নিজস্ব প্রতিবেদক:মুক্তাগাছায় জোর পূর্বক জমি জবরদখল করতে চলাচলের রাস্তায় বাঁশের বেড়া বন্ধ করে দিয়েছে ভূমিদস্যু চক্র। এতে ৬টি পরিবারের অন্তত ৩০-৩৫ জন অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। প্রায় ১৬ দিন যাবত বন্ধ রয়েছে চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি। উপজেলার দাওগাঁও ইউনিয়নের বাওকপালীয়া গ্রামে মৃত: হযরত আলীর পুত্র সামাদ ও কাজীমদ্দিন গং তাদের চাচা আঃ কাদের ও তার পরিবারের লোকজনসহ মৃত: হযরত আলীর অপর ৩ সন্তান এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চলাচলের রাস্তাটিতে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে।
এবিষয়ে প্রতিকারের আশায় মুক্তাগাছা থানা , উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুক্তাগাছা ও স্হানীয় সাংসদ কৃষিবিদ ড. নজরুল ইসলাম বরাবর ( সাংসদের প্রতিনিধির মাধ্যমে) অভিযোগ করার ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও রাস্তার বেড়া অপসারণ হয়নি। বরং রাস্তার বেড়া সরিয়ে নিতে লোক মাধ্যমে লাখ টাকা ঘুষ দাবী করা হয়েছে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে সামাদ গং দীর্ঘদিন যাবৎ ভূমিদস্যুতা চালিয়ে আসছে। তাদের ভূমিদস্যুতা ও ঘুষ বানিজ্যের স্বীকার হয়েছেন অনেকেই। সামাদ গং এর ভূমিদস্যুতার শিকার হয়ে সিরাজুল ইসলাম নামের চন্দনীআটা গ্রামের এক ব্যাক্তি মানষিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে স্ত্রীও তাকে ছেড়ে চলে যায়।
স্থানীয়সূত্রে জানাযায়, সামাদ গং অত্র এলাকার চিন্হিত ভূমিদস্যু। ভূমিদস্যু চক্রের মূলহোতা ওয়ার্ড(৬ ও ৭ নং ওয়ার্ডের) আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়দানকারী ২ ব্যাক্তি। যারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পান। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললেই সামাদ গংদের দিয়ে হামলা ও মিথ্যা ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করার মাধ্যমে এলাকা থেকে বিতারিত করাসহ মোটা অংকের অর্থ আদায় করা হয় সাজানো শালিসের মাধ্যমে। তাদের এমন অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ।
সামাদ গং খাজুলিয়া এলাকার বিধবা হায়তন নেছার পরিবারের ২০ শতাংশ জমি জোর পূর্বক জবর দখল করে রেখেছে, বাওকপালীয়া এলাকার আঃ কাদের এর ৩ শতাংশ জমি, রাশিদুল ইসলামের ৬ শতাংশ, সিরাজুল ইসলামের ৩০ শতাংশ জমি জবরদখল করে রেখেছে। চন্দনীআটা এলাকার আব্দুস সামাদ (জেলে) ৩ বার জমি রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করলেও তাকে দখল উচ্ছেদ করে অন্যত্র বিক্রি করে তারা। মহেশপুর এলাকায় জমি দখল করাতে গিয়ে জয়নাল জলিলের উপর হামলা ও মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়। মামলাটি এখনো আদালতে চলমান।
এছাড়াও রাস্তায় বেড়া দিয়ে এবং চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে জমি দখল ও ঘুষ বানিজ্য করার ঘটনাও অহরহ। ইতিপূর্বে বাওকপালীয়া এলাকার আঃ কদ্দুস খান (কবিরাজ)দের চলাচলের রাস্তায় প্রথমে বেড়া পরবর্তীতে সরকারি রাস্তায় স্থায়ী স্থাপনা (ঘর) নির্মাণ করে রেখেছে জোনাব আলী। নেপথ্যে রয়েছে ভূমিদস্যু সামাদ গং।
এনিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যগন একাধিক শালিসর এবং রাস্তার বেড়া উচ্ছেদ করলে পরবর্তীতে রাস্তার অর্ধেকাংশে ঘর নির্মাণ করা হয়। কুদ্দুসের পরিবার জানায় তাদের কাছে লোক মারফত ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করা হয়েছিল। ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় রাস্তার উপরে ঘর নির্মাণ করা হয়।
