নিদারুণ দুঃসময়ের মধ্যে আমরা প্রতিটি সময়ের ক্ষণ পার করছি। প্রতিদিন বাড়ছে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা ,তার সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এমন ভয়াবহ করুণ সময় আগে হয়তো কখনো পার করিনি। এমনি হতাশা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠার মধ্যে নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লড়াই করে যাচ্ছে আমাদের দেশের পুলিশ বাহিনী। সম্প্রতি করোনাকালীন ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের ভুমিকা প্রশংসনীয়। তাদের এই মানবিক কাজ আমাদের যোগায় শক্তি,সাহস। আশার আলোয় দিপ্তমান হচ্ছি আমরা প্রতিনিয়ত। রাত কিংবা দিন, ঝড় অথবা বৃষ্টি উপেক্ষা করে ছুটে চলছে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের এসপি আহমার উজ্জামান পিপিএম সেবা ও জেলা পুলিশ ।
ছুটি নেই তবুও তাদের বিরামহীন ছুটে চলা। মানুষকে সচেতন করতে, এই দেশকে করোনার থাবা থেকে রক্ষা করতে তাদের এই বিরামহীন মানবিক কাজ আবার পুলিশকে নতুন করে চিনতে শিখিয়েছে। আমরা যখন আমাদের পরিবার নিয়ে রাতে ঘুমাই, আমাদের নিরাপত্তা দিতে তারা তখন পরিবার ছেড়ে র্নিঘুম রাত কাটায়।
ময়মনসিংহের বেদে পল্লী থেকে পুলিশ সুপারের কাছে ফোন আসল। বাসায় খাবার নেই। তাদের অল্প আয়ে সংসার চলে না, এমন সূচনীয় সময়ে বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে খাবার চাইল তারা। তাৎক্ষণিক জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান পিপিএম, ডিবি পুলিশকে দিয়ে তিন দিনের খাবার পাঠিয়ে দেন। খাবার পেয়ে তারা খুশিতে আত্মহারা।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার আহমার উজ্জামান পিপিএম সেবা বলেন, অনেক ফোন আসছে, আমরা নিজেদের উদ্যোগে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের উদ্যোগে জেলার ইমাম-মোয়াজ্জিম, পুরোহিত ও সেবায়েতদের মাঝে সহায়তা সামগ্রী বিতরণ করেন। সামাজিক দূরত্ব বজায়, সুশৃঙ্খলভাবে এসব উপহার সামগ্রী বিতরণ সারাদেশে আলোচিত হয়েছে। লকডাউনের এই সময় নিরলস পরিশ্রম,ময়মনসিংহ জেলার লকডাউন বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করছে। করোনা আমাদের পুলিশের মানবিকতা,চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। নিজেদের পরিবারের চেয়ে যেন আমাদের পরিবারদের বড্ড বেশি ভালোবাসে।
ত্রিশাল থানা পুলিশের ওসি মাইন উদ্দিনের মানবিকতায় ফিরে পেল প্রতিবন্ধীর একটি গাড়ী। প্রতিবন্ধী নুরুজ্জামান ওসিকে বলেন স্যার আমার গাড়ি আপনার থানায়, এই গাড়ি দিয়ে সংসার চলে। তাৎক্ষণিক ওসি মাইন উদ্দিন গাড়িটি ছেড়ে দিয়ে তার পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি শুধু মানুষের মাঝে নয়, পশু পাখির জন্যও যেন পুলিশের দায়িত্ব থেমে নেই। থানার সামনে গোল ঘরে বসে নিয়মিত পাখিদের খাবার দেন। তার এমন ভালবাসা দেখে স্থানীয় লোকজনও তার প্রতি ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি অনেক ঘটনা আমাদেরকে দেখিয়ে দেন, পুলিশ আজ বিপদের বন্ধু। সবার মাঝে, সবার কাছেই পুলিশ আজ প্রশংসার দাবিদার।
যখন আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করি,পুলিশ তখন আমাদের নিরাপত্তার জন্য পথে ঘাটে দিনরাত দায়িত্ব পালন করে। তারা ঘরের বাইরে থাকে, আমাদের নিরাপত্তায় ঘরে রাখতে। আগে আমরা দেখেছি পুলিশের বাইরের কঠোরতাকে। কিন্তু দেখিনি বুটের ভেতর পায়ের রক্তজমাট বাঁধা। আমরা নানান নেতিবাচক ঘটনা শুনেছি, কিন্তু দেখিনি পুলিশের পোশাকের ভিতর শরীর বেয়ে পরা ক্লান্তির ফোঁটা। এই করোনা আমাদের দেখিয়ে দিলো, পুলিশের পোশাকজুড়ে যেন থাকে এক বাংলাদেশকে মমতার চাদরে জড়িয়ে রাখা।
পুলিশের এই মানবিকতা, উদারতা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বিপদে বন্ধুর নামই পুলিশ। আমরা উপলব্ধি করেছি দুঃসময়ে হাল ধরা এক নাবিক পুলিশ।। পুলিশের এই মানবিকতা অব্যাহত থাকুক এই প্রত্যাশা।
লেখক : মোঃ খায়রুল আলম রফিক সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক) ও ক্রাইম চিপ দৈনিক আমাদের কন্ঠ।