নুরুল আমীন:: ময়মনসিংহ ত্রিশালের ধলা সরকারি ভবঘুরে আশ্রমে এতিম শিশুদের মানবেতর জীবনযাপন শিরোনামে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মঙ্গলবার ০৬ জুলাই ২০২১ একটি প্রতিবেদন ভাইরাল হলে স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসেন। বুধবার ০৭ জুলাই ২০২১ সকালে বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ।
নিউজের সূত্র ধরে র্যাব-১৪ এর গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন। খবর পেয়ে সহকর্মীদের বাঁচাতে সমাজসেবা অধিদপ্তর ময়মনসিংহ বিভাগীয় উপপরিচালক ওয়ালিউল্লাহ দ্রুত আশ্রমে ছুটে আসেন। দীর্ঘদিন যাবৎ আশ্রমে চলা দূর্নীতি-অনিয়মে এতিম শিশুদের মানবেতর জীবনযাপন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি চরম আকার ধারণ করেছে। এসব এতিম শিশুদের দৈন্যদশায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ বাদল সহ সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
পরিদর্শনের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে অনুভূতি ভ্যক্ত করে এক কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন – এরা কি মানুষ! এরা কি মরবে না! এই এতিম শিশুদের খাবার এরা কিভাবে খায়। এরা অমানুষ এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। আপনারা যে নিউজ করেছেন বাস্তবতা আরও অনেক ভয়াবহ। ২৫৪ জন ভবঘুরে এতিম ও ২৭ জন পাগল শিশু সহ সর্বমোট ২৮১ জন আশ্রমের বাসিন্দার বিপরীতে ১জন সহকারি ব্যবস্থাপক সহ ২৭জন কর্র্র্মকর্তা-কর্মচারি থাকলেও ১জন শিক্ষক সহ ৫জন কর্মচারি রয়েছে। যারা দায়িত্বে আছেন তারাও নাম মাত্র অফিসে সপ্তাহে ১দিন হাজিরা দিয়ে ভাতাদি উত্তোলন করেন । দুইজন নিরাপত্তা প্রহরী ও উপজেলা আনসার ভিডিপি অফিসের কয়েক জন প্রহরী দিয়ে চলছে ১৮একরের প্রাচীন জমিদার বাড়ির উপর নির্মিত এই সরকারি আশ্রয়ন প্রকল্পটি ।
উপজেলা কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক (এডি) রাস্তা খারাপ যাতায়াতে অসুবিধা এমন অজুহাতে গত ৮মাসে ধলা আশ্রয় কেন্দ্রে সর্বোচ্চ ১৫দিন অফিস করলেও সমস্যা নিরসনে কোন উদ্যোগ নিতে পারে নি। পোশাক বিহীন অপরিচ্ছন্ন অপরিষ্কার জীবনযাপনে চর্মরোগ সহ নানা শারীরিক ও মানসিক জটিলতায় ভুগছে আশ্রমের অভুক্ত এতিম শিশুরা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপে দোষীদের আইনের আওতায় দ্রষ্টান্তমূলক শাস্তির এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসন ও এতিম শিশুদের ভবিষ্যত ভাগ্য উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে মনে করেন সুশীল সমাজ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মহোদয়ের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি লিখিতভাবে প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রেরণ করবেন বলে জানায়।