ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্কঃ আবারও সারা দেশে সংগঠিত হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। কেন্দ্রের তরফ থেকে দেওয়া ২০ ধরনের নির্দেশনা দিয়ে আমির কারাবন্দি ডা. শফিকুর রহমানের তরফ থেকে লিখিতভাবে পাঠানো হয়েছে। উদ্দেশ্য সরকারবিরোধী আন্দোলনে চমক দেখানো। বছরের মাঝামাঝি ও শেষ দিকে দুই দফায় সরকার বিরোধী আন্দোলনে বড় ধরনের শোডাউন করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। শোডাউনের আড়ালে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
দায়িত্বশীল একজন ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শুধু সিলেট বিভাগ নয়, দেশের প্রতিটি বিভাগে জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে এমন নির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মোতাবেক অঞ্চল পরিচালক ও টিম সদস্যদের দুই ধাপে মোট ২০ ধরনের করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, কমপক্ষে প্রতি ২ মাসে একবার আঞ্চলিক বৈঠক করা, সদস্য পদ (রুকনিয়াত) মঞ্জুর করা, সাংগঠনিক সমস্যার সমাধান করা, অন্যান্য সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ, প্রয়োজন মোতাবেক টিম সদস্যদের সফরসূচি ঠিক করা, ব্যক্তিগত রিপোর্ট পর্যালোচনা করা, সাংগঠনিক অবস্থা ও বায়তুল-মাল পর্যালোচনা করা, স্টাডি সার্কেল ও শিক্ষা শিবির পরিচালনা করা, নারী আঞ্চলিক কাজের খোঁজখবর নেওয়া ও তদারক করা, জোনাল দায়িত্বশীলরা জেলা অথবা মহানগরীর বৈঠকে কর্মপরিষদ অথবা থানা দায়িত্বশীল নেতাদের নিয়ে যোগদান করা। নির্দেশনা মোতাবেক টিম সদস্যরা নিজ নিজ এনায়ত, এককালীন ধার্য, জাকাত, ওশর, আঞ্চলিক ফান্ডে জমা দেবে। প্রতিটি বৈঠকে সব এজেন্ডা কভার করার চেষ্টা করতে হবে। অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে জেলা বা মহানগরীর আমির, জেলা অথবা মহনগরীর শূরা ও জেলা অথবা মহানগরীর কর্মপরিষদকে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার জন্য সুযোগ দেওয়া এবং উৎসাহিত করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। স্টাডি সার্কেলের জন্য বিশেষ নির্দেশনার মধ্যে কিছু মৌলিক বই ও বিষয়াবলি বিবেচনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানকে ‘জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’ নামের নতুন জঙ্গি সংগঠনটিকে সহায়তা করার দায়ে গ্রেপ্তার হয়। এর আগে গ্রেপ্তার করা হয় নতুন জঙ্গি সংগঠনটির সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক জামায়াতে ইসলামীর আমিরের ছেলে ডা. রাফাত চৌধুরীকে। তাদের কাছে জামায়াতের কর্মকান্ড সংক্রান্ত নানা তথ্য-উপাত্ত জব্দ হয়।
সিটিটিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, জামায়াতে ইসলামী গত বছরের শেষ দিকে ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে। সেই কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে শুরু করে থানা পর্যায় পর্যন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ সময় দেশের ৮টি বিভাগের জন্য আটজনকে মনোনীত করা হয়। তারা পুরো বিভাগের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করবেন।প্রতিটি বিভাগে একটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। গঠিত বিভাগীয় টিমের প্রধানকে সহযোগিতা করার জন্য ৫ জনকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটিকে দলের কার্যক্রম চালানোর জন্য ২০ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সিলেট বিভাগের জামায়াতে ইসলামীর প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বরাবর একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম স্বাক্ষরিত ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নির্দেশনা ও দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের আগামী দুই বছর ২০২৫ সাল পর্যন্ত সিলেট বিভাগের দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন। তাকে সহযোগিতা করবেন ৫ জন সদস্য। তারা হচ্ছেন- অধ্যাপক মো. ফজলুর রহমান, মো. ফখরুল ইসলাম, মাওলানা হাবিবুর রহমান, হাফিজ আব্দুল হাই হারুন ও মো. আবদুল মান্নান। তারা জামায়াতে ইসলামীর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ, সিলেট মহানগরী, সিলেট জেলা উত্তর, সিলেট জেলা দক্ষিণ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালনা করবেন। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং সব ধরনের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। এক্ষেত্রে কোনো রাজনৈতিক দলকে বিবেচনায় নেওয়া হবে না। সে জামায়াতে ইসলামী হোক বা অন্য কোনো দল হোক না কেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
তথ্যসূত্র- দৈনিক সময়ের সমীকরণ