আরিফ রববানী,ময়মনসিংহঃ ময়মনসিংহে ভুয়া পিবিআই অফিসার সেজে প্রতারণা করত এক যুবক। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। প্রতারণার অভিযোগে ভুয়া পিবিআইকে গ্রেফতার করেছে ময়মনসিংহ পিবিআই। তার নাম আব্দুল কাইয়ুম অনিক। সে পিবিআই অফিসার সেজে মানুষকে ভয় দেখিয়ে আর্থিক বাণিজ্য করতো।
শুক্রবার ৬জানুয়ারী দুপুরে পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার এ তথ্য জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গত ২রা জানুয়ারী সন্ধ্যায় মোঃ আব্দুর রাশেদ @ রাশিদুল ইসলাম রাশিদ (৩০) ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলাস্থ তার সেবা ডায়গনস্টিক সেন্টারে অবস্থানকালীন সময়ে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি নিজেকে পিবিআই ময়মনসিংহ এর এসআই ফারদিন আহম্মেদ পরিচয় দিয়ে কল করে জানায়, “তোমার নামে পিবিআইতে একটি মামলা হয়েছে এবং মামলার ওয়ারেন্ট আছে। তুমি আমাদের নগদ/বিকাশ ০১৯৯৬xxxxxx নম্বরে ৫০,০০০/- (পঞ্চাশ হাজার) টাকা পাঠাও, আমরা আসবনা, মামলাটি এখানে শেষ করে দিব”। পাশাপাশি প্রতারক চক্র সুচতুরতার সাথে তাদের তৈরিকৃত কাল্পনিক একটি এফআইআর রাশিদুলের ইমু আইডিতে প্রেরণ করে। এফআইআরের আসামীর কলামে “এপি-স্কুল রোড, উচাখিলা, ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সেবা ডায়গনস্টিক সেন্টার, মোঃ রাশিদুল ইসলাম রাশিদ লেখা”। তদন্তকারী কর্মকর্তার কলামে “মামলাটি পুলিশ উপ পুলিশ পরিদর্শক ফারদিন আহম্মেদ, জেলা পিবিআই তদন্ত তদারকি করবেন” মর্মে লেখা ছিল। পরবর্তীতে গত ৩রা জানুয়ারি সকালে ও বিকালে অজ্ঞাত প্রতারকরা রাশিদুলের মোবাইল নম্বরে ফোন করে তাদের নগদ/বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলে অথবা পিবিআই অফিস, ময়নার মোড়, ময়মনসিংহে টাকা নিয়ে আসতে বলে। রাশিদুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে তার পরিচিতজনদের সাথে আলোচনা করে পিবিআই, ময়মনসিংহ অফিসে গিয়ে জানতে পারেন এসআই ফারদিন আহম্মেদ নামে কোন পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে কর্মরত নাই। নিশ্চিত প্রতারণা বুঝতে পেরে রাশিদুল ইসলাম পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পিবিআই এর অ্যাডিশনাল আইজিপি, বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, ময়মনসিংহ ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর সার্বিক সহযোগীতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) অমিতাভ দাস অভিযোগটির বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেন।
পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার এর দিক নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে অজ্ঞাতনামা প্রতারকদের পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হন। বিষয়টি রাশিদুল ইসলামকে জানালে তিনি পিবিআই, ময়মনসিংহ জেলার সহযোগীতায় ঈশ্বরগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেন। তৎপ্রেক্ষিতে ঈশ্বরগঞ্জ থানার মামলা নং-০২, তাং-০৫/০১/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-১৭০/৩৮৫/
৪২০/৪৬৮/৪৭১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার বলেন, কথিত পিবিআই এর ভূয়া এসআই প্রতারক ফারদিন আহম্মেদ ও অন্যান্য সদস্যরা ছদ্মবেশে নিত্য নতুন প্রতারণা করে মানুষকে ঠকিয়ে থাকে।
পুলিশ সুপার মোঃ রকিবুল আক্তার আরও বলেন, এটি পিবিআইএর নামে প্রতারণার মত একটি দুঃসাহসিক ও চাঞ্চল্যকর ঘটনা। মামলা রুজুর পর পরই প্রতারকদের গ্রেফতারে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। এক পর্যায়ে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে ক্ষিপ্রতার সাথে ৬জানুয়ারী গভীর রাতে ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন উচাখিলা এলাকা হতে প্রতারক চক্রের অন্যতম প্রধান আসামী আব্দুল কাইয়ুম অনিক কে গ্রেফতার করা হয়। প্রতারক চক্রের সকল সদস্যদেরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। উল্লেখ্য যে, এই মামলার প্রতারক চক্রের সদস্যগণ বৃহত্তর ময়মনসিংহে বিভিন্ন পাবলিক/সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, জাল-জালিয়াতিসহ ডিজিটাল প্রতারণার সাথে জড়িত। তাদের নামে প্রতারণার মামলা/মোকদ্দমা রয়েছে। ৬জানুয়ারী গ্রেফতারকৃত আসামীকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।