শুধু কি প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলেই একটি দেশ ধনী হয় ?

পারস্য উপসাগরের ছোট্টদেশ কাতার। এতো ছোট এই দেশটি যে- আপনি যদি ম্যাপের দিকে তাকান হয়তো আপনার নজরেই আসবেনা। কাতারের আয়োতন মাত্র ১০হাজার বর্গকিলোমিটারের একটু বেশি আর জনসংখ্যাও প্রায় ৩০ লাখের মতো।

বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় ১৩গুন ছোট এই দেশটিও স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের সময় কাতার ছিল এক অনুন্নত দরিদ্র জেলে পল্লী। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর কাতার আজ পৃথিবীর সবচেয়ে ধনীরাষ্ট্র। বিশ্বের অন্যতম এই ছোট দেশের মাথাপিছু বার্ষিক আয় প্রায় ১,২০,০০০ ডলার, যা কিনা ফ্রান্সের চেয়েও তিনগুণ বেশি! ২০২২ সালে ফুবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হতে চলেছে কাতার। বর্তমান পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবশালী মিডিয়া আল-জাজিরার মালিক হচ্ছে কাতার। কাতার গত এক দশকে লন্ডনে প্রচুর সম্পদ কিনেছে ।কয়েকমাস আগে কাতারের অর্থমন্ত্রী বিবিসিকে
জানিয়েছিলেন, যুক্তরাজ্যে তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ৪৫ থেকে ৫১ বিলিয়ন ডলারের।

আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরো পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ডের মতো সম্পদ ক্রয়ের ইচ্ছা আছে মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটির।

এখন একটি প্রশ্ন আমাদের সামনে আসতেই পারে, তাহলো আজকে কাতারের এইযে ঝাচকচকে উন্নয়ন তার পিছনে কি রয়েছে সুধুই প্রকৃতিক সম্পদের আবিস্কার, নাকি আরো গল্প রয়েছে এর পিছনে? এর উত্তর জন্য একটি ভিন্ন চিত্র আপনাদের সামনে উপস্থাপন করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

ল্যাটিন আমেরিকার দেশ ভেনিজুয়েলার তেলের মজুদ প্রায় সৌদি আরবের মতো। কিন্তু তারপরও বর্তমান প্রথিবীতে অন্যতম আলোচিত সমস্যাসঙ্কুল দেশ ভেনিজুয়েলা। দেশটিতে তীব্র দরিদ্র এবং বিশাল ধনবৈসম্য বিদ্যমান। ভেনিজুয়েলায় মুদ্রাস্ফীতির পরিমান৮০.০০০%। আপনার পকেট ভর্তী টাকা থাকলেও জিনিসপত্রের উচ্চমূল্যের জন্য তা প্রায় ক্রয়ক্ষমতার বাইরে,ঔষধ সহ নিত্যপ্রয়োজনিয় জিনিস-পত্রের তীব্র সংকট সেখানে।২০১৭ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ভেনেজুয়েলার ১৮-২৯ বছর বয়সী জনসংখ্যার অর্ধেক ছেড়ে চলে যেতে চান তাদের জন্মভূমি। ২০১৮ সালের জুন মাসের হিসাব অনুযায়ী শুধুমাত্র কলম্বিয়াতেই ভেনেজুয়েলান আছেন ১ মিলিয়ন। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এ বছরের প্রথম সাত মাসে ১ লাখ ৩৫ হাজার আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন পেয়েছে। আন্যদিকে দেশটিতে রয়েছে তীব্র দূর্নিতী, খাদ্যসংকট আর রাজনীতির ময়দানে ক্ষমতার রশিটানাটানি।

অন্যদিকে কাতার তার প্রাকৃতিক সম্পদ বিক্রি করা বিশাল অর্থ কাজে লাগানোর জন্য গঠন করেছে ‘কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথোরিটি’। এই ফান্ডের হাতে রয়েছে ৩৩০ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশি পরিমাণ অর্থ, যাদের কাজ হচ্ছে দেশ-বিদেশের লাভজনক ব্যবসায় বিনিয়োগ করা।

কাতারের এই ফান্ড বিশ্বের প্রতিটি কোণার রিয়েল এস্টেট কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে। হোটেল, অফিস, অ্যাপার্টমেন্ট কেনার মাধ্যমে লন্ডনের বেশ বড় একটা অংশ কাতারের দখলে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও বিদেশি বিনিয়োগকারী রাষ্ট্রের তালিকায় কাতারের অবস্থান চার নম্বরে। শুধু তাই নয় জার্মানির ফোক্সওয়াগেন, বারক্লেইস ব্যাংক, এমনকি রাশিয়া সরকারের তেল কোম্পানি ‘রসনেফট’-এর বিরাট অংশও কাতারের মালিকানাধীন।

শুধু বিদেশি বিনিয়োগই নয় দেশের অভ্যন্তরেও কাতারের বিনিয়োগও উল্লেখ করারমতো। ইতোমধ্যেই সড়ক ব্যবস্থা, এয়ারপোর্ট, বন্দর, গবেষণা কেন্দ্র আর বাণিজ্য কেন্দ্র তৈরিতে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলেছে কাতার সরকার। আর এর কারণ? ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হচ্ছে কাতার, যাতে প্রাকৃতিক সম্পদের ভান্ডার ফুরিয়ে গেলেও কোনো সমস্যার সম্মুখীন না হতে হয়। -তাকি নাজিব।