খায়রুল আলম রফিক ঃ ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা নয় ছয় হয়েছে । কর্মসূচীর আওতায় ২৯শ’ ৭৩ জন মাঠকর্মী কর্মরতদের বেশিরভাগ মাসে একদিন ,কেও ২ সপ্তাহে একদিন আবার কেও ছয় মাসে একদিনও অফিস বা নিজ কাজ করেননি । কিন্তু কাজ না করেও হাজিরা দিয়েছেন তারা। ভূয়া নাম ঠিকানা ব্যবহারও করা হয়েছে । ডাচবাংলা ব্যাকের একজনের স্থলে দুজনের এ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে ।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা -কর্মচারিদের যোগসাজশে বহিরাগত দালালের মাধ্যমে কর্মসূচীতে হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাট ।
জানা যায়, ময়মনসিংহের ত্রিশালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আওতাধীন ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ৬ষ্ঠ পর্ব ২০১৮ সালের জুন , জুলাই ও আগস্ট অর্থাৎ ৩ মাস মেয়াদী ৩য় ব্যাচে প্রশিক্ষণ । এর মাধ্যমে গত ১৫ /৯ /২০১৮ ইং তারিখে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে যুবক / যুব মহিলাদের বিধি মোতাবেক প্রাপ্ত কর্মভাতা প্রদান সাপেক্ষে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে ২৯৭৩ জন মাঠ কর্মী নিয়োগ প্রদান করা হয় । নিয়োগ কমিটি ২ বছরের মেয়াদ পর্যন্ত অর্থাৎ ১৯/০৯/২০ সালে সংযুক্তি শেষ হয়।নিয়োগের শর্তে কর্মীদের এসএসসি ও এইচএসসি’র মূল সনদ উপজেলা যুউন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে রাখার জন্য বলা হয়েছিল । ৩০০ টাকা মূল্যমানের নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে জমা দেয়া হয় । ১৫/০৯ ২০১৮ থেকে ১৪ / ০৯/২০২০ পর্যন্ত কর্মসূচী শেষ হয় ।
আদেশে বলা হয়,, যোগদানকালে এবং বদলি জনিত কারণে টিএডিএ প্রাপ্ত হবে না এবং ৩দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে চাকরি বাতিল করা হবে । এমন আদেশে স্বাক্ষর করেন, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও ন্যাশণাল সার্ভিস কর্মসূচির সভাপতি মো: আব্দুল্লাহ আল জাকির । গত ১৫/০৯ /২০১৮ সালে স্বাক্ষরিত স্মারক নং- ২৫২ । সূত্র জানায়,উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিস, কৃষি অফিস, মৎস্য অফিসসহ সরকারির বিভিন্ন দপ্তরে ২৯শ’ ৭৩ জন মাঠকর্মীকে পৃথক পৃথক ভাবে বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করা হয় ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোন অফিসে ৫ জন স্টাফ কর্মরত রয়েছেন । সেই অফিসে কর্মসূচীর ২শ’ জন কর্মী কাজ করছেন । ঐ অফিসের কর্মকর্তা- কর্মচারিরা জানান, এতে অফিসে গ্যাদারিংসহ নানান জটিতলার সৃষ্টি হয়ে সুষ্ঠু কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে । দাপ্তরিক কর্মকান্ড বেঘাত হয়েছে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কর্মীরা ১৫ দিন আবার ১ মাস অনুপস্থিত থেকে হঠাৎ একদিন অফিসে এসে হাজিরা দেখিয়ে স্বাক্ষর করেছেন । আবার এমনও দেখা গেছে কোন কোন কর্মী ৬ মাসের মধ্যে একদিনও অফিসে আসেননি । সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে ২ বছরের বেতনও উত্তোলন করা হয়েছে । অথচ শর্ত মতে, যেখানে ৩দিন অনুপস্থিত থাকলেই চাকরি নেই । এশর্ত উপেক্ষিত হয়েছে ।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় ত্রিশাল থেকে ৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে । অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে প্রত্যায়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে এমন তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে । একাজ করেছেন উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিপ্তরের ত্রিশাল দপ্তরের কর্মকর্তা- কর্মচারিরা । তবে অনেকেই আবার রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের চাপে প্রত্যয়নপত্র দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা । মাঠ কর্মীদের অধিকাংশই কর্মস্থলে হাজিরা দেননি, অথচ নিয়মিত মাসিক কর্মভাতা তুলছেন। অপরদিকে ডাচ বাংলা ব্যাংক ত্রিশাল শাখায় একটি এ্যাকাউন্ট খোলার বিধান থাকলেও সেটি উপেক্ষা করেও ২ জনের একাউন্ট খোলা হয়েছে । অভিযোগ আছে, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: আবু জুলহাস নিজস্ব লোক রেখে হাজিরা খাতায় কর্মীদের স্বাক্ষর উঠিয়েছেন ।তিনি ত্রিশালে যোগদান করেন ২০১৪ সালের ১৪ জুন । জেলার হালুয়াঘাটে বদলী হন ২০২১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ।
এছাড়াও ত্রিশাল যুব উন্নয়ন অফিসের হিসাব রক্ষক শফিকুল ইসলাম, অফিস সহকারি মতিইর রহমানও দুর্নীতি- অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ আত্বসাত করেছেন । জানতে চাইলে হিসাব রক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, সব কিছুই স্যার জানেন ! স্যারের নির্দেশেই করেছি । আমি তেমন দুর্নীতি করি নাই । তারপরও আমার বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে ।
অফিস সহকারি মতিউর রহমান জানান, আমি শুরু থেকে ছিলাম না । শেষ দিকে ছিলাম । দায়িত্বে ছিলেন, শফিকুল ইসলাম ক্যাশিয়ার । আমার মাধ্যমে ১৩ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে । তিনি দিয়েছেন ২৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা । ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আমি দায়িত্ব পেয়েছি । জানতে উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার মোবাইলে বার বার ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি ।
জানা যায়, উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের উপরোক্ত ৩ জনের বিরুদ্ধে ৩টি অভিযোগ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তদন্তাধিন আছে । উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা জানান, সরকার মহৎ উদ্দেশ্যে এই কর্মসূচি হাতে নেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন বলে দাবি করেন তিনি ।
এবিষয়ে ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আখতারুজ্জামান জানান, আমি নতুন আসছি,ফাইল কোন জায়গায় আছে আমি জানিনা, তবে খোঁজ নিবো।