আমি দুখু মিয়াকে সুখু মিয়া বানাব ইনশাআল্লাহ:অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান

আশিকুর রহমান::ময়মনসিংহে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশাল উপজেলার নামাপাড়ার বটতলাস্থ ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। শুরু থেকেই বিভিন্ন সংকট নিয়ে পথচলা শুরু দেশের ২১তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। নবীন হওয়ায় নানা সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতা রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য হিসেবে ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর যোগ দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান। নিজ কার্যালয়ে সময়ের আলোর সঙ্গে একান্ত কথোপকথনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা, সম্ভাবনা ও আগামীর পরিকল্পনা নিয়ে জানিয়েছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।

তিনি বলেন, গত দেড় বছরে অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির নীতিমালা সুনির্দিষ্ট ছিল না, অসঙ্গতিপূর্ণ ছিল। পুরো নীতিমালা সংশোধন করে তা সিন্ডিকেটে পাস করা হয়েছে। বর্তমানে পদোন্নতির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ স্থবিরভাবে ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, নানা কারণে বিভিন্ন মেয়াদে নির্মাণকাজ বন্ধ থাকত। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও তাদের কাজ শেষ করতে পারেনি। বরং আমি দেখলাম দেড় বছর পিছিয়ে আছে। ১০ তলা ছাত্র হল, ১০ তলা ছাত্রী হল, ১০ তলা একাডেমিক ভবন আমি আসার পর নির্মাণকাজ তরান্বিত করেছি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি নেত্রকোনায় প্রতিষ্ঠা হওয়া আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামের বিশ্ববিদ্যালয় ৫০০ একর জমি পেয়েছে, জামালপুরে বঙ্গমাতার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় ৫০০ একর জমি পাচ্ছে, সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ২০০ একর জমি পেয়েছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৭০ একর, সেটাও ২০০ একর জমি পেয়েছে। আর জাতীয় কবির নামে প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় ১৩ বছরে তিন ধাপে জমি পেয়েছে মাত্র ৫৬.৭ একর! দুখু মিয়ার নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় বলে সব জায়গায় দুঃখের ছাপ থাকতে হবে? আমার কবি নজরুল ছোটবেলায় খুব কষ্টে বড় হয় হয়েছেন, একইভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছুও দুখু মিয়া টাইপের। আমি দুখু মিয়াকে সুখু মিয়া বানাবো ইনশাআল্লাহ।

ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তার সদিচ্ছা রয়েছে উলেখ করে অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুধু জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় বরং মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেই ছাত্রসংসদের বিধান নেই। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা মিলে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করব, কীভাবে আইন সংশোধন করে ছাত্রসংসদ নির্বাচন করা যায়। আমাদের সদিচ্ছা রয়েছে, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ছাত্রসংসদ থাকা আবশ্যক।

উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ ভয়াবহ সেশনজটে আক্রান্ত। সেসব বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের নিয়ে আমি দুবার মিটিং করেছি। তাদের বিভাগের সেশনজট কমিয়ে আনার জন্য ১ বছরের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

কবি নজরুলকে নিয়ে তার চিন্তাভাবনা প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব নজরুল স্টাডিজ রয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। আমরা জাতীয় কবির বিভিন্ন গান, কবিতা, উপন্যাস, নাটক সর্বোপরি তার জীবনী এবং জীবনকর্মের ওপর গবেষণা চলমান রাখার জন্য বিভিন্ন শাখায় পিএইচডি এবং এমফিল প্রোগ্রাম কোর্স চালু রেখেছি।

পরিবহন সংকট নিরসনের পরিকল্পনায় অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান অর্থবছরে একটি বাস কিনতে পারব। আগামী জুলাই মাসে যে অর্থবছর শুরু হবে, সেই অর্থবছরে আমরা দুটো বাস কিনতে পারব। পরিবহন সংকট নিরসনে ছুটির পরপরই সর্বনিম্ন সময়ের মধ্যে ৪-৫টি ভালো মানের বিআরটিসি বাস পরিবহন পুলে যুক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ হবে অটোমেশনে। অটোমেশনের কাজ শুরু হবে আগামী মাস থেকে। আমাদের ভর্তি পরীক্ষা, স্টুডেন্ট রেজিস্ট্রেশন, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড, পরীক্ষার ফরম পূরণ অর্থাৎ সবকিছু ডিজিটাল করা হবে।

তিনি বলেন, গত শিক্ষাবর্ষে আমি চারটি নতুন বিভাগ চালু করেছি, আগামী বছর আরও চারটি বিভাগ চালু করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার জন্য ফান্ড বৃদ্ধি করা হয়েছে। গবেষণার মান বৃদ্ধিকরণ এবং গবেষণার কলেবর বৃদ্ধিকরণ করা হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগে, কেননা গবেষণা মানে তো জ্ঞান সৃষ্টি করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা উন্নয়নমূলক কাজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাস্কর্য এবং ভবনগুলোর মধ্যে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের ভবন তৃতীয় থেকে পঞ্চমতলা সম্প্রসারণ, লাইব্রেরি ভবন সম্প্রসারণ সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তা আলোকিত করেছি। পোস্ট অফিস স্থাপন করেছি। এ ছাড়াও নতুন বাজেটের কাজ শুরু করতে আমরা প্রথমত পরামর্শক নিয়োগ করেছি। এরপর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ৪৯১ কোটি টাকার বাজেটে মাস্টারপ্ল্যান রিভাইস করে নতুন রূপে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপরেখার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। সবকিছু শেষ করে বর্তমানে এমন পর্যায়ে গিয়েছি আগামী তিন মাসে একাডেমিক ভবন, মসজিদ, অডিটোরিয়াম, গেস্ট হাউস, পাওয়ার হাউস, লেক সংস্কার, অভ্যন্তরীণ রাস্তা সংস্কার, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইট নির্মাণ টেন্ডার আহŸান করব। এরপর টেন্ডার মূল্যায়ন ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। অর্থাৎ এখন আমরা ক্রমান্বয়ে টেন্ডারে যাব আর পর্যায়ক্রমে কাজ শুরু করব।