এবিষয়ে প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হলে প্রশাসন ভূমি অফিসের লোকজনকে ঘটনাস্থলে পাঠালেও রাস্তাটি ঠিকই বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন, তারা প্রথমে সাবেক সাংসদ কেএম খালিদ, বর্তমানে কৃষিবিদ ড. নজরুল ইসলামের নাম ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন। প্রভাবশালী ঐ দুই ব্যক্তিকে এসব অপকর্মের কারণে তাদেরকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিগত সংসদ নির্বাচনে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী কৃষিবিদ ড. নজরুল ইসলামের নির্বাচন করেন। কৃষিবিদ ড. নজরুল ইসলাম বিজয়ী হওয়ায় এখন আরো বেপরোয়া এই চক্রটি।
এলাকায় প্রচার রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে যোগসাজশের মাধ্যমে জমি দখল ও ঘুষ বানিজ্য করে থাকেন এই চক্রটি। সবশেষ বাওকপালীয়া গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের পুত্র দিন মুজুর রাশিদুল ইসলামের ৬ শতাংশ জমি জবরদখল করতে এই প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নেতৃত্বে জবরদখলের চেষ্টা করা হয় এবং যাতে জমি টুকু দখল করতেই রাস্তায় বেড়া দিয়ে রাস্তা বন্ধ করা হয়। এর প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও বর্তমান সাংসদ বরাবর অভিযোগ করেও ১৬ দিনেও কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। এদের বিরুদ্ধে এর আগেও উপজেলা প্রশাসন বরাবর অভিযোগ করলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এতে করে প্রশাসনের সাথে তাদের যোগসাজশের বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
গত ২৬ শে মার্চ সকালে সামাদগং দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে এবং ভূমিদস্যু চক্রের নির্দেশে ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বারের পুত্র বিল্লাল হোসেন এবং কাইয়ুম কিছু ভাড়াটিয়া মাস্তান নিয়ে এসে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। তাতে আব্দুল কাদের এবং তার আশপাশে ৬টি পরিবারের একমাত্র চলাচলের রাস্তাটি ১৬ দিন যাবত বন্ধ। এতে ৬ পরিবারের ৩৫ জন লোকজন গৃহবন্দী অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
এই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মুক্তাগাছা থানায় এবং স্হানীয় সাংসদ বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও এখনো পর্যন্ত বাঁশে বেড়া সরানোর ব্যাপারে কার্যত কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এ বিষয়টিকে নিয়ে এলাকার চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে সামাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বাঁশের বেড়া দেইনি। কে দিয়েছে এ প্রশ্ন করলে তিনি সদোত্তর দিতে পারেননি। এবং এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে উক্ত গ্রামের ইউপি সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সামাদ গংদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের শেষ নেই। তারা নিজেদের বর্তমান এমপির লোক দাবী করে সকল প্রকার অপকর্ম করে আসছে।
এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের ব্যবহৃত নাম্বারে যোগাযোগ করলে তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উক্ত ঘটনায় মুক্তাগাছা থানায় আঃ কাদের বাদী থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই হুমায়ূন। তবে ১৬ দিন অতিবাহিত হলেও রাস্তা অপসারণ হয়নি। এতে করে পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিনও অবরুদ্ধ রয়েছে পরিবার ৬টি। রাজনৈতিক প্রভাবে রাস্তা বন্ধ করে জমি দখল ও ঘুষ বানিজ্য বন্ধে মাননীয় জাতীয় সাংসদ, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান স্থানীয়রা।
ধারাবাহিক ২য় পর্বে ভূমিদস্যু চক্রের মুলহোতাদের বিষয়ে বিস্তারিত প্রকাশিত হবে……….