নিজস্ব প্রতিবেদক: মুক্তাগাছায় সরকারি খাল দখল করে পুকুর খনন ও মাছ চাষের অভিযোগ পাওয়া গেছে জামাল উদ্দিন বাদশা নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। দখল করা পুকুরের ছবি তুলে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় এম. এ বারেক রানা নামের এক শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবকের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনা ঘটে । ঘটনাটি মুক্তাগাছা উপজেলার দাওগাঁও ইউনিয়নের পাহাড়পাবইজান গ্রামে। কাশিমপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন বাদশার পুত্র মেহেদী জামাল তানভীর বাদী হয়ে ময়মনসিংহের বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইবুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেন। যাহার নং ৩০/২০২১। মামলায় শারীরিক প্রতিবন্ধী এম এ বারেক রানা ছাড়াও আসামী করা হয় তার ছোট ভাই যুবলীগ নেতা মুশফিকুর রহমান মানিককে।
স্থানীয়রা জানান, জামাল উদ্দিন বাদশা সরকারী খালের ভূমি দখল করে পুকুর খনন কাজ করছিলেন। এসময় শারিরীক প্রতিবন্ধী এম এ বারেক রানার সাথে ছাগল চড়ানো নিয়ে কথা কাটাকাটির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে শারিরীক প্রতিবন্ধী এম এ বারেক রানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে “সরকারি ভূমি দখল হয়ে খনন করা হচ্ছে পুকুর, বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা দেখার মত কেউ নেই মর্মে একটি পোষ্ট করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চাকদার খাল দখল ও পুকুর খননকারী জামাল উদ্দিন বাদশার পুত্র মেহেদী জামাল তানভীর সাইবার ট্রাইবুনালে একটি মামলা করেন। মামলা নং- ৩০/২০২১।
অনুসন্ধানে জানাযায়, পাহাড় পাবইজান মৌজার ১নং খতিয়ানের ৪৪২ নং দাগের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সরকারী চাকদার খালটি বানার নদীতে এসে মিলিত হয়েছে। দাওগাঁও ইউনিয়নের পাহাড়পাবইজান ও কাশিমপুর ইউনিয়নের কাশিমপুর গ্রামের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র খাল ছিল এটি।
গত ২৬ বছর ধরে দখল করে বাদশা মৎস্য হ্যাচারী প্রকল্পে মাছের রেনু পোনা উৎপাদন করে আসছেন জামাল উদ্দিন বাদশা। এতে করে অত্র এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়। খালটি বেদখল হয়ে যাওয়ায় দখলমুক্ত করতে ও প্রশাসনের নজরে আনতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন এম এ বারেক রানা। পোস্টে এম এ বারেক রানা উল্লেখ করেন, নির্বিচারে মাটি খনন করে মৎস্য ফিসারী তৈরি,সরকারী জায়গা দখল,বন্ধ হয়ে যাচ্ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, দেখার কেউ নেই। এতে গাত্রদাহ শুরু হয় জামাল উদ্দিন বাদশার। বাদশা তার পুত্র মেহেদী জামাল তানভীরকে দিয়ে এমএ বারেক রানা ও তার ছোট ভাই যুবলীগ নেতা মুশফিকুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করেন।
এব্যাপারে পাহাড়পারইজান গ্রামের বাসিন্দা কৃষক করা ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমি ৫-৬ বছর ধরে বর্ষাকালে কোনো ফসল করতে পারছি না। অল্প বৃষ্টি হলেই সে আমার বাড়িতে পানি ওঠে। বাদশা হে মিয়া আমাদের খালে পানি ছাড়তে দেয় নি না।’
প্রতিবন্ধী এম এ বারেক রানা বলেন, ‘জামাল উদ্দিন বাদশা সরকারি খাল দখল করে পুকুর খনন করেন। আমি খালটি উদ্ধারে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় আমার বিরুদ্ধে মামলা করে জামাল উদ্দিন বাদশার ছেলে তানভির। প্রতিকার চেয়ে মুক্তাগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুক্তাগাছা, জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহ বরাবর আবেদন করি। এছাড়াও আইনজীবীর মাধ্যমে বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করেন মহামান্য আদালত। আমি সঠিক ও সত্যের পথে আছি। আমি আমার সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে সত্য প্রকাশ করেছি। যা তদন্তে উঠে আসবে এবং প্রমাণ হবে জমিটি খাস খতিয়ান ভুক্ত। জমিটির মালিক জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহ। সরকারি জমি জবরদখল মুক্ত করতে আমার পোস্টটির মাধ্যমে সরকারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। আর আমি বিশ্বাস করি আদালতে ন্যায় বিচার পাবো ইনশাআল্লাহ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে জামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, এটা নিয়ে আদালতে মামলা চলছে, আদালত এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এটা খাস জায়গা না, এটা আমার নিজস্ব জমি। আমার বাবার জমি।
খাল দখল করে পুকুর খনন করার বিষয়ে দাওগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার জামাল উদ্দিন বাদশা বলেন, “সরকারি খাল দখল করে পুকুর খননের বিষয়টি আমি জেনেছি। এই ঘটনায় আদালতে আইসিটি আইনে একটি মামলাও চলমান রয়েছে। যেখানে যুবলীগ নেতা মুশফিকুর রহমান মানিক ও তার ভাই প্রতিবন্ধী এমএ বারেক রানাকে আসামী করা হয়েছে। যা অনাকাঙ্ক্ষিত। কেননা ইউনিয়ন ভূমি অফিস এর আগে একটি তদন্ত করে এবং উক্ত ভূমি ১ নং খাস খতিয়ান ভুক্ত। আর তাই এই বিষয় নিয়ে আইসিটি আইনে মামলা করা উচিত হয়নি।
উল্লেখ্য, জামাল উদ্দিন বাদশা যে ভূমিতে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন সেই ভূমিটি ১নং খাস খতিয়ান ভুক্ত এবং শ্রেনী খাল। মূলত ছাগল চড়ানো নিয়ে জামাল উদ্দিন বাদশার ঝগড়া হয় এমএ বারেক রানার সাথে। পরর্তীতে প্রতিবন্ধী রানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি সরকারী বেদখল করে পুকুর খনন হচ্ছে দেখার কেউ নেই উল্লেখ করেন। আর যেহেতু সরকারী খাল বেদখল পূর্বক ও পুকুর খনন করা হয়েছে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় পোস্টটি সত্য। আর সত্য বললে মামলা হবে এটা কখনোই কাম্য হতে পারেনা। ধারনা করা হচ্ছে মামলাটি করা হয়েছে জবরদখলের রাম রাজত্ব কায়েম করতে। সরকারী জমি, যার মালিক জেলা প্রশাসক। সেই জমি জবর দখল করে ফিসারী দিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন জামাল উদ্দিন বাদশা। জেলা প্রশাসকের বা সরকারী জমি জবরদখল মুক্ত করতে প্রশাসনের নজরে আনলে যদি আইসিটি আইনে মামলা হয় এবং জবরদখলকারীর সম্মানহানী হয়, তাহলে সত্য বলা বা প্রতিবাদ করতে কেউ এগিয়ে আসবেনা।
এছাড়াও মামলায় চাঁদাবাজির যে অভিযোগ আনা হয়েছিল। তা পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন ( পিবিআই) কর্তৃক তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। চাঁদাবাজির অভিযোগ যেমন মিথ্যা তেমনি এই মামলাটিও হয়রানি মূলক দাবী স্থানীয়দের। বিজ্ঞ আদালত সার্বিকদিক বিবেচনায় প্রতিবন্ধী এমএ বারেক রানা ও তার ভাই মুশফিকুর রহমান মানিককে উক্ত মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানসহ খালটি বেদখল মুক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন স্থানীয় সচেতন মহল।