সরকার মোঃ সব্যসাচী :: মানুষ – যাকে বলা হয় ‘আশরাফুল মাখলুকাত’। যার অর্থ মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞান মানুষকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জীব বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে মনুষ্য জাতির অতীত খুঁড়ে শেষ প্রান্তে চলে গেলে বরং মানুষকে দেখা যাবে বর্বর জীবরূপে। সেই প্রাচীনকাল থেকে আজকের আধুনিক কালের বিশাল পথযাত্রায় কালের বিবর্তনে প্রকৃতির সাথে লড়াই করতে করতে মানুষ হয়ে ওঠেছে সভ্য জাতি।
মানুষ তার বাঁচার তাগিদে গড়ে তুলেছে সমাজব্যবস্থা। নিজেকে পরিণত করেছে সামাজিক জীবে। আর সমাজকে সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য বসবাসযোগ্য করে তুলতে মানুষই উদ্ভব করেছে ‘রাজনীতি’ দর্শনের। আর যুগে যুগে নানান রথী-মহারথীরা ‘রাজনীতি’ শব্দটির সঠিক পরিচর্যা করতে গিয়ে সৃষ্টি করেছে বহু রাজনৈতিক দর্শন। আর এতে সুশোভিত হয়ে জনমানুষের মনে মনে পৌঁছে গিয়েছে রাজনীতি। মানুষ হয়ে ওঠেছে রাজনৈতিক জীব। আর তাই হয়তো আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ৩০০ বছর আগে মানুষ সম্পর্কে অ্যারিস্টটল বলে গেছেন ‘ম্যান ইজ অ্যা পলিটিক্যাল অ্যানিমেল।‘
রাজনীতির সুগন্ধ ছড়িয়ে গিয়েছিল বাংলার পথে-প্রান্তরেও। তাইতো নগরের শিক্ষিত সমাজ থেকে গ্রামের কৃষকের ঘর – বাংলার সব আনাচে-কানাচে থেকে উদিত হয়েছিল বহু রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিত্ব। নিজেদের বোধ থেকে তারা নির্মোহভাবে লড়াই করেছে ব্রিটিশ বেনিয়া শক্তির বিরুদ্ধে। সুদীর্ঘকালের এ লড়াই দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল ব্রিটিশদের। তবে যাবার আগে আমাদেরকে তুলে দিয়ে গিয়েছিল সিন্ধুপাড়ের পাকিস্তানের হাতে। সে সময়ে আমাদের জনপদে নবজাতকের ন্যায় প্রস্ফুটিত হচ্ছিলো একটি রাজনৈতিক সচেতন গোষ্ঠী এক তরুণের হাত ধরে। সুঠামদেহী তরুণের নাম শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলা ও বাঙালিকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতেই আবির্ভূত হয়েছিলেন তিঁনি। বাঙালি জনতার মানসে মুক্তির উন্মাদনা জাগাতে যে গণমানুষের প্লাটফর্ম সৃষ্টি করেছিলেন তার নাম ‘আওয়ামী লীগ’। গণমানুষের ভালোবাসার ম্যান্ডেট পেয়ে আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠেছিল বাংলা ও বাঙালির একমাত্র মুখপাত্র। আওয়ামী লীগের শেকড় পৌঁছে গিয়েছিল বাংলার প্রতিটি গ্রামে-গ্রামে।
বাংলার অন্যান্য অঞ্চলের মতোই আওয়ামী লীগ বিস্তৃত লাভ করেছিল ময়মনসিংহেও। যাদের হাত ধরে ময়মনসিংহের মাটিতে আওয়ামী লীগের শেকড় প্রবেশ করেছিল তাদের সিংহভাগই ইহলোক ত্যাগ করেছেন। তবে একজন এখনো আমাদের কাছেই আছেন। তিঁনি হলেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। আমরা তাঁকে ‘মতি স্যার’ বলে সম্বোধন করেই তৃপ্ত হই। তাঁকে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের সিংহপুরুষ নামে। বর্ষীয়ান এ রাজনৈতিক ব্যক্তির রয়েছে সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাস। বয়সের ভারে নূব্জ্য হলেও ইতিহাসের চোখে তিঁনি টগবগে তরুণ সমরসৈনিক। তাঁর যাপিত জীবনকর্ম তাঁকে অধিষ্ঠিত করেছে কিংবদন্তির আসনে।