এই নৌকা সেই নৌকা নয় উপজেলা নির্বাচনে বলেছিলেন -নবী নেওয়াজ

অনুসন্ধান (ময়মনসিংহ প্রতিনিধি) আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারী ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভা নির্বাচন। দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই  প্রার্থীদের অতীত কর্মজীবনি নিয়ে চলেছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা। ত্রিশাল পৌরসভায়  একজন মেয়র প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ার পর বাকী আরো ৪জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন।তার মধ্যে তিনজন দলীয় প্রার্থী এবং  একজন স্বতন্ত্র। এর মাঝে আলোচনায় রয়েছেন  দুই প্রার্থী এক জন নৌকা প্রতিক নিয়ে নবী নেওয়াজ সরকার  আর অন্য জন জগ প্রতিক নিয়ে বর্তমান মেয়র এ বি এম আনিছুজ্জামান ।বিএনপি থেকে রুবায়েত হোসেন শামীম ( ধানের শীষ ) এবং ইসলামি আন্দোলন  বাংলাদেশের আবুল হাসান  (হাতাপাখা)। আলোচনায় ধানের শীষ এবং হাতাপাখা প্রর্থীর নাম তেমনটা শুনা না গেলেও নিরবে তাদের প্রচারণা ঠিকিই চলছে।

ত্রিশাল একটি শান্ত শান্তিপূর্ণ উপজেলা তার প্রাণকেন্দ্র ত্রিশাল পৌরসভা । এই পৌরসভা একসময় বিএনপির ঘাটি ছিল। সেই বিএনপির ঘাটি দখল করে আওয়ামীলীগের ঘাটি তৈরী করেছিলেন মেয়র আনিছ। সে থেকেই এক চিটিয়া ভাবে এটাকে আওয়ামী লিগের ঘাটি বলা হয়।কিন্তু নির্বাচনী সময় এর রুপ কিছুটা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হয়। এতে সাধারন জনগণের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে যা ঘটে তা মানুষের ভিতরে এক রকম ভীতি কাজ করে। কারণ ভালো লোক, ভালো কাজ, ভালো জনপ্রিয়তা থাকার পর যখন অপাত্রে মধু ঢালা হয় তখন স্বাভাবিক ভাবেই মানুষে ভেতর প্রশ্নের জন্ম হয়। বিগত উপজেলা নির্বাচন সত্যই মানুষের মাঝে প্রশ্ন রেখে গেছে। তার উত্তর এখন খুজছেত্রিশালের সাধারন মানুষ।

 

মেয়র আনিছুজ্জামান ও নবী নেওয়াজ সরকার দুই প্রার্থীর মধ্যে প্রার্থক্য অনেক কিন্তু মূল সমস্যা এক জন দলের থেকে মনোনয়ন নিয়েছেন ( নৌকা )। অন্যজন বর্তমান মেয়র আনিছুজ্জামান যিনি রাজনীতির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দল থেকে নিলেও পৌরসভার  জনগণের মতামতে এবার স্বতন্ত্র থেকে (জগ) প্রতিক নিয়ে মেয়র প্রার্থী।

 গত নির্বাচনে বর্তমান মেয়র আনিছুজ্জামান জনগনের বিপুল ভোটে জয় লাভ করে দ্বিতীয় বারের মত মেয়র হন। মূলত প্রথম বার দলীয় সম্মতিতে মেয়র হবার পর তার নানা মুখী উন্নয়ন জনগনের পাশে থেকে তার মেধার বহিঃ প্রকাশের মাধ্যমে পৌরসভাকে ৩য় স্তর থেকে ১ম সারিতে নিয়ে আসেন।তার পর শুরু হয় একের পর এক  উন্নয়ন যা সত্যই অবাক করেছিল পৌরবাসীকে।দিনের পর দিন সময় কাটতে থাকে আর উন্নয়নের সাথে পৌরবাসীর ভালবাসা আকড়ে ধরে তাকে। একজন সফল মেয়র হিসাবে জনগনের কাছে আস্তাভাজন হয়ে যান। কিন্তু রাজনৌতিক কুচক্রীমহলে তার জনপ্রিয়তা যেন কাল হয়ে যায়।

২য় বার যখন নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন চান তার আগেই সেই কুচক্রীমহল দলীয় প্রধানের কানে ভূল তথ্য দিয়ে তার মনোনয়ন বাতিল করে, এক অপাত্রকে মহান নৌকার দ্বায়িত্ব দেন। যা পৌরবাসী মেনে নিতে পারেনি।ভারাক্রান্ত মনে যখন বাড়ি ফেরেন আনিছুজ্জামান তখন বাড়ি ভর্তি মানুষ এক কথায় সবাই যখন বলে কি হলো  তিনি বলে ছিলেন নেত্রীর কাছে হয়ত আমি যোগ্য না তাই আমাকে মনোনয়ন দেয়নি। আপনারা বাড়ি ফিরে যান আমার জন্য আপনারা এত সময় বসে ছিলেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।

