ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের ডিডি নামে ৭ জিডি, আছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও

মামুন মাহমুদ
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ - পরিচালক ( প্রশাসন অর্থ ) মামুন মাহমুদ

স্টাফ রিপোর্টার : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপ – পরিচালক ( প্রশাসন অর্থ ) মামুন মাহমুদের নামে রাজধানীর ৭ টি থানায় জিডি দায়ের করা আছে । সিন্ডিকেট গঠন করে নিয়োগ, বদলি বাণিজ্য ছাড়াও নানাভাবে টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। তাকে টাকা দিয়ে  চাকরি না পেয়ে দিশেহারা অনেকেই । টাকা চাইতে গিয়ে হত্যার হুমকি ও লাঞ্চিত হয়ে জিডি করতে বাধ্য হয়েছেন ভুক্তভোগীদের কেউ কেউ।

 ভুক্তভোগীদের একজন শারমিন সুলতানা । নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মাহতাব মৃধার মেয়ে । ২০১৬ সালের নভেম্বরে তাকে চাকুরি দেয়ার কথা বলে নগত ১৫ লাখ টাকা নেন মামুন মাহমুদ । সেই সুবাদে বিভিন্ন সময় পছন্দের জায়গায় নিয়ে গিয়ে যৌন হয়রানি করেন । তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং প্রতিকার চেয়ে ২০১৬ সালে ৭ নভেম্বর এ ঘটনায়  ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন  শারমিন সুলতানা। অভিযোগ রয়েছে, তদন্তাধীন এই অভিযোগের ফাইল কৌশলে গায়েব করে দিয়েছেন মামুন মাহমুদ ও তদন্তকারী কর্মকর্তাগন ।

অভিযোগ ভুক্তভোগী নাসির ফকিরেরও। শাহজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন । নং- ১৩৮৯ তাং- ৩১/১২/২০১৫ । অভিযোগ ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর মামুন মাহমুদ উপ- সহকারি পরিচালক থাকাকালে । নাসির ফকিরের ৩ বছর বয়সী পুত্রের মৃত্যু হয় । সেসময় তিনি শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনীতে বসবাস করতেন । শিশু মত্যৃুর ঘটনায় থানা পুলিশ ইউডি মামলা করে । শিশু মৃত্যুর জন্য মামুন মাহমুদকে দায়ি করা হলে প্রাণনাশের হুমকি দেন এবং শারীরিক নির্যাতন করেন ।

 এঘটনায় মামুন মাহমুদসহ কয়েকজনের নামে থানায় জিডি করেন নাসির ফকির । ভুক্তভোগী এম মোর্শেদ জিডি করেছেন রমনা মডেল থানায়  । ২০১৮ সালে দায়েরকৃত জিডি নং- ২১২৮ । সেসময়  তিনি উপ – পরিচালক ছিলেন । জিডির ৩নং আসামি করা হয় তাকে । গতিরোধ করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার প্রেক্ষিতে । সেসময় নিয়োগের নামে টাকা নেন । ফেরৎ চাওয়ায় হুমকি দেন । সিন্ডিকেটের সদস্য মিলে কমপক্ষে ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি করে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এম মোর্শেদ মতিঝিল থানায় জিডি করেন । জিডিতে  বিবাদী আব্দুস সালাম পরিচালক, ফরিদ উদ্দিন উপ – পরিচালকসহ মামুন মাহমদ, সিনিয়র স্টেশন অফিসার শাহজাহান সিকদারসহ ৯ জনের নামে দায়েরকৃত জিডি তদন্ত হয়েছে ।

 নাজমা খাতুন পুষ্পিতা আরেক ভুক্তভোগী । তিনি মামুন মাহমুদের নামে রমনা থানায় জিডি  করেছেন । জিডি নং- ১৩২৭ তাং- ১৮-৪-১৪।  উচ্চ আদালতে   জনস্বার্থে রিট পিটিশন নং- ৩৩৭২- ২০১৪ মামলা করেন আরো কয়েকজন ভুক্তভোগী।

বিবাদী করেন মামুন মাহমুদসহ কয়েকজনকে । এই মামলা প্রত্যাহার করার হুমকি দেয়ায় তিনি রমনা থানায় জিডিও করেন । জনৈক মোজাম্মেল হক ২০১২ সালে সূত্রাপুর থানায় তার নামে জিডি করেন । নং- ১৪১৬ । তাকে হয়রানি করতেন তিনি ও তার সিন্ডিকেট সদস্যরা । গুম করারও হুমকি দেন । তার কবল থেকে বাঁচতে জিডি করেন মোজাম্মেল হক । মামলা নং- ২০৪-১৬ প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তৎপ্রেক্ষিতে বংশাল থানা ওসিকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত বিজ্ঞ জেলা ম্যজিস্ট্রেট আদালত । ঢাকার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ একাধিক মামলাও রয়েছে তার নামে এমন কথা জানান আরও অনেকেই । এসব কর্মকান্ড নিয়ে জাতীয় দৈনিকে একাধিক সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় । ব্যাপক প্রচার থাকার পরও তার ও তার সিন্ডেকেট সদস্যদের কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অদৃশ্য কারনে ।  দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে ঢাকাতেই কর্মরত রয়েছেন তিনি ।

 সিন্ডিকেট করে এই দীর্ঘ সময় ধরে নিয়োগ বদলীসহ নানান কাজ করে যাচ্ছেন । প্রতিবাদ করলেই হুমকির শিকার হতে হয় ভুক্তভোগীদের । এভাবেই শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন মামুন মাহমুদ ও তার সিন্ডেকেট সদস্যরা । মামলা ও একাদিক জিডি থাকার পরেও তার হয়েছে প্রমোশন । আবার টাকা দেয়ার পর চাকরি না হলেও ভুক্তভোগী ঘাপটি চুপটি মেরে বসে থাকতে হয় । প্রতিবাদ করলেই বিপদ । হামলা হুমকি আর হয়রানির শিকার হতে হয় ।

 অনেক ভুক্তভোগী ভয়ে মুখ খুলতে নারাজ । ভুক্তভোগী শারমিন সুলতানা বলেন, মামুন সাহেব আমার জীবনটা শেষ করে দেয়, আজ আমি পথে বসেছি। দেনা  আমার পিছু ছাড়ছে না।   ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অধিদপ্তরের   উপ-পরিচালক মামুন মাহমুদের কাছে সংবাদের সত্যতা জানতে  ফোন করলে তিনি বলেন, আমি সময় নিয়ে আপনাদের সাথে একটু বসতে চাই , আপনার সাথে দেখা করতে চাই। এক কাপ চা খেয়ে সব বলবো।