স্টাফ রিপোর্টারঃ ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল আদর্শ দাখিল মাদরাসা। প্রথমে তিনজন শিক্ষক দিয়ে ইবতেদায়ী পাঠদান শুরু হয় মাদরাসাটিতে। এরপর ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পর্যায়ক্রমে বিনা পারিশ্রমিকে নিয়োগ দেওয়া হয় ১৭ জন শিক্ষক ও কর্মচারী। সবাই আশায় ছিলেন একদিন এমপিওভুক্ত হবে মাদরাসাটি। পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবেন। প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে মাদরাসা সুপার রেজাউল ইসলামের মিথ্যা আশ্বাসে কপাল পুড়েছে গণিত বিষয়ের শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের। এদিকে, মাদরাসা এমপিওভুক্তির খবর পেয়ে সিঙ্গাপুর থেকে এসে প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেছেন মো. মোমিনুর রহমান।
জানা গেছে, গেল ২৩ অক্টোবর সারাদেশে ২৭৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে কাদিরকোল আদর্শ দাখিল মাদরাসাটিও এমপিওভুক্তি হয়। বর্তমানে মাদারাসাটিতে প্রায় ১৩০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মো. মোমিনুর রহমান প্রতিষ্ঠানটিতে ২০০৪ সালে যোগদান করেন। এরপর প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২০০৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর চলে যান সিঙ্গাপুর। সেখানেই কাজ করতেন। এরপর হঠাৎ মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হওয়ায় গেল এক নভেম্বর তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামের বাড়িতে আসেন। পরদিন রোববার সকালে গিয়ে মাদরাসায় যোগদান করেন।
ওই শিক্ষকের প্রতিনিধি হিসেবে ক্লাস নিতেন তার ছোট ভাই মিজানুর রহমান। এছাড়াও ২৩ তারিখে এমপিওভুক্তি ঘোষণার পরের তিনদিন সিদ্দিকুর রহমান নামে একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। যিনি এর আগে কখনও প্রতিষ্ঠানে আসেননি।
এদিকে, ২০১৪ সালে মাদরাসাটিতে শ্রম দেওয়া গণিত বিষয়ের শিক্ষক মনোয়ার হোসেনের শিক্ষক নিবন্ধন না থাকা সত্ত্বেও নিয়োগ দেন প্রতিষ্ঠানটির সুপার। বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে মাদরাসায় বিনা বেতনে ক্লাস নেয়ার কথা বলেন সুপার। বর্তমানে গণিত বিষয়ের শিক্ষক মনোয়ার হোসেন প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস নিচ্ছেন।
সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হওয়ার পর সুপার ওই শিক্ষককে জানান, আপনার কোনও চাকরি নেই।
দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে থাকা শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মো. মোমিনুর রহমান বলেন, আমি ২০০৪ সালে প্রথম যোগদান করি। এরপর এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুর চলে যাই। গেল ২৩ তারিখ মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হওয়ায় মাদরাসাটিতে যোগ দিয়ে ক্লাস নিতে শুরু করি।
গণিত বিষয়ের শিক্ষক মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি পাঁচ বছর এই প্রতিষ্ঠানটিতে গণিত বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। ২০১৪ সালে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। আমার শিক্ষক নিবন্ধন নেই। এসব কিছু জেনেও মাদরাসার সুপার রেজাউল ইসলাম ও সভাপতি আলী হোসেন আমাকে বলেন, এই পদে না হলেও অন্য পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, আমি বিএসসি পাশ করেও প্রতিষ্ঠানটিতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে কাজ করতে আগ্রহী। আমার সরকারি চাকরির বয়স শেষ।
কাদিরকোল আদর্শ দাখিল মাদরাসার ১০ম শ্রেণির ছাত্র রিফাত হোসেন জানান, এর আগে কখনও মোমিন স্যার আমাদের ক্লাস নেননি। গেল এক সপ্তাহ ধরে তিনি মাদরাসায় আসছেন।
কাদিরকোল গ্রামের ইউপি সদস্য শামীম কবির বলেন, মাদরাসায় শিক্ষক মনোয়ার হোসেন অনেক পরিশ্রম করেছেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি এই প্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিয়েছেন। হঠাৎ তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মোমিনুর রহমান নামে এক শিক্ষক দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থেকে এমপিওভুক্তির কথা শুনে প্রতিষ্ঠানে এসে যোগদান করেছেন। এছাড়া গত ২৬ অক্টোবর সিদ্দিকুর রহমান নামে একজনকে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে অনিয়ম করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে কাদিরকোল আদর্শ দাখিল মাদরাসার সুপার রেজাউল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ননএমপিও থাকায় শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মোমিনুর রহমান সিঙ্গাপুর চলে যান।তার ছোট ভাই মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতেন।
গণিত বিষয়ের শিক্ষকের নিবন্ধন না থাকার পরেও কিভাবে নিয়োগ দেওয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিবন্ধন থাকলে তাকে প্রতিষ্ঠানে রাখা সম্ভব হতো। এমপিওভুক্তির পর চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মচারীর নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, আগেই নিয়োগ ছিল। গেল ২৬ তারিখে তিনি যোগদান করেছেন।
মাদরাসাটির সভাপতি আলী হোসেন বলেন, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক মোমিনুর রহমান ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সিদ্দিকুর রহমান আগেই প্রতিষ্ঠানে ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন তারা অনুপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, গণিত বিষয়ের শিক্ষকের নিবন্ধন না থাকায় তাকে প্রতিষ্ঠানে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মধুসূদন সাহা বলেন, নিবন্ধন শুরু হয়েছে ২০০৫ সাল থেকে। এরপর থেকে নিবন্ধন ছাড়া কাউকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেওয়া যাবে না।