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ছাত্রজীবনেই নাম লিখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের খাতায়। যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগ সংগঠনে। পালন করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব। পরবর্তীতে ময়মনসিংহে ফিরে আসলে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ও অনুপ্রেরণায় ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগকে তেজদ্বীপ্ত ও সুসংগঠিত করায় মনোনিবেশ করেন। মুসলিম লীগের শাসকগোষ্ঠীর তোয়াক্কা না করেই ময়মনসিংহের পথে-প্রান্তরে ঘুরে ঘুরে সৃষ্টি করেছিলেন আওয়ামী লীগের বিশাল কর্মী প্লাটুন। তরুণ মতিউর রহমান তাঁর বাগ্মীতাপূর্ণ সুদক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে বিমোহিত করেছিলেন ময়মনসিংহের গণমানুষকে। লোকজ সংস্কৃতির হীরা-জহরতে পরিপূর্ণ ময়মনসিংহবাসীর মননে আওয়ামী লীগকে নকশিকাঁথার নকশির মতো গেঁথে দিতে পেরেছিলেন বলেই ময়মনসিংহ হয়েছিল আওয়ামী লীগের ঘাঁটি।
১৯৭১, বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের বছর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি মানসপটে যে স্বাধীনতার প্রতিচ্ছবি লালন করছিল তা মানসপট থেকে বাস্তব জীবনে ভূমিষ্ঠ হতে বাঙালি জাতি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে। সমগ্র বাংলাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহেও আক্রমণ করেছিল পাক হানাদার বাহিনী। ময়মনসিংহের মাটিকে নিরাপদ রাখতে দলে দলে ময়মনসিংহের জনমানুষ যোগ দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। বাংলাকে মুক্ত করে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার নেশায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। তিঁনি মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষকের ভূমিকাও পালন করেন তিঁনি। তিঁনি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ঢালু যুব শিবিরের ইনচার্জ ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টরে তাঁর নেতৃত্বে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ গড়ে তুলেন। অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে ১০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ হানাদার মুক্ত হয়।
পঁচাত্তরের পনেরো আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অগ্রযাত্রাকে হত্যা করা হয়। তখন সারা দেশ জুড়েই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়েছিল। এমনকি অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা-গুম করা হচ্ছিলো। সে সময়ে স্বৈরশাসক জিয়া অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে মন্ত্রীত্বের প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু মতিউর রহমান তা নাকচ করে দেয়। ফলশ্রুতিতে, মতিউর রহমানের উপর নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়। মতিউর রহমানকে কারাবন্দী করা হয়। এরপরও মতিউর রহমান তাঁর আদর্শ থেকে একচুল পরিমাণও বিচ্যুত হননি। আঁধারের মাঝেও সমহিমায় সুসংগঠিত করে গেছেন আওয়ামী লীগকে। পঁচাত্তর পরবর্তী কোণঠাসা আওয়ামী লীগকে আবারো পুনর্জীবিত করতে সব রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিরলসভাবে কাজ করে গেলেন। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশে আসলে ময়মনসিংহকে আওয়ামী লীগের দুর্গে রূপান্তরিত করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে উপহার দেন।
ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান পথে-পথে ঘুরে জহুরির মতো খাঁটি নির্মোহ কর্মী খুঁজে বের করেছেন। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও পৌঁছে দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বারতাকে। সুনিপুণ চিত্রকরের মতো ময়মনসিংহের সবুজ-সুফলা ভূমিতে শেখ হাসিনার পদযাত্রা ভাবনাকে সুচারুভাবে অঙ্কন করেছেন। ময়মনসিংহের জনমানুষের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত শব্দসাগরে যুক্ত করেছেন ‘শেখ হাসিনা’ শব্দটিকে। হয়তো এভাবেই গ্রামবাংলার জনমানুষের নিঃসৃত ধ্বনিতে শেখ হাসিনা হয়ে ওঠেছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
