ছুটি পেয়ে গ্রামে গেলে যতটা আনন্দ পাই ঠিক ততটাই কষ্ট পাই গ্রামের কিছু কিছু বিষয় দেখে।
ঈদের ছুটিতে লম্বা একটা সময়ের জন্য গ্রামে যাওয়া হয়। তখন সবাই আসে, দেখা হয়। বেশ ভালো লাগে। কিন্তু সেই সময়টাতেই গ্রামের একটা জিনিস আমাকে বেশ কষ্ট দেয়। মনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়।
তালাকপ্রাপ্ত এক মেয়ের কথা বলছি। তার বয়স খুব বেশি হলে ঊনিশ কিংবা কুড়ি। এই তো কয়েক বছর আগে বাবা-মা লোকচক্ষুর আড়ালে বাল্যবিয়ে দেয় তাকে।
একবার ছুটিতে গ্রামে এসে শুনি মেয়েটা খুব একটা ভালো নেই। স্বামী তার ওপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন করে। সন্তান নিলে সব সমাধান হয়ে যাবে, এই ভেবে সন্তানও নিয়েছেন। তাতেও ফল আসেনি। শেষমেশ স্বামীকে ছেড়ে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে সে।
বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবতেই দেখলাম গ্রামের অনেক বাড়িতেই অল্প বয়সী তালাকপ্রাপ্ত আছেন। বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে আমি যেটা বুঝেছি সেটা হলো একটা মেয়ের বয়ঃসন্ধিকালে পর্দারপণ করার আগে তাদের বিয়ে দেওয়া হয় ও হচ্ছে এবং তারা স্বামীর ঘরে যেয়ে যে কোনো পরিস্থিতি সামলে নিতে পারে না। তাছাড়া মেয়েরা যখন স্বামীর ঘরে যায় তখন তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিবর্তন হওয়া শুরু হয়। অনেক ক্ষেত্রে শ্বশুরবাড়ির সাথে ভালো বনিবনা হয় না। তখনই হয়তো পরিবারের সবাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সন্তান নিলে সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু একজন অপ্রাপ্ত বয়সের মায়ের সন্তান কেমন হবে? পুষ্টিহীন শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাড়া?
তারপরই সমস্যা বেড়ে যায়। স্বামী সন্তানের যত্ন, পরিবারের দেখভাল করতে গিয়ে ছোট্ট মেয়েটা হিমশিম খায়। এত দায়িত্বের ভিড়ে খেই হারিয়ে ফেলা মেয়েটার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। শেষটায় মেয়ে চলে আসে বাবার বাড়িতে। কখনো সবার চাপে আবার ফিরে যায় শ্বশুরবাড়ি আর নয়তো ছাড়াছাড়ির মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়।
তখন ঐ দরিদ্র বাবা মার পক্ষে সেই নারী ও শিশুর ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এসবের পেছনে বলতে গেলে গ্রামের অশিক্ষিত বাবা মাই দায়ী। তারা মনে করেন মেয়েকে বিয়ে দিলে ঝামেলা ও সমস্যা কমে যাবে কিন্তু হয় তার বিপরীত।
প্রশাসনের কড়া নজরদারির পরও গ্রামে বাল্য বিয়ে থামছে না। যা রীতিমত ব্যধিতে পরিণত হয়েছে। তবে আমার মনে হয় এই ব্যধি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে একমাত্র অভিভাবকরা সচেতন হলে।
✒শাহিন আলম (১৭), সাতক্ষীরা।