নিজস্ব সংবাদদাতা: মুক্তাগাছার ৮ নং দাওগাঁও ইউনিয়নের বাওকপালীয়া গ্রামে শত্রুতার জেরে তিন পরিবারের চলাচলের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ হওয়ায় রবিউল্লাহ খানের ছেলে আঃ কদ্দুস খান,আইনদ্দি খানের ছেলে আলফাজ খান,আবুল হাসান, খোকন এবং আমির খানের ছেলে খালেক ও তাদের পরিবারের সদস্য অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। জানাগেছে, রাস্তাটি ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক নির্মাণ করার পর থেকে ৪ পরিবারের অন্তত ৫০ জন সদস্যসহ সাধারণ মানুষ তাদের ফসলের মাঠে যাতায়াত করতো। ২০২১ সালে প্রথমে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে অর্ধেক রাস্তা বন্ধ করে দেন একই গ্রামের নুর মোহাম্মদ খাঁনের ছেলে জোনাব আলী। এতে প্রতিবেশীদের সাথে একাধিকবার ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয় এবং একাধিকবার শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও স্থায়ী সমাধান সম্ভব হয়নি বলে জানান স্থানীয়রা। স্হানীয়রা আরো জানান,জোনাব আলী পর গত ১৫ জুলাই আমির খানের শামসুদ্দিন চর্দির সাথে জোনাব আলীর সাথে রাস্তা নিয়ে কথা কাটা কাটি হয়। পরে শামসুদ্দিন চর্দি পুরো রাস্তাটিই বাশেঁর বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে পুরোপুরি অবরুদ্ধ ৪ টি পরিবার। চলাচলের রাস্তা বন্ধ থাকার ঘটনায় প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে আলমগীর হোসেন প্রথমে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর এবং পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত ভাবে অভিযোগ করেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক কৃষক বলেন আগে আমরা রাস্তাটি দিয়ে ফসলের মাঠে যেতে পারতাম। ফসলের মাঠ পর্যন্ত যেতে না পারলেও অন্তত কাছাকাছি যেতে পারতাম। কিন্তু এখন রাস্তাটি বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তাতে করে আমদেরও সমস্যায় পড়তে হবে। তিনি আরো বলেন, একটি কুচক্রি মহল নিজেদের আখের ঘোচাতে চলাচলের রাস্তা বন্ধ করিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে প্রশাসন হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
এবিষয়ে অভিযোগকারী আলমগীর হোসেন বলেন, আগে থেকেই এই রাস্তা দিয়ে গ্রামের লোকজন চলাচল করত।ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক রাস্তাটি নির্মাণের পর কিছুদিন যেতে না যেতেই ১০ ফুট প্রস্থের রাস্তা কেটে ফেলাসহ রাস্তার উপর পানের বরজ ও ঘর নির্মাণের ফলে ৪ ফুটে পরিণত হয়। সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে রাস্তার জায়গায় ঘর ও পানের বরজ নির্মাণ করে জোনাব আলী। পরবর্তীতে রাস্তাটিতে জোনাব আলীর সাথে বিরোধের কারণে পুরো গ্রামবাসীর রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছেন শামসুদ্দিন চর্দি। তাই প্রশাসনের কাছে রাস্তাটি খুলে দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শামসুদ্দিন চর্দি বলেন, জোনাব আলী প্রথমে আমাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় বেড়া দিয়ে বন্ধ করেছে। কয়েকদিন আগে আমার ফসলী জমি ভরাট করে জোরপূর্বক ভাবে রাস্তা বাঁধা শুরু করেন জোনাব আলী গং। এতে আমি বাঁধা প্রদান করি। কারণ রাস্তাটি ১০ ফুট প্রসস্থ ছিল। আর এখন রাস্তটি ৪ – সাড়ে ৪ ফুট হবে। বাকী রাস্তাটুকু জোনাব আলীগং পানের বরজ ও ঘর নির্মাণ করে দখল করে থাকার পরও আমার ফসলী জমি ভরে রাস্তা করবে কেন? রাস্তার জায়গায় তার বাড়িঘর। আর রাস্তাটি যেহেতু ইউনিয়ন পরিষদের সেহেতু ম্যাপ অনুযায়ী রাস্তাটির কাজ করবে স্থানীয় চেয়ারম্যান। কিন্তু জোনাব আলী কিছু ভাড়াটিয়া মাস্তান নিয়ে এসে দেশীয় অস্ত্র অস্ত্র দেখিয়ে আমাদের উপর হামলার চেষ্টা করে। ঘটনাটি রাস্তা নিয়ে তাই কদ্দুসের পরিবারসহ অন্যান্য লোকজন দাড়িয়ে থেকে দেখার পরও কিছুই বলেনি তাই আমিও রাস্তায় বেড়া দিয়েছি।
এবিষয়ে জোনাব আলীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, নয়া বিল পর্যন্ত রাস্তার জায়গা দিলে আমি বেড়া তুলে নিব।নয়তো আমার জায়গা দিয়ে কাউকে চলাচল করতে দেব না। এতে যা হওয়ার হবে। কারো ক্ষমতা নেই বেড়া তুলে দেওয়ার।
স্হানীয় ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেড়া দেওয়ার কথা শোনার পর আমি সেখানে যাই। বেড়া তুলে দিতে বললে জোনাব আলীগং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। বিষয়টি আমি চেয়ারম্যান মহোদয়কে অবগত করেছি।
এবিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান খন্দকার জামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, আমি এবং পরিষদের সকল সদস্য শালিস বৈঠকের মাধ্যমে রাস্তার বেড়া তুলে দিয়ে আসার পর আবার বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও উক্ত ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যের সাথেও খারাপ আচরণ করেছে বলে শুনেছি। এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে কাজটি ঠিক হয়নি।
মুক্তাগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম লুৎফর রহমান বলেন,এমন একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে । বিষয়টি প্রশাসন গুরুত্বের সাথে দেখবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।