সাংগঠনিক সফলতার কারণেই জননেত্রী শেখ হাসিনার আস্থার স্থানে ঠাঁই পেয়েছিলেন অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। দুই দুইবার পালন করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। প্রায় বিশ বছরের মতো পালন করেছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব। দলের প্রতিটি দুঃসময়ে পিতার মতোই আগলে রেখেছেন দলকে। অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহ-৪ আসন থেকে ১৯৮৬ ও ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়াও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে মোট তিনবার তিঁনি ময়মনসিংহ পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও নবম সংসদে তিঁনি রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সহ বিভিন্ন কমিটিতে তিঁনি দায়িত্ব পালন করেন। সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের ফলস্বরূপ বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীত্ব প্রদান করেন। তিঁনি নিষ্ঠা ও সফলতার সাথে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে আসীন রয়েছেন।
বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমান তাঁর রাজনৈতিক জীবনে অসংখ্যবার নির্যাতন-নিপীড়নের স্বীকার হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২৩ মাস কারাবরণ করেন। কারাগারের প্রকোষ্ঠে তাঁর উপরে চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলেও ময়মনসিংহের চারটি সিনেমা হলে বোমা হামলার মিথ্যা মামলায় তিঁনি কারাবরণ করেন। কারাগারে থেকেও দলকে সুসংগঠিত রাখার সকল প্রয়াস অব্যাহত রাখেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অকৃত্রিম অবদানের জন্য অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ২০০০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পদক’ লাভ করেন। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড কালচারাল কনভেনশন ২০০৫ সালে তাঁকে ‘আন্তর্জাতিক শান্তি পুরষ্কার’ পদকে ভূষিত করে।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে নিয়ে বিশদ আকারে লেখার কারণ হচ্ছে এ প্রজন্মের অনেক কিছুই জানার বাকী আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে যারা আওয়ামী লীগের সুদিনে আওয়ামী লীগের রাজনীতির চর্চা শুরু করেছেন তাদের অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে জানার প্রয়োজন আছে। অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের যাপিত জীবন পাঠ করে জানতে পারবে ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের গোড়ার সময়কে। যে সময় আজকের মতো সহজ ছিল না, ছিল বন্ধুর। জানতে পারবে কতো আঁধার পাড়ি দিয়ে ময়মনসিংহ আজ আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। আজ চারিদিকে নেতা হবার কলরব। কিন্তু ময়মনসিংহের প্রকৃত নেতাকে চিনতে হলে জানতে হবে অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে। তবেই একজন কর্মী প্রকৃত নেতা সম্পর্কে তাঁর বোধকে ঋদ্ধ করতে পারবে। তরুণ অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়নি। তবে উনার বৃদ্ধ বয়সেও উনি তারুণ্যতা দেখিয়েছেন সমহিমায়। যা আমাদেরকে আন্দোলিত করে বারংবার।