নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের ঘাটাইল ও আশপাশের এলাকা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উদাও হয়েছেন এক ব্যাক্তি। সে নিজেকে নবাব স্যার সলিমুল্লাহর পুত্র পরিচয় দিয়ে সরকারি ( নায়েব আলীসহ অন্যান্যদের দখলকৃত) জমি রেকর্ড ও দলিল করে দিবেন বলে প্রতারণার মাধ্যমে ২০-২৫ জন ব্যক্তির কাছ থেকে এসব অর্থ হাতিয়ে নিয়ে উদাও হয়েছেন তিনি। তার প্রতারণার স্বীকার হয়ে উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের ফুলমালীর চালা এলাকার বাসিন্দা মৃত সাহেব আলীর পুত্র সত্তর উর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নায়েব আলী অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। নায়েব আলী পেশায় ছিলেন শিক্ষক। অবসরে গেছেন গত ২০১২ সালে। সবসময় ছাত্রদের সৎ ও আদর্শের বানী পড়াতেন এবং সঠিক পথে থাকার নির্দেশনা প্রদান করতেন। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও শিক্ষাদানের ফলে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন অনেকে। বর্তমানে সেই শিক্ষক প্রতারণার শিকার হয়ে অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
দেশ সৃষ্টির পূর্বে জমিদারি আমলের দাপট শালী নবাব স্যার সলিমুল্লাহর পুত্র পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে নায়েব আলীর কাছ থেকে তার সর্বস্ব হাতিয়ে নেন। কথিত সেই নবাব পুত্রের নাম ফাইয়াজ আলম খাজা রাসেল। এছাড়াও রাসেল নিজেকে মিরপুর ১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার আত্নীয় পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে এসব অর্থ হাতিয়ে নেন । ভুক্তভোগীর তথ্যমতে খাজা রাসেলের বসবাস রাজধানীর মিরপুরের কোন এক এলাকায়। ফুলমালীর চালা এলাকা বন বিভাগের আওতাভুক্ত হওয়ায় নায়েব আলীর নামে ভূমি রেকর্ড করে দেওয়ার কথা বলে হাতিয়ে নেওয়া হয় প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা।
নায়েব আলী জানান, গত ২০১৮ সালে পার্শ্ববতী সখিপুর উপজেলার দলিল লেখক তার আত্মীয় প্রয়াত মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে পরিচয় হয় নবাব পুত্র পরিচয়দাকারীর সাথে। দাবিকৃত নবাবপুত্র ভূমি সংক্রান্ত মামলার কাগজপত্র দেখিয়ে দখলমূলে ৭ একর জমি দলিল করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন নায়েব আলীকে। নায়েব আলী তার আত্মীয় প্রয়াত মোহাম্মদ আলী একজন দলীল লেখক হওয়ায় তার প্রতি আস্থার ভিত্তিতে প্রতারক ফাইয়াজ আলম খাজা রাসেলকে বিশ্বাস করেন। পূর্বে নায়েব আলীর দখলে থাকা বন বিভাগের জমি তার নামে রেকর্ড করার জন্য শিক্ষক নায়েব আলীর অবসর ভাতার ৮ লক্ষ এবং রেকর্ডকৃত নিজের সকল সম্পত্তি বিক্রি করে মোট ১৪ লক্ষ টাকা দেন ফাইয়াজ আলম খাজা রাসেলকে। দেড় মাস সময়ের মধ্যে জমি রেকর্ড হবে ফাইয়াজ আলম খাজা রাসেল এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে সটকে পড়েন।
নায়েব আলী তখন অনুধাবন করতে না পারলেও এখন আর তার বুঝতে বাকি নেই তিনি যে চরমভাবে প্রতারিত হয়েছেন। নায়েব আলীর আত্মীয় দলিল লেখক হওয়ায় তার কথার ভিত্তিতেই টাকা দিয়েছিলেন ফাইয়াজ আলম খাজা রাসেলকে। পরবর্তীতে মোহাম্মদ আলী অপ্রত্যাশিত ভাবে পরলোকগমন করলে কথিত নবাব বংশধরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় নায়েব আলীর।
জীবনের শেষ সময়ে পৌঁছেছেন নায়েব আলী। তিনি প্রতারণার স্বীকার হয়ে ধ্বংস হয়েছে তার বংশধরদের সকল স্বপ্ন। নিজের বলতে কিছুই নেই নায়েব আলীর। বর্তমানে থাকেন বন বিভাগের আওতাভুক্ত ভুমিতে। যে ভুমিটি দলিল করে দিবেন বলে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে নায়েব আলীর চাকুরী জীবনের শেষ সম্বল পেনশন ও তার নিজ নামে রেকর্ডকৃত জমিটুকু বিক্রির ১৪ লক্ষ ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
কি উপায় আছে তার টাকাগুলো উদ্ধার হওয়ার? নাকি নায়েব আলীর নামে পূর্বের দখল সূত্রে থাকা ভূমি রেকর্ড হবে? এ প্রশ্নের উত্তর থেকে কতটা দূরে নায়েব আলী ও তার পরিবার? বর্তমান পরিস্থিতিতে এটি নায়েব আলী বাদে কেউ অনুধাবন করতে পারার কথা না। দেশের সর্বোচ্চ ব্যাক্তি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন সাবেক এই শিক্ষক। পাশাপাশি মিরপুর ১৬ আসনের সংসদ সদস্য ইলিয়াস মোল্লার হস্তক্ষেপ কামনা করেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নায়েব আলী। সচেনমহল ও স্থানীয়রা মনে করেন, নায়েব আলীর বর্তমান ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে ন্যায় বিচারের স্বার্থে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকতাগণ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এবিষয়ে জানতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক নায়েব আলীর কাছ থেকে পাওয়া ০১৮১২৪২৮৩৯৭ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফাইয়াজ আলম খাজা রাসেল নন বলে জানান। এসময় তিনি আরো বলেন, এই ঘটনার সাথে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই। ভবিষ্যতে তাকে ফোনে বিরক্ত না করার জন্য বলেন তিনি।