করার পর লাশ ময়মনসিংহে ফেরত নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা।
জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক (কর্নিয়া) মো. আবদুল কাদেরের পরামর্শে খালা সালেহা বেগম সুজনের মৃত্যুর ৬–৭ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর মরদেহ ঢাকায় নিয়ে আসেন। সঙ্গে সুজনকেও আনেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে লকডাউন থাকায় তাঁদের লাশ ঢাকায় আনতে হয়। অন্য সময় সন্ধানীর দল চলে যায় লাশের কাছে।
আর দুর্ঘটনার পরদিন জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সুমনের চোখে সুজনের কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। সুমন এখন ছোট ভাইয়ের চোখে পৃথিবীর আলো দেখবেন। সুমন বললেন, ছোট ভাই মারা গেছে, তারপরও ভাইয়ের চোখ দিয়ে যদি দেখতে পাই, তা–ই আমার জন্য বড় পাওয়া হবে। আমার দুর্ঘটনার পর ভাইই আমার চিকিৎসার জন্য দৌড়াইছে বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
চিকিৎসক আবদুল কাদের জানান, সুমন চার থেকে ছয় মাস পরে ভালোভাবে দেখতে পাবেন। সুমনের চোখের ছানিও অস্ত্রোপচার করতে হবে। সুজনের একটি কর্নিয়া সুমনের চোখে এবং আরেকটি কর্নিয়া অন্য এক ব্যক্তির চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। মরণোত্তর চক্ষুদানের ক্ষেত্রে সাধারণত দাতা ও গ্রহীতার পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। তবে সুমন ও সুজনের ঘটনাটি একটি উদাহরণের সৃষ্টি করেছে।