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান শুধু সংগঠনের বর্তমানের কথাই ভাবেননি, ভেবেছেন সুদূর ভবিষ্যতের কথা। দলকে দিনকে দিন মজবুত করার পাশাপাশি নিজের সন্তানকে গড়ে তুলেছেন নিজেরই ছাঁচে। বলছিলাম অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের পুত্র মোহিত উর রহমান শান্ত’র কথা। বলছিলাম আমাদের শান্ত ভাইয়ের কথা, তারুণ্যের শান্ত ভাইয়ের কথা। শান্ত ভাই; প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরিবারে তাঁর জন্ম হলেও কোন দাম্ভিকতা ছিল না তাঁর। বাবার মতোই ব্রহ্মপুত্রের টলমলে পানির মতো করে মিশে যেতেন গণমানুষের সাথে। স্কুলের বন্ধুরা যখন লেখাপড়া আর মাঠের ক্রিকেটের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল তখন তিনি এসবের পাশাপাশি রাজপথে ধরতেন জয় বাংলা স্লোগান। কি তাঁর তেজস্বী কন্ঠ! যে কন্ঠ থেকে নিঃসৃত স্লোগানের বারুদে শরীরে আগুন ঝরে।
শান্ত ভাই যেমন একজন মেধাবী ছাত্রনেতা ছিলেন তেমনি মেধাবী ছাত্রও ছিলেন। শিক্ষা জীবনের প্রতিটি ধাপে যেমন ভালো ফলাফল করেছেন তেমনি রাজনীতির মাঠেও ভালো ফলাফল করার লক্ষ্যে কোন ত্রুটি রাখেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সরকারের অন্যায়ের জবাব দিতে বাঁশের লাঠি হাতে সদলবলে বেরিয়ে পড়েছেন ময়মনসিংহের রাজপথে। দলের চরম দুঃসময়ে হেঁটেছেন দলের কর্মীদের পাশে। সাহস হয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছেন দলের কর্মীদের প্রতি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে হয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের চক্ষুশূল। তৎকালীন সরকার মিথ্যা মামলা, জেল, জুলুম ও হামলার মধ্য দিয়ে তাঁকে দমাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কিন্তু দিন শেষে তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হয়েছে। মোহিত উর রহমান শান্তকে তারা রুখতে পারেনি। ঠিকই দুরন্তমনা শান্ত ভাই রাজপথে এঁকেছিলেন বিজয় চিহ্ন।
আজ আওয়ামী লীগের সুসময়। গণমানুষকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের আলোকিত পথচলাকে রুদ্ধ করতে এই সুসময়েও বারবার বিভিন্ন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু দিনশেষে আওয়ামী লীগের কাছে তাদের পরাজয় মেনে ফিরে যেতে হয়। তার মানে আওয়ামী লীগের কি সাংগঠনিক দূর্বলতা নেই? আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের একজন শ্রদ্ধাভাজন নেতা বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগই’। কথাটি আজকের সময়ে যথার্থ। আওয়ামী লীগে বসন্তে কোকিলের মতো ঝাঁকেঝাকে নেতার উদয় হচ্ছে। যাদের অতীতে ডুবুরি নামিয়ে দিলেও আওয়ামী লীগের রাজনীতি চর্চার অ অক্ষরটিও খুঁজে পাওয়া যাবেনা তারাও আজ কৌশলে আওয়ামী লীগের নেতা। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছে বর্তমান প্রজন্ম। যারা বর্তমান দশকে ছাত্ররাজনীতিতে পা রেখেছে তারা আসল-নকল সোনার মতোই আলাদা করতে পারছে না দুঃসময়-সুসময়ের আওয়ামী লীগ কর্মীদের।
দুঃসময় হোক, সুসময় হোক ময়মনসিংহের গণমানুষের মণিকোঠায় সবসময়ই রাজ করে আসছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ময়মনসিংহের সুপ্রতিষ্ঠিত এ আওয়ামী দুর্গে আজ নেতৃবৃন্দের অভাব নেই। চালকের জায়গা দখলের প্রতিযোগিতায় আজ সবাই ব্যস্ত। এই দখলদারির প্রতিযোগিতায় খুব কমই খুঁজে পাওয়া যায় দুর্দিনের কর্মীদের। কেননা, নেতৃত্ব দখলের রাজনীতির সাথে তারা পরিচিত নয়। দলের সফলতাতেই তৃপ্ত তারা।
অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ময়মনসিংহের আওয়ামী পরিবারের বটবৃক্ষ। শুধু আওয়ামী লীগের শেকড়কে ময়মনসিংহের আনাচে-কানাচে ছড়িয়েই সীমাবদ্ধ থাকেননি, দলের দুঃসময়েও দলকে বৃক্ষের ছায়ার মতো পরশ দিয়ে আগলে রেখেছেন। দল ও দলের কর্মীদের প্রতি উনার অবিরাম ভালোবাসা উনাকে অধিষ্ঠিত করেছে সম্মানের সর্বোচ্চ স্থানে। অথচ আজকের এ সময়ে একদল উনাকেই ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগ থেকে বিয়োগের সংগ্রামে ব্যস্ত। গণমানুষের মণিকোঠায় অধিষ্ঠিত অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে হটিয়ে তারা তাদের কর্তৃত্ব কায়েম করতে চায়। জননেত্রী শেখ হাসিনাকে মাইনাস ফর্মূলা করে দূর্বল করতে সারা বাংলার নেতৃস্থানীয়কে কেনার তোড়জোড় শুরু হয়েছিল, কিন্তু অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে কিনতে পারেনি। অধ্যক্ষ মতিউর রহমান তাঁর আদর্শ থেকে একচুল পরিমাণও বিচ্যুত হননি। ঠিক এভাবেই অধ্যক্ষ মতিউর রহমানকে ময়মনসিংহের আওয়ামী রাজনীতি থেকে মাইনাস করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে। তারা হয়তো ভুলে গেছে বীরপুরুষের ঘর থেকে বীরপুরুষই জন্ম নেয়, বটবৃক্ষের বীজ থেকে বটবৃক্ষই জন্ম নেয়। ময়মনসিংহের আওয়ামী রাজনীতির আলোকিত আগামীর জন্যে অধ্যক্ষ মতিউর রহমান যে বীজ বপন করে গেছেন সে বীজটি হলো মোহিত উর রহমান শান্ত, আমাদের শান্ত ভাই। অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের অসমাপ্ত পথচলাকে সমাপ্ত করতে তিনি যে ভাবনা পরিকল্পনা করেছেন সে পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করা অসম্ভব।
শান্ত ভাই; দলের ঘোর আঁধারের মানুষ, দঃসময়ে রাজপথ দাপিয়ে বেড়ানো মানুষ। তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিল উন্নত জীবন। সুদূর ভারত থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে উন্নত জীবনকে উপেক্ষা করে বাবার মতোই রাজনীতির মাঠে সদর্পে নেমে পড়লেন। বাবা যেন বাস করে ছেলের মজ্জায়-মননে। বাবাও ছিলেন ময়মনসিংহের রসায়নের স্বনামধন্য শিক্ষক। ময়মনসিংহের শিক্ষা প্রসারে বুকে সাহস রেখে প্রতিষ্ঠা করে ফেললেন আলমগীর মনসুর মিন্টু মেমোরিয়াল কলেজ। সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীদের জন্য কলেজকে করেছিলেন সহজতর। সুন্দর জীবনযাপন ছেড়ে গণমানুষের কল্যাণের উদ্দেশ্যে সুসংগঠিত করতে লাগলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। ময়মনসিংহের গণমানুষের সকল সংকটে পাশে ছিলেন দিশা হয়ে। এটাই মনে হয় মানবসেবা। আর সে মানুষটির রক্ত বইছে জননেতা মোহিত উর রহমান শান্ত ভাইয়ের শরীরে। বাবার মতোই সন্তানও নিজেকে সবসময় ব্যস্ত রেখেছেন সব জনকল্যাণকর কাজে।
পিতার রাজনৈতিক ইমেজ ব্যবহার করে শান্ত ভাই কখনো কোন সুবিধা নেননি। বরং একজন স্কুলছাত্র হিসেবে মিছিলের পিছনের ক্ষুদ্রকর্মী হিসেবে ছাত্ররাজনীতি শুরু করেছিলেন। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি করেছেন কর্মীবলও। ধাপে ধাপে এগিয়ে এসেছেন মিছিলের সামনের সারিতে। বিএনপি-জামায়াতের আমলে যখন রাজপথে প্রতিবাদ করতে সবাই ভয় পায় তখন শান্ত ভাই ও তাঁর সহযোদ্ধারাই রাজপথে নেমেছিল। তাঁর অমোঘ কন্ঠের স্লোগানে প্রকম্পিত হতো রাজপথ। যেন সে স্লোগানে জামাতিদের রুহু কেঁপে ওঠতো।
মোহিত উর রহমান শান্ত ভাই দলের দুঃসময়ে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার কারণে জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। পিতার মতোই তাঁর বাগ্মীতা ও সুদক্ষ নেতৃত্বের গুণাবলীর কারণে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাঁকে ময়মনসিংহ মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের পদে অধিষ্ঠিত করেছেন। বর্তমানে অত্যন্ত সফলতার সাথে নেত্রীর দেয়া দায়িত্ব পালন করছেন।
