ময়মনসিংহে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বচক্ষে অবলোকনে আসছেন প্রধানমন্ত্রী

আরিফ রববানী,ময়মনসিংহঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ময়মনসিংহ। আগামী ১১ মার্চ শহরের সার্কিট হাউস ময়দানে জনসভায় ভাষণ দেবেন তিনি। এর আগে ২০১৮ সালের ২ নভেম্বর একই স্থানে সমাবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে চার বছর পর এবার বদলে যাওয়া ময়মনসিংহ নগরীকে দেখবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বচক্ষে দেখার জন্যই প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ সফর।প্রধানমন্ত্রীর এ সফরকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত ময়মনসিংহবাসী।

২০১৮ সালে ময়মনসিংহকে সিটি করপোরেশন করা হয়। ২০১৯ সালে প্রথম নির্বাচনের মাধ্যমে ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রাচীন এই নগরীতে গত চার বছরে রেকর্ড পরিমাণ উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। বদলে গেছে পুরো নগরী। দেশের নবীনতম নগরীর প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের মূল সড়ক এবং অলিগলিতে চলছে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ।

তবে নবগঠিত এ সিটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও কিছু সংকট রয়েই গেছে। সড়ক প্রশস্ত না হওয়ায় যানজটের দুর্ভোগ চিরস্থায়ী রূপ নিয়েছে। শহরের ভেতরে প্রতিনিয়ত যানজটের কষ্ট পোহাতে হয় নগরবাসীকে।

সিটি করপোরেশনের সড়ক, ড্র্রেনেজ, অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবা উন্নতকরণ প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পের মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ৫৬৩ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। আগামী বছর প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে। এর মধ্যে ৯৭ কিলোমিটার আরসিসি সড়ক, ৭৮ কিলোমিটার বিসি ও দুই কিলোমিটার সিসি সড়ক, ৮৫ কিলোমিটার ড্রেন এবং ৭ কিলোমিটার ফুটপাত তৈরি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য প্রকল্প থেকে ৮০ কিলোমিটার নতুন সড়ক এবং ৪৩ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ সম্পন্ন করেছে সিটি করপোরেশন।

উন্নয়নের পরিবর্তন বিশেষ করে চোখে পড়ে সিটির অন্তর্ভুক্ত ২২ থেকে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডগুলোতে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটিতে যুক্ত হওয়া এলাকাগুলোতে প্রশস্ত সড়ক ও ড্রেন পাল্টে দিয়েছে সেখানের মানুষের জীবনমান। এসব ওয়ার্ডের কোথাও শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে, আবার কোথাও রয়েছে চলমান। একই সঙ্গে এত উন্নয়নকাজ আরও কখনও হয়নি প্রাচীন এ নগরীতে।

নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেনসহ বিভিন্ন এলাকায় ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণ করায় মূল সড়কের জলাবদ্ধতা সমস্যা মিটে গেছে। ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক উন্নত করায় নগরীর ভেতর দিয়ে বয়ে চলা খালগুলো থেকে পানি সহজে বের হবে। নগরীর দৃশ্যমান পরিবর্তনের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ১৬৫ কিলোমিটার এলাকা পোলসহ আধুনিক এলইডি বাতি স্থাপন করা। প্রায় ৪৯ কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে রাতের শহর হয়ে ওঠে মোহনীয়। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঘটেছে বড় পরিবর্তন। শম্ভুগঞ্জের ডাম্পিং স্টেশন এলাকা দিয়ে আগে মানুষ দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করলেও সেটি এখন বদলে গেছে। রাত্রিকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নগরীর অন্তত ৫০০ টন দৈনিক বর্জ্য সংগ্রহে কিন সিটি এবং মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হয়েছে। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্যও একটি প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুল আমিন কালাম বলেন, আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে গত পাঁচ বছরে নগরীতে যে পরিমাণ পরিবর্তন হয়েছে, তা চোখে পড়ার মতো।

সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্নে ময়মনসিংহবাসীকে সিটি করপোরেশন উপহার দিয়েছেন, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছি।

জেলা,মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলার নেতারা বলেন, ১১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে সফল করতে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করবে ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগ। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে জনসভায় বিপুলসংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটাবে।

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে ইতিমধ্যে ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সড়কে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন ও প্যানা লাগানো শুরু হয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ সফর আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। দলীয় সভানেত্রীর এ সফরকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহে উৎসমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ময়মনসিংহের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরার জন্য জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। জনসভাকে জনসমুদ্রে রূপ দেওয়ার জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেও জানান

মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র একরামুল হক টিটু বলেন, ‘আমি আশা করছি ১১ মার্চের সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ লাখ মানুষের সমাগম হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ আগমন উপলক্ষে আমাদের সব ইউনিটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা যাচ্ছে। তৃণমূল পর্যায়ে সভা-সমাবেশ ও নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা পরিচালিত হচ্ছে এবং সমাবেশ সফল করতে দলের অঙ্গ সংগঠনের সমস্ত নেতাকর্মীদের নিয়ে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর এই সফর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলের সাংগঠনিক ভিত আরও মজবুত করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী যে সকল উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো – বিভাগীয় সদর দফতরের কার্যালয়সমূহ, বিভাগীয় স্টেডিয়াম, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন, ৩৬০ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র্র, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ময়মনসিংহ বিভাগের কাজের প্রয়োজনে ময়মনসিংহ শহরে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে এমন ১০টি প্রকল্প হলো-ময়মনসিংহ বিভাগের নতুন বিভাগীয় শহরের ভিত্তিপ্রস্তর, বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়, বিভাগীয় সার্কিট হাউজ, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, বিভাগীয় স্টেডিয়াম, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, আরআরএফ-ময়মনসিংহ রেঞ্জ, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্প, ময়মনসিংহ বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতাল।

ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাস্তবায়ন হবে এমন কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হবে। প্রকল্প সমুহ হলো- ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন কার্যালয়ের নির্মাণ প্রকল্প, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, গৌরীপুর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, সদর উপজেলার সিরতায় ডা.মুশফিকুর রহমান শুভ মেমোরিয়াল ইসলামিক মিশন হাসপাতাল, নান্দাইল উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ, হালুয়াঘাট উপজেলায় মডেল মসজিদ, ধোবাউড়া উপজেলায় মডেল মসজিদ ও জেলার হাইটেক পার্ক।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনে ময়মনসিংহে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে আশা করছেন ময়মনসিংহ জেলা,মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।