অনলাইন ডেস্কঃ ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাংলাদেশে একটি সরকারি ছুটির দিন। জাতির প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন,শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ‘জাতির জনক’ হিসেবে পরিচিত। প্রায়শই ‘মুজিব’ বা ‘শেখ মুজিব’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়, তাকে স্বাধীন জাতি, বাংলাদেশের প্রধান স্থপতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৪ সালের বিবিসি জরিপে, মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি নির্বাচিত হন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের সেই অন্ধকার রাতে নৃশংস ঘাতকরা সমগ্র বাঙালি জাতির নজিরবিহীন নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা, জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামালকে হত্যা করে। জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধু শেখ নাসেরের ভাই, এসবি সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল, সেনাসদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, প্রায় একযোগে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মনির বাসভবনে হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হককে হত্যা করে। মনি, তার গর্ভবতী স্ত্রী আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর শ্যালক আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা চালিয়ে সেরনিয়াবাত ও তার মেয়ে বেবী, ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, সেরনিয়াবাতের বড় ভাই সজিব সেরনিয়াবাতের ছেলে ও আত্মীয় বেন্টু খানকে হত্যা করে। সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মরণে জাতি গভীর সমবেদনা ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করে ও প্রতি ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশে জাতীয় শোক দিবস।
স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার (১৫ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবসে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসহ সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।
সোমবার সকালে ৬টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্রবাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান এবং মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে জাতির পিতার পরিবারের সদস্যরা ও অন্য শহীদদের কবরে প্রধানমন্ত্রীর পুষ্পস্তবক ও ফুলের পাপড়ি অর্পণের পর ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে।
এদিন সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সশস্ত্রবাহিনীর গার্ড অব অনার প্রদান ছাড়াও সমাধি কমপ্লেক্সে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করা হবে।শোক দিবসে সারাদেশের মসজিদগুলোতে বাদ যোহর বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে জাতীয় দৈনিক ও সাময়িকীতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। এছাড়া শোক দিবস উপলক্ষে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর পোস্টার প্রকাশ করেছে। সারাদেশে গণযোগাযোগ অধিদপ্তর বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবে। তথ্য অধিদফতর বাংলাদেশ সচিবালয়ে সপ্তাহব্যাপী আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করবে।
বিভাগীয় পর্যায়ে আঞ্চলিক তথ্য অফিস আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করবে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন শোক দিবস উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করবে।
সব সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আলোচনা সভা, কবিতা পাঠ, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, হামদ-নাত প্রতিযোগিতা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে। জাতীয় কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালিত হবে।
অনুষ্ঠানগুলোতে সরকারি কর্মকর্তাদেরকে আবশ্যিকভাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে হবে। দেশের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ শোক দিবসের নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করবে।
ধানমন্ডি, বনানী ও টুঙ্গিপাড়ার অনুষ্ঠান বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে। এছাড়া অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, এফএম বেতার ও কমিউনিটি রেডিও এ অনুষ্ঠানগুলো সরাসরি সম্প্রচার করবে।