ময়মনসিংহে ৪ বছর ধরে নিখোঁজ শেফালী ! প্রতিপক্ষের অপহরণ মামলা


ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
ময়মনসিংহ সদরের ভাবখালীতে প্রায় ৪বছর ধরে শেফালী আক্তার (৩৫) নামের এক গৃহবধূ নিখোঁজ রয়েছে। সে উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নেরন ভাবখালী গ্রামের জহর আলীর ছেলে ভাবখালী বাজারের ডেকোরেশন ব্যবসায়ী বাছির মিয়ার স্ত্রী। জানা যায়, দুই সন্তানের জননী শেফালী পারিবারিক কলহের জেড় ধরে গত ২০১৮ সালে বাড়ী থেকে বের হয়ে প্রায় ৪বছর ধরে নিখোঁজ হলেও এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্বামী বাছির স্থানীয় কিছু নীরীহ লোককে আসামী করে অপহরণ মামলা করায় নিরীহ মানুষগুলো মিথ্যা মামলার হয়রানির শিকার হচ্ছে। তবে নিখোঁজের পর গৃহবধুর স্বামী বাছির কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া স্ত্রী কে নিয়ে অপহরণের মিথ্যা মামলা দিয়ে ৩পরিবারকে হয়রানী করায় এলাকায় এনিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ঘটনাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই এ মামলা করা হয়েছে বলে দাবি ভূক্তভোগীদের।

জানা যায়, উপজেলার ভাবখালী গ্রামের বাছির উদ্দীন তার স্ত্রী শেফালীকে নির্যাতন করতো বিধায় বাবার বাড়ি চলে যায়। পরে স্ত্রী শেফালীকে ফিরিয়ে আনতে শর্ত সাপেক্ষে তার নামে জমি লিখে দেয় বাছির। তবে জমি লিখে দিয়ে শেফালীকে ফিরিয়ে আনলেও কমেনি তার উপর নির্যাতন। নির্যাতিত শেফালী তার স্বামী বাছির এর পাশ্ববিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তার নামে দেওয়া সম্পদ বিক্রি করে বাড়ী থেকে পালিয়ে যায় প্রায় ৪বছর আগে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাছির প্রথমে গত ৫নভেম্বর ২০১৮ তারিখে কোতোয়ালী মডেল থানায় স্ত্রী হারানোর জিডি করেন, যার নং-৪৮৮ পরে স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহলের পরামর্শে হারানোর ঘটনাকে ভিন্ন ভাবে নিয়ে স্থানীয় ৩পরিবারের ৫জনকে আসামী সাজিয়ে গত ২০২০ সালে অপহরণ মামলা করেন। যার মামলা নং- ২২৫/ ২০২০। যা নিয়ে এলাকায় বিভিন্ন মহলের মাঝে তীব্র সমালোচনা ও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুত্র মতে জানা যায় – স্ত্রী শেফালী স্বামী বাছির এর কথাবার্তা না শুনার কারণে এবং মোবাইল ফোনে শেফালী অন্য কারো সাথে কথা বলায় তাদের সংসারে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকায় শেপালী রাগারাগি করে তার বাপের বাড়িতে চলে যায়,এই ঘটনায় এর আগেও গত ২০১৭সালের ১০অক্টোবর তারিখে কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বাছির,যার নং-৮৬১। তবে ভাবখালী এলাকার অসংখ্য ব্যক্তিরা জানান- স্ত্রী অবাধ্য থাকায় শেফালীর সাথে বাছিরের প্রায় ঝগড়া ঝাটি হতো।হারানোর আগে তাদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ হলে শেফালী বাড়ী থেকে বের হয়ে যায়, পরে বিষয়টি কে ভিন্ন খাতে নিয়ে বাছির তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা অপহরণ মামলাটা সাজিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। তবে-তাকে কেউ অপহরণ করেছে এমন কথা কখনও শুনেনি এমন দাবী স্থানীয়দের।

স্থানীয় কয়েকজন গণ্যমান্যরা জানান, পারিবারিক সমস্যার কারণে শেফালী নিজেই বাড়ি থেকে চলে যায়। মামলাটি পিবিআই পুলিশ তদন্ত করলেও অপরহণ সংক্রান্ত কোন রহস্য উদঘাটন হয়নি, পরে মামলাটি কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তদন্ত করে,এতেও অপহরণের কোন তথ্য পায়নি পুলিশ। জানা গেছে-মামলাটি আবারও দ্বিতীয়বার পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এর আগে মামলাটি গত ২০২০ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারী তারিখে ৪৩ নংস্মারকে ময়মনসিংহে ১নং সি আর আমলী আদালতের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর কাছে দায়িত্ব দিলে পিবিআই অফিসার রেজাউল করিম মামলাটির তদন্ত করেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি লিখেন- শেফালির সাথে ১নং আসামীর পরকীয়া থাকায় শেফালী শহিদুলের বাড়ীতে আশ্রয় নিলে শহীদুল তাকে গ্রহণ না করায় এর আগেও শহীদুলের নামে মামলা করেছিলো,পরে সে মামলর আপোষ মিমাংসা হয়। শহীদুল পরে সিঙ্গাপুর চলে যায়। অন্যদিকে শেফালী তার স্বামীর নিকট থেকে বিভিন্ন কৌশলে সম্পত্তি আদায় করে সেখান থেকে ১৯শতাংশ জমি আসামী আজহারুল ও সিরাজুলের নিকট বিক্রি করলে জমি বিক্রির টাকা বাদী বাছির তাদের কাছে চাইলে তারা বাদীর কাছে দেয়নি,এ সমস্ত ঘটনায় শেফালী তার স্বামীর ভয়ে একেক সময় -একেক জায়গায় অবস্থান করতো, পরে অবশিষ্ট সম্পদ তার দুই সন্তানের নামে হেবা করে দিয়ে বাড়ী থেকে নিখোজ হয় শেফালী।

পরে পিবিআই কর্মকর্তা রেজাউল করিমের তদন্তে মামলাটির সাক্ষী প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থায় মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হলে তিনি আসামীদেরকে অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে বিজ্ঞ আদালতকে সুপারিশ করেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে। তাছাড়াও মামলাটি কোতোয়ালি মডেল থানার অধিনে তদন্ত চলাকালেও তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার রহস্য উদঘাটনের লক্ষে বিভিন্ন সংবাদপত্রে নিখোঁজ সংবাদ প্রকাশ করে সন্ধান চাইলেও কোন প্রকার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। তবে নিখোঁজ ভিজটিম শেফালীর সন্ধান কেউ জানলে বা তাকে দেশের কোথায় দেখা গেলে পিবিআই ময়মনসিংহ অথবা ময়মনসিংহের পুলিশ প্রশাসনকে অবগত করার আহবান জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার রকিবুল আক্তার বলেন, তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে। তবে নির্দোষ কেউ যেন হয়রানীর শিকার না হয় তা খেয়াল রাখা হবে।