ত্রিশালের কনজ্যুমার গার্মেন্টেসের প্রায় ১০ লক্ষ টাকা চুরির রহস্য উদঘাটন

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ সিসিটিভির ফুটেজের মাধ্যমে  ত্রিশালের বাগান গ্রামের কনজ্যুমার গার্মেন্টেসের প্রায় ১০ লক্ষ টাকা চুরির বহুল আলোচিত রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই  ময়মনসিংহ ।গার্মেন্টস এর ৫নং বিল্ডিংয়ের কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষ হতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা চুরির রহস্য উদঘাটিত হয়।

 ঘটনাটির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সন্দেহভাজন আসামীঃ-

১। মোফাজ্জল হোসেন ওরফে (জুয়েল মিয়া )(৩৭), পিতা-মৃত মোসলেম উদ্দিন, গ্রাম-তললী নামাপাড়া, ইউপি-নিগুয়ারী, থানা-পাগলা, জেলা-ময়মনসিংহকে (২৩ মে ২০২১ ) ভোর ০৫.০০ টায় পাগলা থানাধীন তললী এলাকা হতে আটক হয়।

২। মোঃ হানিফ (২৯), পিতা-মোঃ ইব্রাহিম খলিল, গ্রাম-বাগান, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ ।

৩। মোঃ সেলিম হোসেন (৩৩), পিতা-হোসেন আলী মন্ডল, গ্রাম-সিংদহ, থানা-মাদারগঞ্জ, জেলা-জামালপুর।বর্তমান টেক্সটাইল সিটি’র পাশে তোফাজ্জল হোসেনের বাসার ভাড়াটিয়া, গ্রাম-বাগান, থানা-ত্রিশাল, জেলা-ময়মনসিংহ’দ্বয়কে ( ২৩ মে ২০২১ ) বেলা ১১.৩০ টায় ত্রিশাল থানাধীন বাগান এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত ০১/১২/২০১৯ দিবাগত রাতে টেক্সটাইল সিটি (কনজ্যুমার গার্মেন্টস লিঃ) হতে অজ্ঞাতনামা চোর কর্তৃক ৯,৬০,৪০০/- টাকা চুরি হওয়ার প্রেক্ষিতে উক্ত গার্মেন্টেসের সিকিউরিটি ইনচার্জ বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় অজ্ঞাতনামা চোরদের বিরুদ্ধে মামলা নং-০৬, তাং-০২/১২/২০১৯, ধারা-৪৫৭/৩৮০ পেনাল কোড দায়ের করেন।মামলাটি ত্রিশাল থানা পুলিশ ০৭ মাস তদন্ত করে। থানা পুলিশ কর্তৃক তদন্তাধীন অবস্থায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মাধ্যমে মামলার তদন্তভার পিবিআই ময়মনসিংহ জেলার উপর অর্পণ করা হয়।

ডিআইজি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, পিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিপিআই ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব গৌতম কুমার বিশ্বাস এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) পংকজ কুমার আচার্য মামলাটি তদন্ত করেন।

আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, এটি প্রায় দেড় বছর আগের ঘটনা। সন্দেহভাজন আসামী জুয়েল কনজ্যুমার গার্মেন্টেসে সহকরী সিকিউরিটি ইনচার্জ হিসেবে কর্মরত ছিল। পরে তাকে সেখান থেকে কনজ্যুমার নিটিং গার্মেন্টেস,ভালুকায় বদলী করা হলে তার মনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কারণ সে ও তার স্ত্রী একই সাথে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেস,ত্রিশালে চাকরি করত এবং টেক্সটাইলের কাছেই বাগান এলাকায় ভাড়া থাকত।ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে সে স্থানীয় সেলিম, হানিফ,আজিজ এর সাথে মিলিত হয়ে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে চুরির পরিকল্পনা করে। সন্ধিগ্ধ আসামী সেলিম টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকুরি করত। সন্ধিগ্ধ আসামী হানিফ ও আজিজ উক্ত টেক্সটাইলের কাছে বাগান এলাকায় বসবাস করত। হানিফ বালুর ট্রাকের হেলপার আর আজিজ ডিশের লাইনম্যান হিসেবে কাজ করত। পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী গত ০১/১২/২০১৯ দিবাগত রাত অনুমানিক ০৩.৩০ মিনিটের দিকে সন্দেহভাজন আসামী হানিফ ও জুয়েল মিয়া কালো বোরকা পড়ে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেস এর দক্ষিণ পাশের প্রাচীর টপকে ভিতরে ঢুকে। সন্দেহভাজন আসামী হানিফের কাছে ২৫ ইঞ্চি লম্বা শাবল ছিল।এদিকে সিকিউরিটি সেলিম ঐ দিন ঘটনার পূর্বেই ২য় তলায় কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষে ঢোকার ফায়ার এক্সিট দরজার চাবি এনে জুয়েলকে দেয়। টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেস এর দক্ষিণ পাশে প্রাচীরের বাহিরে আসামী সেলিম ও আজিজ পাহারায় থাকে। সন্দেহভাজন আসামী হানিফ ও জুয়েল কৌশলে কনজ্যুমার গার্মেন্টস লিঃ এর ৫নং বিল্ডিংয়ের ২য় তলায় কান্ট্রি ডিরেক্টরের অফিস কক্ষের কাছে পৌছে পূর্বেই সংগৃহিত চাবি দিয়ে ফায়ার এক্সিট দরজার তালা খুলে ভিতরে ঢুকে এবং হানিফের কাছে থাকা শাবল দিয়ে লকার ভেঙ্গে ভিতরে থাকা বেতন ভাতাদির টাকার বাক্সটি নিয়ে চলে আসে। পরবর্তীতে তারা চারজন বাক্সে থাকা প্রায় দশ লক্ষ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলার পিবিআই এর এসপি জনাব গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর গার্মেন্টেসে চুরির ঘটনা। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার পিবিআই ময়মনসিংহ জেলাকে প্রদান করা হলে পিবিআই কর্তৃক অত্র মামলার প্রকৃত আসামীদের সনাক্তের লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। কার্যক্রমের অংশ হিসাবে জব্দকৃত সিসিটিভি ফুটেজ বারংবার পরীক্ষা করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে বোরকা পড়া এক জন পুরুষের বিশেষ ভঙ্গিমায় হাটার অর্থ্যাৎ মেয়েলী ভঙ্গিতে হাটার দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। উক্ত বিষয়ে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টস এ কর্মরত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং গোপনে অনুসন্ধান করা হয়।

অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় সন্দেহভাজন আসামী জুয়েলকে গ্রেফতার করা হয়।তাকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে টেক্সটাইল সিটি গার্মেন্টেসে চুরির কথা স্বীকার করে এবং পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে চুরির ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহভাজন আসামী হানিফ ও সেলিম কে গ্রেফতার করা হয়।গ্রেফতারকৃত ০৩ জন আসামীকে ২৪/০৫/২০২১ বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা প্রত্যেকেই নিজেকে জড়িয়ে এবং ঘটনার সাথে জড়িত অপর আসামীদের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।