ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ময়মনসিংহের তারাকান্দায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত পরিদর্শন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজাবে রহমত।
সেই ধারাবাহিকতায় ৪ঠা জুন উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ফরিদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও বৃক্ষরোপন করেন ইউএনও মিজাবে রহমত।
সুত্র মতে-গত ২০২১সালের এপ্রিল মাসের ২৬ তারিখে ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর থেকে এ উপজেলায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে একের পর এক উদ্যোগ নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে চলেছেন ইউএনও।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি নিজস্ব চিন্তাধারায় বাস্তবায়ন করে সফলতা অর্জন করেছেন। তাছাড়া সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে নিরলসভাবে কাজ করছেন ইউএনও ।
‘মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করি, মেধাসম্পন্ন জাতি গড়ার প্রাথমিক সোপান গড়ি- এই স্লোগানকে সামনে রেখে দিন-রাত নানা কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে ইউএনও মিজাবে রহমত। তিনি বলেন, ছোট্ট সোনামণিদের মধ্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার বীজটি বপন করে সঠিক পরিচর্যা করা গেলে তাদের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে আগামী দিনের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বড় কর্মকর্তা তথা মেধাসম্পন্ন নাগরিক। সে জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের মেধাবী হিসাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
তারাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজাবে রহমত স্যার উপজেলায় ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মুখে তাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও তাদের আত্মপ্রত্যয়ী কথা শুনেন। সেই সঙ্গে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে কি করা যায় সেই ব্যবস্থা নেন।
তাছাড়াও উপজেলার ১৪৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ার কাজ শুরু করেছেন তিনি। সরকারি কর্মসূচির আলোকে এবং নিজস্ব চিন্তাধারা নিয়ে একের পর এক বিদ্যালয় পরিদর্শন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতে থাকে সভা সমাবেশ কর্মকাণ্ড। বিদ্যালয়গুলোতে মিড-ডে-মিল চালু এবং তা সচল রাখতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে টিফিন বক্স বিতরণ শুরু করেছেন। এতে অল্প দিনে শিশুরা পাঠে অধিকতর মনযোগী হয়ে উঠে এবং ঝরে পড়ার সংখ্যা হ্রাস পায়। শিশুদের স্কুল রঙিন করণে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিকক্ষ আকর্ষণীয় করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। অভিভাবক ও শিক্ষক পরস্পরের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের জন্য নিয়মিত অভিজ্ঞতা বিনিময় সভার আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিজাবে রহমত।
শিক্ষকদের প্রতিটি মাসিক সভায় স্ব-শরীরে উপস্থিত থেকে শিক্ষকদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষায় উৎসাহ প্রদান, শিক্ষকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন, শিশুদের বুদ্ধিমত্তা যথাযথভাবে বিকশিত হয়েছে কিনা তা নিয়মিত যাচাইপূর্বক ‘বুদ্ধিমত্তা উৎসাহ স্মারক’ প্রদান, তাদের সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোতে তাদের প্রাধান্য দিয়ে যাচ্ছেন।
৩৩তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা শিশুদের কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটাতে আয়োজন করেছেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। এছাড়া শিশু শিক্ষার্থীদের মনকে নির্মল ও সতেজ রাখতে বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় ফুল বাগান তৈরিতে উৎসাহ প্রদানসহ শ্রেণি কক্ষে মনোমুগ্ধকর আনন্দঘন পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য পাঠ দানে আকর্ষনীয় উপকরণ ব্যবহারপূর্বক শাস্তি পরিহার করে শিশুদের স্নেহ-ভালবাসার মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করাসহ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর প্রতি গুরুত্বদানে শিক্ষকদের নিয়মিত উৎসাহ প্রদান করে যাচ্ছেন। মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষার বিষয়ে সকলকে ব্যাপকভাবে অবহিত করছেন। স্থানীয় জনগণ, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রাথমিক স্তর হতেই ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে ভিত্তি তৈরিতে বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার এবং মুক্তিযুদ্ধ কর্নার স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় প্রাপ্ত বরাদ্দের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতে নিয়মিত মনিটরিং করে ভৌত ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হচ্ছে।
শিশুদের মানসিক বিকাশ সাধনে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণসহ খেলাধুলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃক্ষ রোপন করছেন করেছেন ইউএনও।
বৈরি আবহাওয়াতেও বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ‘রোদ বৃষ্টিতে ভয় নাই; সময়মত স্কুলে যাই’ শীর্ষক স্লোগানে শিক্ষার্থীদের মাঝে ছাতা বিতরণ করা এবং পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণ হিসেবে স্কুল ড্রেস, খাতা, কলম, স্কুল ব্যাগ ইত্যাদি বিতরণ করা হয় তারাকান্দা উপজেলায়।
‘শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ‘অভিযোগ বক্স’ স্থাপনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। শিশু ও কিশোরী মেয়েদের মানসিক শক্তিতে বলীয়ান করতে আয়োজন করা হয় ফুটবল টুর্নামেন্টের।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় শিক্ষার্থীর ভাল ও মানসম্মত ফলাফল নিশ্চিত করতে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকদের ডাটাবেজ প্রস্তুতপূর্বক তাদের সাথে মোবাইল ফোনে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে উৎসাহিত করা হয়।
ইউএনও মিজাবে রহমত মনে করেন, সরকারের মাঠ প্রশাসনের এই পদটি যেহেতু বদলি জনিত। সে কারণে তাকেও হয়তো অন্যত্র চলে যেতে হবে। তবে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে তিনি যে সকল কর্মকাণ্ড ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করেছেন এবং যে সকল কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে- এসব এগিয়ে নিলে সত্যিকার অর্থেই আগামী প্রজন্ম মেধাবী হবে।