এ কথা বাইরে আসার সাথে সাথে তার বাড়ি এক রকম ঘেরাও করে ফেলে পৌরবাসী তাদের দাবি স্বতন্ত্র হলেও নির্বাচন করতে হবে।তাদের সাথে যোগ হয় আওয়ামীলীগের অনেক ত্যাগী নেতারা যারা দলের ভেতর জীবন কাটিয়েছে কিন্তু মূল্যায়ন পায়নি। তারা এক দাবিতে নিজ উদ্যোগে নিজেদের ভালবাসার মানুষটিকে নির্বাচন করতে বাধ্য করে।  এবং বিপুল ভোটে জয়ী হন মেয়র আনিছ।আর দলের কাছে হয়ে যান বিদ্রোহী।  আমরা যারা সাধারণ পৌরবাসী মনে করি এটা মেয়র আনিছের কোন ভূল সিদ্ধান্ত ছিল না এটা আওয়ামিলীগের নীতিনির্ধারণী কর্তাদের অরাজনৈতিকতার ফল ছিল। যাই হউক শত আলোচনা আর সমালোচনার পরেও উন্নয়ন আর পৌরবাসীর সাথে উনমুক্ত আলোচনায় নিজেকে যোগ্যতার চরম শিখরে নিয়েগেছেন।জয়ের পর মানুষের ভালবাসার মূল্য দিতে গিয়ে উন্নয়েনর গতি এতটাই বৃদ্ধি করেন যে পৌরসভার শতভাগ কাজের মধ্যে আশি ভাগ কাজ শেষ করেন। পেয়েছন জেলার শ্রেষ্ঠ মেয়রের খেতাব। বর্তমান নির্বাচনী জনমত জরিপে তিনি সবথেকে এগিয়ে।

 

এখন জনগণের কাঙ্ক্ষিত প্রশ্নের জবাব, কি ভাবে নবী নেওয়াজ সরকার বিদ্রোহী আর বিদ্রোহী হলে কিভাবে তিনি নৌকার মনোনয়ন পেলেন ?

আসুন এবার দেখে নেই কি কেন কিভাবের এই পর্বেঃ বৃহঃত্তর ময়মনসিংহের একটি মাত্র অঞ্চল যেখান থেকে রাজনৈতি শেখার কোন ভাল স্কুল নেই তবে  ভাল কিছুকে নষ্টে পরিণত করার অনেক যন্ত্র এখানে বিদ্যমান। রাজনৈতিক কালো থাবায় যেমন সাধারণ জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে উন্নয়ন আর অধিকার থেকে তেমনি নীতি ভ্রষ্ট হচ্ছে রজনৈতিক নেতারা আর সরকার পড়ছে জনগণের রোষানলে।

এখানে বিস্তর আলোচনা করার মত পরিবেশ নেই তাই সরাসরি মূল বিষয়ে আলোকপাত করি , ত্রিশালে সংসদ নির্বাচন থেকে ইউপি নির্বাচন পর্যন্ত সকল নির্বাচনে কিছুনা কিছু কথা রয়েই গেছে । কিন্তু সব কথা বলতে মানা কিন্তু পরিবেশটা এমন এক পর্যায়ে এসে পৌছেছে যে কিছু কথা না বললেই নয়।

গত উপজেলা নির্বাচনকে নিয়ে এখনো মানুষের ধোয়াশা কাটেনি। সেই নির্বাচনে আওয়ামিলীগ থেকে মনোনয়ন পান তরুণ রাজনীতিবিদ মোঃ ইকবাল হোসেন । সব ঠিক ছিল শুধু ঠিক ছিল না ত্রিশাল আওয়ামিলীগ, ভেতরে থাকা অন্ধকার  যেন গ্রাস করতে শরু করে তার চার পাশ। বিদ্রোহী সূরে গান ধরেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সাহ বেশীরভাগ সিনিয়ার নেতারা । তাদের মধ্যে আওয়ামিলীগ থেকে মনোনিত বর্তমান  পৌরমেয়র পদপ্রার্থীর ভূমিকা অনেকটাই না ভূলার মত। উনার একটা বক্তব্যই মানুষের ভেতর নানাপ্রশ্নর জন্ম দিয়েছিল এবং এখনো দিচ্ছে উপজেলা নির্বাচনে সরকারি নজরুল কলেজ মাঠে এক বক্তব্যে বলেছিলেন – এই নৌকা সেই নৌকা নয় এটা ডিঙ্গী নৌকা । আর এই বক্তব্যের পর নৌকার ভরাডুবি সম্ভাবনার  শত ভাগে নিয়ে আসে।যা হাজার হাজার মানুষ শুনেছিল সেদিন।এবং সাধারণ নৌকার কর্মী সমর্থক  তাদের কথায় নৌকার ভোট বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনারসে দিয়েছে।

