স্টাফ রিপোর্টার:ঘাটাইলের সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি বই বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ বিদ্যালয়ে যেসব পুরানো বই আছে সেগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন। অথচ ব্যতিক্রম সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রহমত উল্লাহ।
তিনি বই সংরক্ষণ না করে স্কুল গোডাউনে রাখা লক্ষাধিক টাকার সরকারি বই ৩০ মে সকালে স্কুলের দুইজন শিক্ষক ও দুইজন কর্মচারীকে সঙ্গে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছেন। এর আগেও তিনি এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছেন। এ ছাড়াও ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচনে ব্লাকমেইলিং এর মাধ্যমে কমিটি গঠন করেন প্রধান শিক্ষক। এছাড়াও অতিরিক্ত ফি আদায়, নিয়মবহির্ভূত ভাবে প্রতিটি এডমিট কার্ডের বিপরীতে ৫শ টাকা,বিদায় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে ছাত্রী ছাত্রীদের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করে থাকেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা রহমত উল্লাহ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৩০ মে( মঙ্গলবার) সকাল ৯ টার দিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহমত উল্লাহ, গণিতের শিক্ষক আব্দুর রশিদ। এছাড়াও পিয়ন ও নৈশ প্রহরী( নিয়োগ পাননি) হাসিবুল, মজনু, বিদ্যালয়ের সভাপতির সহকারী মাসুম উপস্থিত ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে একটি বড় পিকআপসহ আরও কিছু লোক স্কুলে প্রবেশ করেন। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে কর্মচারীগণ গোডাউনে ঢুকে সেখানে রাখা সব বই পিকআপে তুলে দেয়। যার আনুমানিক মূল্য লক্ষাধিক টাকা। বই বহনকারী পিক-আপের নাম্বার – ঢাকা মেট্রো- ন ১৫-৫৯৯৭। সচেতন সমাজ মনে করেন, উল্লেখিত নাম্বারকৃত পি-আপের মালিককে খোঁজে বের করে এবং তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিক্রয় করা বইগুলো উদ্ধার পূর্বক বই বিক্রির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন কতৃপক্ষ।
বিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই গোডাউনে ২০২২ ও ২০২৩ সালের নতুন বই সংরক্ষিত ছিল। গত বছরও প্রধান শিক্ষক একইভাবে বই বিক্রি করে দেন। এটা তার কাছে নতুন নয়। প্রকাশ্যে শিক্ষকগণ প্রতিবাদ করলে হুমকি প্রদানের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগও করেন প্রধান শিক্ষক। পরবর্তীতে সরকারী নির্দেশনা ছাড়াই কমিটির মাধ্যমে বেতন বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। তাই সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলতে রাজি হয়না।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর প্রধান শিক্ষক প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বইয়ের চাহিদা দিয়ে গোপনে বই বিক্রি করেন। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষক প্রতিনিয়ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন এবং ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য গালাগালি করেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) রহমত উল্লাহ বলেন, এখানে বই ছিলনা। কিছু কাগজ ছিল সেগুলো বিক্রয় করা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আলহাজ্ব এস্কান্দার জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনেছি। আর একটি গ্রুপ প্রতিনিয়ত আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আসছে। এটা তারই অংশ। তবে বই বিক্রির বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।
এবিষয়ে লক্ষিন্দর ইউপি চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, পিক-আপে করে বই বিক্রির বিষয়ে আমাকে ফোনে জানানোর পর বিষয়টি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস এবং ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করি। আর মানুষ গড়ার কারিগর একজন শিক্ষক যদি বই বিক্রি করতে পারে তাহলে তারা আর কত নিচে নামতে পারে চিন্তা করেন। এর আগে এমপিও ভুক্ত ২ জন শিক্ষকের বেতন বন্ধ করে ব্লাকমেইলিং এর মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত শিক্ষকদের বেতন ছাড়বে মর্মে ঘুষ চাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহমত উল্লাহ পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস্ব করে দিচ্ছেন। যথাযথ কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের সরকারি বই বিক্রির কোনো আইন নেই। লক্ষিন্দর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছেন। সাগরদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) রহমত উল্লাহ আমার অফিসে এসেছে তার কাছে বিষয়টি শুনব। পাশাপাশি একজন অভিযোগের তদন্তের জন্য একজন অফিসার পাঠাচ্ছি। তদন্ত প্রমানিত হলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বরাবর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনিয়া চৌধুরীর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।