দিন বড় হওয়ার কারণে দীর্ঘ সময়ে এবার রোজা হতে যাচ্ছে। তার সঙ্গে রোদ-গরমও। তাই রোজায় দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা। রোদ-গরমের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। রোজার কারণে থাকবে না পানি খাওয়ার সুযোগও। তার ওপর সারাদিন ঘাম, প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। কিন্তু রোজা রাখায় তা আর পূরণ করা সম্ভব হয় না। বয়স্কদের এ সমস্যা আরও বেশি হয়। আবার যারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ডাই-ইউরেটিক জাতীয় ওষুধ সেবন করেন, তাদেরও এ সমস্যা হতে পারে।
এদিকে ইফতারে শরবত বা অন্য কোনো পানীয় খেয়ে পিপাসা মেটানোর পর অনেকেই পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার কথা মনে রাখেন না। কাজেই সতর্ক না হলে শরীরে দেখা দিতে পারে পানির ঘাটতি। পানির ঘাটতি দেখা দিলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স হয়। অর্থাৎ শরীরে তরলরূপে থাকা বিভিন্ন লবণ যেমন- সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, পটাসিয়ামের মতো বিভিন্ন উপাদানের অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়। এই অসামঞ্জস্যতার মাত্রা বাড়লে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
পানিশূন্যতার লক্ষণ শরীরে পানিশূন্যতা হলে চোখ গর্তে চলে যায়, দৃষ্টি ঝাপসা হওয়া, প্রস্রাবের রাস্তায় জ্বালাপোড়া, মাথাব্যথা, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, দুর্বলতা, ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা হয়। প্রতিকার সাধারণত প্রতি ঘণ্টায় এক গ্লাস পানি খেতে হয়। রোজায় সারাদিনের পানির চাহিদা পূরণ করতে সে হিসেবে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত বয়স, ওজন ও উচ্চতাভেদে প্রায় ১২ থেকে ১৬ গ্লাস পানি খাওয়া প্রয়োজন। ইফতারিতে বেশি খাবার খাওয়া ঠিক নয়। কারণ খাদ্য পরিপাক করতে গিয়ে প্রচুর পানি ব্যয় হয়। ফলে শরীরে দ্রুত পানিশূন্যতা দেখা দেয়। পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে রমজানে শুধু পানি পরিমাণমতো খেলেই চলবে না।
পাশাপাশি বেশি বেশি অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে, যাতে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালান্স না হয়। যেমন- ডাবের পানি, চিনির শরবত, স্যালাইন, গুড়ের শরবত, লাচ্ছি, দুধ, স্যুপ খাওয়া যেতে পারে। মাছের ঝোল, ডাল, দুধ খেলেও কিছুটা পানির চাহিদা পূরণ হবে। ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্সে ফলের রস পানির চাহিদা পূরণের জন্য ফলের রস খেতে পারেন। এটি ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স করবে। এখন আম, তরমুজ, মাল্টা, নাশপাতি, কমলা, বেলসহ নানারকম মৌসুমি ফল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এসব ফল দিয়ে জুস বানিয়ে খেতে পারেন। শিশুদের পানিশূন্যতা রোধে অনেক পরিবারেই ছোটদেরও রোজা রাখতে দেখা যায়। এ সময় সারাদিন পানি না খাওয়ার কারণে শিশুদেরও দেখা দিতে পারে পানিশূন্যতা।
শিশুদের পানিশূন্যতা দূর করার জন্য ইফতারের পর বেশি পানি, ফলের জুস, ফল, ডাবের পানি খাওয়াতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর খাওয়ানো ভালো। অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, শিশু যেন খুব বেশি ঠান্ডা পানি পান না করে। এতে গলাব্যথা, জ্বর, ঠান্ডা বা টনসিলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ইফতারে ভাজাপোড়া বা তেলজাতীয় খাবার শিশুরাও খুব আগ্রহ নিয়ে খায়। কিন্তু এগুলো কম খেতে দিয়ে ফল, সালাদ বেশি খাওয়াতে হবে। পেট ঠান্ডা থাকবে। বাড়তি সতর্কতা আসলে রোজার সময় একটু সতর্ক হলেই আমরা পানিশূন্যতা থেকে বাঁচতে পারি। এর জন্য প্রয়োজন কেবল নিয়ম করে সঠিক পরিমাণে পানি খাওয়া আর যেসব কারণে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যায় সেগুলো এড়ানো।
এ জন্য ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। একবারে বেশি পানি খাবেন না, বরং অল্প অল্প করে তৃষ্ণা অনুযায়ী পানি পান করুন। সেহরি ও ইফতারে তাজা ফল আর শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এই খাবারগুলোয় আছে প্রচুর আঁশ আর পানি। ফলে দেহে পানিশূন্যতা কমায়। খুব ঝাল-মসলাযুক্ত ভাজাপোড়া খাবার সেহরি বা ইফতারে খাবেন না। এসব খাবার তৃষ্ণা বাড়ায়।
খাবারে লবণ কম ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে। ইফতারের পর চা বা কফি পানের অভ্যাস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে আনুন, অতিরিক্ত চা-কফি প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ায়, ফলে শরীরে পানিশূন্যতা হতে পারে। ঘামের সঙ্গেও শরীর থেকে প্রচুর লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। তাই রোজায় বাইরে গেলে রোদ এড়াতে ছাতা ব্যবহার করুন এবং দীর্ঘক্ষণ রোদের কাজ এড়িয়ে চলুন।