আজকে ত্রিশাল পৌরসভা উপজেলার চেয়ে ছোট এলাকা, ছোট পদ এখানে নৌকার প্রতীক নিয়ে  যখন ভোট চাচ্ছেন ঠিক এই সময় নবী নেওয়াজ সরকারের  পিছনের কথা গুলো সামনে চলে আসছে। সাধারণ জনগন তার কথামত বলতে শুরু করেছে এই নৌকা সেই নৌকা নয় এটা ডিঙ্গী নৌকা। এখনো তার কথা তার সেই সময়ের প্রকাশিত ছবি ভিডিও গুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যমান।আর এভাবেই তিনি বিদ্রোহীর সহচর হিসাবে বিদ্রোহী। তিনি এখনো বলে বেড়াচ্ছেন তার জীবনে কারো ক্ষতি তিনি করেননি কিন্তু প্রশ্ন করো ক্ষতি আপনি করেননি তবে এখন একই মঞ্চে বসা ইকবালের ক্ষতিটা করল কে? এটা আমাদের কথা নয় এটা সাধারণ আওয়ামীলীগের যারা সমর্থক তাদের প্রশ্ন।আমরা প্রশ্ন করবো নির্বাচনের পর। কারণ ত্রিশালের সংবিধানে আরো এক বিদ্রোহীর নাম লেখা থাকবে আগামী প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।ত্রিশালের আওয়ামীলিগের রাজনীতির বয়সে বিদ্রোহীর লিস্ট এই প্রথম অনেক লম্বা ।যা প্রকাশ করলে কজন টিকে তা আল্লাহই ভালো যানে।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে ঘিড়ে যেভাবে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলার নেতারা  অবস্থান নিয়েছে  তাতে অনেকের মনে নির্বাচন সুষ্টুতা নিয়ে প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে।  ত্রিশাল পৌরসভায় আওয়ামীলীগের বিশাল জনগোষ্ঠী আবার তাকিয়ে রয়েছেন দলের প্রধান শেখ হাসিনার দিকে নির্বাচন সুষ্ঠ হওয়ার বিষয়ে। ঐদিকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী নবী নেওয়াজ সরকারের স্বচ্ছতা  নিয়েও  প্রশ্ন উঠছে।  তিনি মনোনয়ন পেয়ে শুরুতেই এক বক্তব্যে বলেছেন,   নৌকার প্রতীক  তার উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই চাপিয়ে দেওয়া নৌকা জয়ী হয়ে কতটুকু নৌকার মানুষের পক্ষে কাজ করবেন সেটাও জনগনের মনে সন্দেহ তীরে আক্রান্ত । কারণ তিনিত সুযোগ বুঝে বলে ফেলতে পারেন এই নৌকা সেই নৌকা না এটা ছিল চাপিয়ে দেওয়ার নৌকা । আবার স্থানীয় এক পত্রিকায় এসেছে ত্রিশাল এখন নৌকার দখলে।এমন খবরে জনগণ ভাবতে শুরু করেছে ভোট সত্যই সুষ্ট হবেকি?

অতীতের ঘটনাকে অনুস্বরণ করে  ত্রিশালের পৌর জনতা একজন দক্ষ জনপ্রিয় পৌরসভা উন্নয়নের রূপকার মেয়রকে ছেড়ে অন্যকারো কাছে যেতে রাজী নয়।  ত্রিশাল উপজেলা নির্বাচনে নবী নেওয়াজ সরকারের কথা জনগন প্রমান পেয়েছে জয়ী হতে পারলে ঘরের ছেলে ঘরে ফিড়ে আসে। তাই তার সুরের সাথে সুর মিলাচ্ছেন সাধারণ আওয়ামীলীগের জনগোষ্ঠী। কেননা সেইদিন উপজেলায় সবচেয়ে বেশী নৌকার বিপক্ষে কথা বলেছেন নবী নেওয়াজ সরকার, সবচেয়ে বেশী বক্তব্য দিয়ে নৌকা ভরাডুবি করিয়েছেন নবী নেওয়াজ সরকার,  আনারস প্রতীকের  জয়ের মালা তার গলে পড়তে দেখা গেছে।  আজ তার বিরোদ্ধে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তার কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে নৌকা  তাই জনগন চাচ্ছে স্বতন্ত্র হউক আওয়ামীলীগের  লোক জয় হবে। জয় হলে দলেরই সুনাম আসবে  দল থেকে সাধারণ ক্ষমা আসবে এবং দলীয় মঞ্চে দল করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তাই দলের লোকের পক্ষেই কাজ করে  জয়ী করাটাই বৃদ্ধিমানের কাজ হবে। কারো কথা শুনবো না মেয়র আনিছকে ভুলবো না।

আসিতেছে নতুন চমক আগামী প্রকাশনায় অতীতের নির্বাচন গুলোতে কে কখন স্বতন্ত্রের মঞ্চে। তার সাথে দলে থাকা বিদ্রোহীদের লিস্ট তো থাকছেই।