ত্রিশাল প্রতিদিন ডেস্ক:: সৌদি আরবে বাংলাদেশীসহ বিদেশীদের ব্যাপক ধরপাকড় চলছে ও দেশে ফেরত পাঠানো অব্যাহত রয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশীরা দেশে ফিরে আসছেন শূণ্য হাতে। কাজের বৈধ অনুমোদন বা আকামা থাকা সত্ত্বেও এরই মধ্যে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশীকে দেশটি থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
সৌদি থেকে ফেরত আসা গোপালগঞ্জের ছেলে সম্রাট শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আট মাসের আকামা ছিলো তার। নামাজ পড়ে বের হলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। কোনো কিছু না দেখেই দেশে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে ফেরত আসা সাইফুল ইসলামের বাড়ী নারায়ণগঞ্জে। তার অভিযোগ, আকামার মেয়াদ দেখানোর পরেও তাকে দেশে পাঠানো হয়। সাইফুল বলেন, মাত্র নয় মাস আগে সৌদি আরব গিয়েছিলেন, আকামার মেয়াদও ছিলো ছয় মাস।
চট্টগ্রাম জেলার আব্দুল্লাহ বলেন, আকামা তৈরির জন্য আট হাজার রিয়াল জমা দিয়েছেন কফিলকে। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতারের পর কফিল তার কোনো দায়িত্ব নেয়নি। ফেরত আসা কর্মীরা এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি জানান। আর কাউকে যেন তাদের মতো পরিস্থিতির শিকার হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য করা না হয় সে দাবিও করেন তারা।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন চাঁদপুরের বাবুল হোসেন। কিন্তু কাজের বৈধ অনুমোদন বা আকামা থাকা সত্ত্বেও গেল মাসে শূন্য হাতে, খালি পায়ে, কাজের পোশাক পরেই তাকে দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়। শুধু বাবুল একাই নন, দেশটি থেকে এরকম আরও অনেক বাংলাদেশিকে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। উল্লেখ্য সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে বাবুলসহ ১৭৫ জন বাংলাদেশি কর্মীকে সৌদি আরব থেকে ফেরত পাঠানো হয়।
এক্ষেত্রে সৌদিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের কোনো সহযোগিতা করেনি অভিযোগ করে কর্মীরা আরও বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনই ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে।
তবে সৌদি আরবে দীর্ঘদিন ধরে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা সৌদি আরবের আইন সম্পর্কে সচেতন, তাদের কারো কারো মতে মূলতঃ যে কয়েকটি প্রধান কারণে সৌদি আরব থেকে প্রবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে সেগুলো হলো-
১। সৌদি সরকার নতুন সৌদি করণ নীতিমালার আলোকে শুধুমাত্র সৌদি নাগরিকদের জন্য যে সব কাজ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, সে সব কাজে কোন বিদেশীকে উক্ত কাজে পাওয়া গেলে।
২। নিজের স্পন্সর বা কফিল ব্যতীত অন্য কফিলের অধীনে কোনো কোম্পানিতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে।
৩। রাস্তা ঘাটে বা পাড়া মহল্লায় অবৈধভাবে মালামাল বিক্রি করলে।
৪। আকামায় (ওয়ার্ক পারমিটে) উল্লেখিত পেশার পরিবর্তে অন্য পেশায় কাজ করলে।
৫। কফিলের সাথে কোন সমস্যা হওয়ায় বা কফিলের কাজ থেকে পালিয়ে যাওয়ায় কফিল অভিযোগ করে দিলে।
৬। দীর্ঘদিন যাবত আকামা (ওয়ার্ক পারমিট) নবায়ন না করলে।
৭। এছাড়া সৌদি আইন অমান্য যেমন- দোকান বা রাস্তা ঘাটে আড্ডা মারলে, অহেতুক ঘোরাফেরা করলে, অশালীন পোষাক পরিধান করলে, কারো সাথে ঝগড়া মারামারি করলে, মেয়েদের দিকে তাকালে বা মেয়েদের উক্ত্যক্ত করলে, নামাজের সময় মসজিদে না গিয়ে রাস্তায় পাওয়া গেলে।
৮। নিজস্ব (প্রাইভেট) গাড়িতে প্যাসেঞ্জার উঠালে বা ভাড়া মারলে।