মোঃ আনিসুর রহমানঃ মাত্র নয় বছর বয়সেই পরিবারের সদস্যদের দায়িত্ব নিতে হয়েছে শিশু তামিমকে। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা। বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মেতে থাকার কথা। ঠিক সেই বয়সে সব কিছু ত্যাগ করে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে তাকে। মাত্র ০৯ বছর বয়সেই টানতে হচ্ছে ৬ সদস্যের সংসারের ঘানি। সংসারের বড় ছেলে তামিম তাই এখন সে ঐ পরিবারের অভিভাবক। শিশু তামিমের সংসারে ছোট ০২ ভাই ও ০২ বোন এবং তার মা সহ ০৬ জন সদস্য। তামিম নিজে লেখাপড়া বাদ দিয়ে একটি বেকারিতে মাসিক ৩ হাজার টাকা বেতনের কাজ করে এবং ঐ টাকা দিয়েই সংসারের খরচ বহন করছেন।
তামিম ফুলবাড়িয়া উপজেলার ০১নং নাওগাঁও ইউনিয়নের হরিরামবাড়ী এলাকার জুলহাস মিয়ার ছেলে। জানা গেছে,জুলহাস নাওগাঁও ইউনিয়নের হরিরামবাড়ী এলাকার আঃ জব্বারের বড় মেয়েকে বিয়ে করেন ১৫ বছর পূর্বে । বিয়ের পর থেকে আঃ জব্বারের বাড়ির সাথে ও বানার নদীর পাড়ে সরকারী জমিতে চৌদ্দ হাত লম্বা টিন সেটের পুরাতন ঘর তৈরি করে দেন।এর পর থেকে সেখানেই বসবাস করে আসছিলেন জুলহাস ও তাসলিমা দম্পতি। এর মধ্যে তাদের সংসারে জন্ম নেয় পাঁচ টি সন্তান। অভাব অনটনের মধ্য দিয়েই কোন রকমে চলছিল তাদের সংসার। হঠাৎ গত ২০২০ ইং সালের ডিসেম্বরে জুলহাস (নিশ্চিন্তপুর) বাক্তা ইউনিয়নে আরেকটি বিয়ে করে শশুর বাড়িতে চলে যায়। এরপর থেকে সংসার নামক সমুদ্রের অথই জলে হাবুডুবু খেতে থাকে তামিমের পরিবার। পরিবারে উপার্জন করার মত কোন লোক না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করতে থাকে। এমতাবস্থায় বন্ধ হয়ে যায় তামিমের লেখা পড়া। হাফেজি মাদ্রাসা পড়াশুনা করা ছোট্ট তামিম দায়িত্ব নেন সংসারের।স্হানীয় একটি বেকারিতে ৩ হাজার মাসিক বেতনে কাজ শুরু করে এবং ঐ টাকা দিয়েই সংসার চালাচ্ছে কোন মতে।
প্রায় বছর খানেক পূর্বে জুলহাস আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যাওয়ার পর তামিম ও তার দুই ভাই, দুই বোন এবং মাতাসহ ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছে । তাদের জায়গা জমি ধন সম্পদ বলতে হরিরামবাড়ী দিয়ে প্রবাহিত বানার নদীর পাড়ে সরকারি জমিতে ১৪ হাত লম্বা একটি ঘর। ঘরটিতে ব্যবহৃত টিন গুলোও ছিদ্র ছিদ্র বৃষ্টি পানি মাটিতে পড়ার আগেই ঘর ভিজ যায়। সংসারে অভাব অনটন তামিম ও তার পরিবারের নিত্যদিনের সঙ্গী।
স্থানীয় তায়েব আলী জানায়, পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তামিম সবার বড় । তার মা তাসলিমা বেগমসহ (৩৫) পরিবারে রয়েছে তার ছোট ভাই শরীফ (০৭),সাইদ (০৫) ছোট বোন জোনাকি (০৩) ও আয়েশার বয়স দেড় বছর। ছয় সদস্যের ওই পরিবারের ঘানি টানতে তামিমের পাশাপাশি মা তাসলিমা ঝিয়ের কাজ করেন অন্যের বাড়িতে।
তামিমের মা তাসলিমা জানান, তাঁর স্বামী আরেকটি বিয়ে করে শশুর বাড়িতে চলে যাওয়ার পর বড় ছেলে তামিম (০৯) মাদ্রাসায় পড়া বাদ দিয়ে স্থানীয়দের সহায়তা একটি বেকারিতে কাজ করছে এবং সে নিজেও মাঝে মধ্যে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় তাদের থাকার ঘরের টিনের চালটিতে অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে যা কোন রকম বৃষ্টি হলেও ঘরে থাকার মত অবস্থা থাকেনা।এমনকি একটি ফ্যান কিনে ঘরে লাগানোর মত সামর্থও তাদের নেই বলে জানান স্থানীয়রা। এমতাবস্থায় এই অসহায় পরিবারটিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে সরকারি, আধা সরকারি, প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যাক্তিগত সহযোগিতা কামনা করেন এলাকাবাসী।
তামিম জানায়, লেখাপড়া করতে তার মন চায়। কিন্তু সংসারের অভাব মোচনে তাকে এ বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। আর তামিমের স্বপ্ন তার ছোট দুই ভাই ও দুই বোনকে পড়াশোনা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। এভাবেই একদিন অভাবকে জয় করবে তারা।