শান্ত ভাই ময়মনসিংহের আওয়ামী রাজনীতির বাতিঘরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। শৈশব থেকেই বাবাকে দেখে দেখে চিনেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক পথকে। তাইতো যেখানে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সন্তানেরা শৈশব ও কৈশোরের কালে রাজনীতি থেকে থাকে বহুদূর সেখানে শান্ত ভাই শৈশবেই আলিঙ্গন করেছিলেন ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ স্লোগানকে। শুধু নিজের মাঝেই নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সহপাঠীদের মাঝেও। সহপাঠীদের সাথে নিয়ে নিয়মিতই যোগ দিয়েছেন মিছিল-মিটিংয়ে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামীর উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে স্কুলজীবন থেকেই গড়ে তুলছিলেন সুবিশাল কর্মী প্লাটুন। বাবার মতোই রাখাল রাজার বেশে গ্রামে-গঞ্জে, পথে-প্রান্তরে সহজিয়া হয়ে জনমানুষের সাথে মিশে গিয়ে মানুষের ভীড় থেকে বাছাই করে সৃষ্টি করেছেন সুবিশাল কর্মী ভান্ডার।
আজ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আসনে বসে যাত্রা করছে আলোর পথে। এ যাত্রাপথের অতীতে আছে অনেক গৌরবময় স্মৃতি, তেমনি আছে অনেক দুঃসহ স্মৃতি। যুগে যুগে আওয়ামী লীগকে দূর্বল করতে আঘাত করা হয়েছে, কর্মীদের উপর চালানো হয়েছে অমানবিক নির্যাতন। ফিনিক্স পাখির মতো আওয়ামী লীগ সব বাঁধাকে অতিক্রম করে আলো ছিনিয়ে এনেছে। বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মতিউর রহমান স্যার, মোহিত উর রহমান শান্ত ভাই সমরসাগর পাড়ি দিয়ে সে আলো ছিনিয়ে আনার সম্মুখ যোদ্ধা। মতি স্যার থেকে শান্ত ভাই, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম আগামীর পথে বয়ে নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে।
দেশরত্ন শেখ হাসিনার তরণীপথে উন্নয়নের পথযাত্রাকে সুগম রাখতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মতি স্যার থেকে শান্ত ভাই চালিয়ে যাচ্ছেন নিরলস পরিশ্রম। ময়মনসিংহের আওয়ামী পরিবারের বটবৃক্ষ মতি স্যারের দলের আগামীর জন্যে রোপিত বীজ আজ মহীরুহে পরিণত হয়েছে। সে মহীরুহটি হলো মোহিত উর রহমান শান্ত, আমাদের শান্ত ভাই। আমরা জাতির পিতার আদর্শিক পথে পথচলার সঠিক দীক্ষা পাই এখান থেকেই। এখান থেকেই আমরা আস্বাদন করি অন্যায়-অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার অমিত সাহস। আওয়ামী লীগের একজন ক্ষুদ্র কর্মী হয়ে এ মহীরুহতলেই খুঁজে পাই প্রকৃত প্রশান্তি। ছায়া হয়ে নয়, বন্ধু হয়ে থাকেন তিনি সহযোদ্ধাদের মাঝে। তাঁর ভালোবাসার কাছে হার মানে বয়সের দূরত্ব। আমরা তাঁর স্নেহতলে পুনর্জাগরিত হই, তারুণ্যপূর্ণ হই। তিনি যেন আমাদের আলোর পথের যাত্রার বহিরবয়ব। ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগকে আগামী প্রজন্মের কাছে যথোপযুক্তভাবে পৌঁছে দিতে হলে আমার অন্তর্দেশে একটি নামই বারবার প্রভাতসূর্যের মতো উদয় হয় – মোহিত উর রহমান শান্ত। ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের দীপ্তিমান আগামীর জন্য শান্ত ভাইয়ের কোন বিকল্প নেই — একথা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। ময়মনসিংহের আওয়ামী লীগের অন্যান্য নির্মোহ কর্মীবন্ধুরাও আমার সাথে এবিষয়ে একমত হবে বলে আশা করি।
লেখকঃ সরকার মোঃ সব্যসাচী ,সাবেক সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ময়মনসিংহ জেলা।