নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৮ সালে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে এসআই পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে চাকরির আবেদন করেন সবুজ মিয়া নামে এক ব্যাক্তি। সবুজ ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতীবেড় গ্রামের ফজলুল হকের পুত্র। সবুজ ও তার পরিবারের সদস্যরা জানান, আবেদনের পর তার খালু মফিজুল ইসলাম তার বাড়িতে এসে চাকুরির প্রলোভন দেখায়। আপন খালুর কাছ থেকে চাকুরী নামক সোনার হরিণ পাবার লোভে ৯ লক্ষ টাকা তুলে দেন প্রতারক খালুর হাতে। সবুজ যতক্ষণে প্রতারণার বিষয়টি বুজতে পারেন ততক্ষণে ৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারই আপন খালু এবং খালাতো বোন মরিয়মগং । মফিজুল ( মফিজ হাফেজ) তার মেয়েকে সাবেক ময়মনসিংহ রেঞ্জের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কন্যা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল।
বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়া ,খাস জমি রেকর্ড করে দেওয়া, ব্যাংক থেকে লোন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণা করে আসছিল মফিজ ও তার কন্যা মরিয়ম। এদের সহযোগী হিসেবে এ্যাপোলো টাকা পয়সা লেনদেন এবং কোন সমস্যা হলে তার সমাধান করতেন। সক্রিয় দালাল চক্রের এই ৩ সদস্য ছাড়াও একজন জনপ্রতিনিধির নাম উঠে এসেছে অনুসন্ধানে। তিনি নিজের মুখে স্বীকার করেছেন বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ পেতে প্রার্থীদের দেওয়া টাকার স্ট্যাম্প ডকুমেন্টস তৈরি করে দেওয়াই ছিল তার কাজ(গভীরতর অনুসন্ধানের স্বার্থে তার নাম পদবী গোপন রাখা হয়েছে)।
পুলিশের এসআই পদে চাকুরি দেওয়ার নামে এসব প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ভালুকা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন সবুজ মিয়া নামের ঐ ভুক্তভোগী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, একই এলাকার বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম ও তার সহযোগী এ্যাপোলো বাংলাদেশ পুলিশের এসআই পদে নিয়োগ পাইয়ে দিবে বলে তার কাছ থেকে ৩ ধাপে ৯ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। উক্ত টাকা দেই দিচ্ছি বলে সময় ক্ষেপণ করতে থাকেন মফিজ হাফেজ গং। একপর্যায়ে স্হানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেন তৎকালীন উথুরা ইউপি চেয়ারম্যান বজলুর রহমান বাচ্চু। লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে উম্মুক্ত শালিসে টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন মফিজ হাফেজ ও এ্যাপোলো গং। চাকুরী পাবেন আশায় সরল বিশ্বাসে মফিজ গংদের ৯ লক্ষ টাকা দিয়েও চাকুরী পাননি সবুজ। সবশেষে প্রতারিত হয়ে প্রশাসন ও রাজনৈতিকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।
ভুক্তভোগী সবুজ মিয়া আরো বলেন, এর আগেও ২০১৯ সালে জেলা প্রশাসক ময়মনসিংহ, পুলিশ সুপার ময়মনসিংহ,জাতীয় সংসদ সদস্য ভালুকাএবং ভালুকা মডেল থানায় একাধিক অভিযোগ করি। কিন্তু কোন প্রকার আইনী সহযোগিতা পায়নি। ঐসময় পুলিশ সুপার ময়মনসিংহ অভিযোগটির তদন্তভার ন্যাস্ত করেন জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)কে। জেলা গোয়েন্দা সংস্থা (ডিবি)’র এসআই আকরাম হোসেনকে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এসআই আকরাম হোসেন দু’পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টাও করেন। কিন্তু মফিজুল ইসলাম ( মফিজ হাফেজ) গংরা প্রভাবশালী হওয়ায় শেষ পর্যন্ত কোন প্রকার সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
সবশেষ,ভালুকা মডেল থানায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই সামিউল দুপক্ষকে থানায় ডাকেন বিষয়টি নিষ্পত্তি করার লক্ষ্যে। এসময় মফিজুল ইসলাম পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, সাবেক ময়মনসিংহ রেঞ্জ ডিআইজি নিবাস চন্দ্র মাঝি তার কন্যাকে মেয়ে বানিয়েছিলেন। আর রেঞ্জ ডিআইজির মেয়ে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
জানাগেছে, মফিজ হাফেজ ও তার মেয়ে মরিয়ম এবং উথুরা ইউনিয়ন আ’লীগের সাবেক সভাপতির পুত্র এ্যাপোলো বিভিন্ন ভাবে এলাকার নিরীহ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। উক্ত বিষয়ে ভালুকা আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব কাজিম উদ্দিন ধনু’র স্বরণাপন্ন হলে তিনি ভালুকা থানার ওসি কামাল হোসেনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বললেও গত ৬ মাসেও কার্যত কোন আইনগত ব্যবস্থা কিংবা টাকা উদ্ধারে জোরালো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি ওসি।
এবিষয়ে জানতে মফিজুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সবুজ হাওলাত হিসেবে আমাকে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। উক্ত টাকা আমি পরিশোধ করেছি। পুলিশে নিয়োগের নামে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। এরপরক্ষণেই মরিয়ম এই প্রতিবেদকের ব্যবহৃত নাম্বারে ফোন করে দেখে নেয়ার হুমকিও প্রদান করেন।
এবিষয়ে এসআই সামিউল বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে থানায় ডেকে নিয়ে কথা বলেছি। তদন্ত স্যার ও মল্লিকবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন তখন উপস্থিত ছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যান আকরাম হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,একটু ব্যস্ততার মধ্যে আছি। আগামী সপ্তাহে বিষয় নিয়ে বসে দেখি সমাধান করা যায় কিনা। (উক্ত বিষয়ে গত ৯ জুন তার বাসায় একটি ঘরোয়া শালিস অনুষ্ঠিত হলে সেখানে আড়াই লক্ষ টাকা সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু সবুজ ও তার পরিবার তা মেনে না নেওয়ায় সমাধান সম্ভব হয়নি)।
এবিষয়ে উথুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমাকে আকরাম চেয়ারম্যান ফোন করে শালিসে উপস্থিত হওয়ার জন্য বললে আমি শালিসে উপস্থিত হই। তবে বিষয়টি সমাধান না হওয়ায় বর্তমানে ভালুকা থানার ওসি বিষয়টি দেখছেন। যেখানে ৯ লক্ষ টাকা পাবেন সে, শালিসে ফয়সালা হয় আড়াই লক্ষ টাকা। বিষয়টি অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় সমাধান করা সম্ভব হয়নি।