আর্জেন্টিনার ফুটবল কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা আর নেই চলে গেলেন পরপারে ।পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের অনুভূতির একটি বিশাল জায়গায় তার স্থান করে নিয়ে ছিলেন । ফুটবলের এই কিংবদন্তি ৬০ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ।
সূত্রে জানায় – “মৃত্যুর কারণ হিসাবে ছিল ফুসফুসে অস্বাভাবিক এবং অতিরিক্ত জলীয় অংশ জমে সেই জলীয় অংশ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে ধীরে ধীরে রক্ত পাম্প করার জন্য হার্টের ক্ষমতাকে রোধ করে এবং তার হৃদযন্ত্রকে অকার্যকর করে ফলে তার মৃত্যু হয়।
আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্লোদিও তাপিয়া তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একটি সংক্ষিপ্ত বার্তায় বলেন, আমাদের কিংবদন্তি ডিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার মৃত্যুর জন্য গভীর শোক প্রকাশ করেছি, আপনি সর্বদা আমাদের হৃদয়ে থাকবেন ।
ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসাবে পরিচিত ম্যারাডোনা ১৯৮6 সালে নিজের দেশকে বিশ্বকাপের গৌরব অর্জনের জন্য যে অবদান রেখে গেলেন তার এ অবদানে আর্জেন্টিনাকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করে গেছেন যা সত্যিই গর্বের। ইতিহাস তাকে মনে রাখবে যুগের পর যুগ। তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্মরণীয় পারফরম্যান্সের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্টের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছিলেন যেখানে তিনি একটি দুর্দান্ত গোল করেছিলেন যা পরে তিনি “হ্যান্ড অফ গড” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন।তাঁর চকচকে ক্যারিয়ারটিও বিভিন্ন কাজে জন্য বিতর্কিত হয়ে হয়েছিল এবং তার কুখ্যাত জীবনযাত্রা মদ্যপান এবং আসক্তির কারণে হয়েছিল। আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপতি আলবার্তো ফার্নান্দেজ এই কিংবদন্তির মৃত্যুর জন্য তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করে। এবং টুইটারে তিনি লিখেন “আপনি আমাদেরকে বিশ্বের শীর্ষে নিয়ে গিয়েছিলেন । আপনি আমাদেরকে অবিশ্বাস্যভাবে আনন্দিত করেছেন আপনি সবার চেয়ে সেরা। আপনার রেখে যাওয়া অবদানের জন্য ধন্যবাদ ম্যারাডোনা।
এদিকে উয়েফার সভাপতি আলেকসান্দার ইফেরিন বলেছেন, ম্যারাডোনার সম্মানে এই সপ্তাহে সমস্ত ইউরোপীয় ম্যাচের আগে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হবে।ইফেরিন আরো এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “তিনি ইতিহাসে থেকে যাবেন, যিনি ফুটবলকে উজ্জ্বল করেছেন এবং তার উজ্জ্বলতা এবং দক্ষতায় তরুণ-বৃদ্ধ সবাইকে শিহরিত করেছেন।” ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৮ মৌসুমে আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ক্লাব এস্ত্রেয়া রোহার যুব পর্যায়ের হয়ে খেলার মাধ্যমে মারাদোনা ফুটবল জগতে প্রবেশ করেন। পরে লস সেবোয়িতাস এবং আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের হয়ে খেলার মাধ্যমেই তিনি ফুটবল খেলায় বিকশিত হয়েছেন। ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৮ মৌসুমে, আর্জেন্টিনীয় ফুটবল ক্লাব আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের মূল দলের হয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন । আর্জেন্তিনোস জুনিয়র্সের ০৫ মৌসুমে ১৬৭ ম্যাচে অংশগ্রহণ করার পর তিনি প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আরেক আর্জেন্টিনীয় ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে যোগদান করেন।
বোকা জুনিয়র্সে মাত্র ১ মৌসুমে একটি লীগ শিরোপা জয়লাভ করার পর প্রায় ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে স্পেনীয় ক্লাব বার্সেলোনায় যোগদান করেন । যেখানে সেসার লুইস মেনোতির অধীনে তিনি তিনটি শিরোপা জয়লাভ করেছেন। বার্সেলোনার হয়ে ০২ মৌসুমে সকল প্রতিযোগিতায় ৪৫ ম্যাচে ৩০টি গোল করার পর প্রায় ৭ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইতালীয় ক্লাব নাপোলিতে যোগদান করেন । এই স্থানান্তরের মাধ্যমে তিনি পুনরায় বিশ্ব রেকর্ড করেন। মারাদোনা ফুটবল ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে দুইবার স্থানান্তরের বিশ্বরেকর্ড ভঙ্গ করেছেন । পরবর্তীতে তিনি সেভিয়া এবং নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে খেলেছেন। সর্বশেষ ১৯৯৫– ৯৬ মৌসুমে, তিনি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পুনরায় বোকা জুনিয়র্সে যোগদান করেছিলেন, যেখানে তিনি ২ মৌসুম অতিবাহিত করে অবসর গ্রহণ করেছেন।
১৯৯১ সালে ইতালিতে মাদক পরীক্ষায় কোকেইনের জন্য ধরা পড়ায় তাকে ১৫ মাসের জন্য ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৯৪ ফিফা বিশ্বকাপে ইফিড্রিন পরীক্ষায় ইতিবাচক ফলাফলের জন্য তাকে প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে তিনি তার কোকেইন নেশা ত্যাগ করেন। নিষেধাজ্ঞার পরে ম্যারাডোনার খেলার কেরিয়ার নষ্ট হয়ে যায়।তিনি পরে ব্যবস্থাপনার দিকে ঝুঁকে পরেন।
২০০৮সালে ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার ম্যানেজার হন এবং ২০১০ বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেন।সে সময় কোয়ার্টার ফাইনালে পরাজিত হয়েছিল। তিনি গত এক দশক ধরে মেক্সিকো এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্টিপ সহ বিভিন্ন পরিচালনামূলক কাজের চাকরি নিয়েছিলেন। মৃত্যুর সময় তিনি আর্জেন্টিনার প্রথম বিভাগের ক্লাব জিমন্যাসিয়া ওয়াই এসগ্রিমার দায়িত্বে ছিলেন।
এই মাসের শুরুর দিকে, ম্যারাডোনা মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা হেমোটোমা জন্য সফল অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন ।